- প্রচ্ছদ
-
- রংপুর
- কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন
প্রকাশ: ১১ জুন, ২০২২ ২:০৭ অপরাহ্ণ
রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি#ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট বাজার রক্ষায় কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ইতোমধ্যে বাজারের পূর্ব প্রান্তে ব্রহ্মপুত্রের তীরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো হয়েছে। ফলে হুমকিতে থাকা ঐতিহ্যবাহী বাজারটি আপাতত ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে বলে জানিয়েছে পাউবো। তবে এখনও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার ভাঙনে শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে! জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পাউবো কর্তৃপক্ষকে বাজারটি রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করেন জেলা প্রশাসক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাজারটি রক্ষায় প্রতিরক্ষা কাজের অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ।
পাউবো সূত্র জানায়, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট বাজারসহ ওই ইউপির প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন চলমান রয়েছে। এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে বড় ধরনের প্রকল্প প্রয়োজন। কিন্তু আপাতত ঐতিহ্যবাহী মোল্লারহাট বাজারটি রক্ষায় জরুরি প্রতিরক্ষা কাজের অনুমোদন পাওয়া গেছে। তবে এখনও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
পাউবো আরও জানায়, প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০ মিটার জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ শুরু হয়েছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ফলে আপাতত বাজারটি ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
এদিকে, বাজারটি রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও পাউবোর উদ্যোগে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ভাঙনের হাত থেকে স্থানীয় বসতি রক্ষায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মোল্লারহাট বাজার রক্ষায় কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড
ভাঙনে ভিটে হারাতে বসেছেন মোল্লারহাটের বাসিন্দা জমর উদ্দিন-আছিয়া দম্পতি। আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র এখন তাদের আঙিনায়। ঘর সরিয়ে নিয়ে অন্যত্র বসতি গড়বেন সেই সামর্থ্য তাদের নেই। ভিটের এক পাশে ঝুপড়ি করে আতঙ্কে দিনানিপাত করছেন তারা।
জমর উদ্দিন বলেন, ‘ভিটার অর্ধেক গেইছে। বাকি অর্ধেক রক্ষা না হলে ফতুর হয়া যামো। সরকার হামাক না দেখলে কার কাছত যামো।’
শুধু জমর উদ্দিন-আছিয়া দম্পতি নন, ওই এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের আঙিনায় চোখ রাঙাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভিটে হারিয়ে নিঃস্ব হবে এসব পরিবার।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের এক দিকে ব্রহ্মপুত্র আরেক দিকে ধরলার ভাঙন চলছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে সরকার পাড়ার বেগম নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া একমাত্র হাই স্কুলসহ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বাজার রক্ষায় গৃহীত উদ্যোগের মতো এলাকার বসতি ও বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করায় ইতোমধ্যে বাজারটি রক্ষায় কাজ শুরু হয়েছে। তবে এলাকার অনেক স্থান এখনও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের লোকজন শনিবার (৪ জুন) এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। তারা ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।’
পাউবো জানিয়েছে, পুরো ইউনিয়নের ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজন প্রকল্প অনুমোদন। বৃহৎ পরিসরের ভাঙন ঠেকাতে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ কার্যকর নয়। সেখানে স্থায়ী প্রতিরোধমূলক কাজ করতে হবে।
পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বসতি ও স্থাপনাসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। আপাতত মোল্লারহাট বাজার রক্ষায় প্রতিরক্ষামূলক কাজ চলমান রয়েছে। পুরো এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে বড় প্রকল্প অনুমোদন প্রয়োজন। তাতে অন্তত শত কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ প্রয়োজন হতে পারে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
এদিকে বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। এতে চরাঞ্চলের ফসল ডুবছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে জেলায় বন্যার পূর্বাভাস নেই।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরলার পানি কিছুটা কমলেও, রাতে বেড়েছে। শুক্রবার (১০ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানিও বাড়ছে। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। হু হু করে বাড়তে থাকা তিস্তার পানি কিছুটা স্লথ হয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। আগামী দুই-তিন দিন ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি আরও বাড়তে পারে।
এদিকে পানি বাড়তে থাকায় তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চলের কৃষি আবাদ নিয়ে আবারও শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে বাদাম ও পাট নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের হায়বৎ খাঁ, গনাই, রামহরি মৌজার চাড়ির কোলা, রামহরির চর, গাবুর হেলানের চর ও চর তৈয়ব খাঁ’সহ রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চলের বাদাম ও পাট নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
রাজাহাটের বিদ্যানন্দ ইউপির বাদাম চাষি আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘পানি খুব বাড়ন্ত। বাদামক্ষেত পানিতে তলায় গেছে। কী করবো বুঝতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে সামান্য বাদাম তুলতে পারছি। এখনও দেড় একর জমিতে বাদাম আছে। সামান্য কিছু জেগে আছে, বাকি জমিতে পানি উঠছে। পানিতে বাদাম তোলার জন্য লোক লাগায় দিছি। এলাকাত সব বাদাম চাষির একই অবস্থা।
Please follow and like us:
20 20