আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৭:৩৭
এম, এ কাশেম, চট্টগ্রাম ব্যুরো ‘বিডি দিনকাল’ : পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাগাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব খ্যাত ‘বৈসাবী উৎসব শুরু হয়েছে। গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ উৎসব। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত: ১৪টি ক্ষুদ্র নৃ–তাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব বৈসাবী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী চলবে বর্ণাঢ্য আয়োজন। পাহাড়ের প্রতিটি এলাকা এখন উৎসব মুখর হয়ে দেখা দিয়েছে। সকল সমপ্রদায়ের উপস্থিতিতে এ উৎসব সমপ্রীতির মিলন মেলায় ও পরিণত হয়ে আসছে অতিত থেকে যেমন ঠিক তেমনি এবার ও তা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন আযোজক নেতারা।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকালে স্থানীয় চেঙ্গী নদীতে ‘গঙ্গা দেবী’র উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু করা হয় বিজুর মূল আনুষ্ঠানিকতা। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই খাগড়াছড়ির চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। চাকমা তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু, মাধবীলতা ও রজ্ঞন সহ নানা রকমের ফুল দিয়ে পুজা করে। পরে নদীর পাড়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দ্যেশে প্রার্থনা করা হয়।
ফুল বিজুতে অংশ নেয়া এক পাহাড়ি তরুণী নুপুর চাকমা বলেন, গত বছরের দুঃখ কষ্ট গøানি ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছি। পাহাড়িদের এই উৎসব দেখতে যোগ দেয় বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরা ও।
সকালে ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, এ ধরনের উৎসবের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক স¤প্রীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শান্তির দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। শান্তি ও স¤প্রীতি আরো উন্নত হবে, আরো মজবুত হবে বলে ও তিনি আশাবাদী। উৎসবে অংশ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ নাঈমুল হক জানান, অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই আমাদের। পুলিশের নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ ও নিরাপত্তায় হন্য কাজ কওে যাচ্ছে।
রাঙামাটি : রাঙামাটি থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে,, গতকাল সকালে কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে রাঙামাটিতে ও শুরু করা হয়েছে চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই ও ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসব। ভোরে রাজবন বিহার ঘাটে আদিবাসী ফোরামের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা নদীতে ফুল নিবেদন করেন। শহরের ত্রিপুরা পল্লীখ্যাত গর্জনতলীতে রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী হ্রদে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ দিকে, সকালে শহরের গর্জনতলি এলাকায় ত্রিপুরাদের হারি বৈসুক উপলক্ষে আয়োজিত বয়স্ক স্নান, বস্ত্রদান, গড়াইয়া নৃত্য সহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
রাঙামাটি’র সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ১৩টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ১৪টি জনগোষ্ঠী রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। আজকে হচ্ছে ফুল বিজু। কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে বৈসাবী উৎসব শুরু করা হয়েছে। উৎসব যাতে ভালোভাবে পালন করতে পারে সে জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্ধ প্রদান করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুদ্র জাতিসত্তা সমূহ যাতে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি রক্ষা করে বিকশিত হতে পারে সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে ও তিনি জানান।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রæ চৌধুরী বলেন, বলেন, মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে হ্রদে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করেছি। সবাই যাতে মিলেমিশে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির সাথে একসাথে বসবাস করতে পারি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ পুরো দেশবাসীকে বিজুর শুভেচ্ছা জানান।
বান্দরবান : বান্দরবান পাওয়া খবরে জানা গেলো, শঙ্কামুক্ত মঙ্গলময় পৃথিবী কামনায় বান্দরবানে সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসালেন চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর তরুণ-–তরুণীরা। শিশু কিশোর এবং যুবক যুবতীরা ও তাতে ভিঁড় জমিয়েছিলো বেশ নদীপাড়ে বিজু ও বিষু আনন্দ আয়োজনে।
আয়োজকরা জানান, এবার তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
চাকমা তরুণী সুচরিতা চাকমা ও শুভশ্রী চাকমা বলেন, এটি আমাদের ঐতিহ্যগত উৎসব, যুগযুগ ধরেই পালন করে আসছি। এ ছাড়া ও পাহাড়ি পল্লীগুলোতে বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী পাচন সহ মজাদার সব খাবার, বিহার গুলোতে চলে ধর্মীয় প্রার্থণা, বয়স্কদের প্রণাম করে আর্শীবাদ গ্রহণ। দল বেধে বন্ধু বান্ধব স্বজনরা ঘুরে বেড়াই।
বিষু উৎসব আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্রিত্তিমান চাকমা বলেন, বর্ষবরণ ও বর্ষ বিদায়ের এই উৎসবে তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। নদীতে ফুল ভাসানো ছাড়া ও চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলা নাটিং এবং বাঁশহরম প্রতিযোগিতা রয়েছে। সাংস্কৃতিক আয়োজনে মাতানো হয় চাকমা পল্লীগুলো।
কাপ্তাই : কাপ্তাই পাওয়া সংবাদে জানা যায়, উপজেলায় তনচংগ্যা সমপ্রদায় গতকাল ভোরে কর্ণফুলী নদীতে ফুল ভাসিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঐতিহ্যবাহী বিষু উৎসব শুরু করেন। পরে কাপ্তাই সড়কে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এ ছাড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রশি টানাটানি, লাটিম খেলা সহ গ্রামীণ ঐতিহ্যময় বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুই প্রæ চৌধুরী সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক পাহাড়ি বাঙ্গালী নারী পুরুষ হেডম্যান পাড়া কিয়াং মাঠে উপস্থিত ছিলেন।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |