গত ১ মে ২০২৩ তারিখ, সোমবার, রাত ৮.৩০ টায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমেঃ
১. ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
২. মির্জা আব্বাস
৩. বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
৪. ড. আব্দুল মঈন খান
৫. জনাব নজরুল ইসলাম খান
৬. মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
৭. জনাব আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী
৮. জনাব সালাহ উদ্দিন আহমেদ
৯. বেগম সেলিমা রহমান
১০. জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নি¤েœ বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ২৫ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়। মহাসচিব সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।
২। সভায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিডনী সমস্যায় আক্রান্ত জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা আট মাসের বেশি সময় কারাগারে আটক এবং ইউএনবি সাংবাদিক মো: জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একই আইনে মামলার বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, এই কুখ্যাত আইন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় যা গণতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। সরকার এই আইনের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সংবাদকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে। ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষে এই নিবর্তন মূলক আইনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। সভা অবিলম্বে কারাগারে আটক শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাসহ আটক সকল বন্দির মুক্তি ও এই আইনের অধীনে সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছে। সভা গণতন্ত্র বিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনতিবিলম্বে বাতিলের দাবী জানায়।
৩। সভায়, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য জনাব নজরুল ইসলাম খান অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল ২০২৩ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। জনাব খান বিলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সভায় বিলটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অত্যাবশ্যক পরিসেবা বিল ২০২৩ মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করে সংসদে পেশ করা হয়েছে। শীঘ্রই তা আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া চলছে।
এই প্রস্তাবিত আইন নানা কারনে বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবিদের স্বার্থ বিরোধী, একতরফা, নিবর্তন মূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রæতির স্পষ্ট বরখেলাপ।
আইটি প্রণয়নের কোন পর্যায়েই অংশীজনের মতামত নেয়া হয়নি। প্রস্তাবিত আইনের পরিধি শুধু বিস্তৃত নয়Ñ অসীম। সরকার ইচ্ছা করলেই যে কোন শিল্প, প্রতিষ্ঠান, পেশা ও সেবাকে এই আইনের আওতায় এনে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে তা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে পারবে।
এই আইনকে প্রচলিত শ্রম আইনের উর্দ্ধেস্থান দিয়ে যুগযুগ ধরে আন্দোলন করে শ্রমজীবি জনগণ যা’ কিছু অধিকার অর্জন করেছিল তা এই আইন দিয়ে নাকচ করে দেয়া হবে।
প্রচলিত শ্রম আইনেই কোন ধর্মঘট জনজীবন কিম্বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকী সৃষ্টি করলে তা নিষিদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট বিরোধটি শ্রম আদালতে পাঠানোর কথা বলা আছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলেই লক্ষ কোটি শ্রমজীবি, পেশাজীবি মানুষকে ৬ মাস ৬ মাস করে সারা জীবন ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণার আওতায় রাখতে পারবে। কিন্তু তাদের ন্যায্য সমস্যা সমাধান কিম্বা প্রাপ্য আদায়ের কোন বিকল্পের কথা আইনে রাখা হয়নি।
বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আই.এল.ও কনভেনশন নং ৮৭ অনুসমর্থন করেছে। যেখানে ধর্মঘটের অধিকারকে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই কনভেনশনে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বিলে দেশের বিপুল সংখ্যক শিল্প, প্রতিষ্ঠান ও সেবা খাতকে “অত্যাবশ্যক পরিসেবা” চিহ্নিত করে শ্রমজীবি মানুষের ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেয়ার অর্থ হলো তাদের সংগঠিত হওয়ার অধিকারও কেড়ে নেয়া।
একই বছর বাংলাদেশ আই.এল.ও কনভেনশন নং ৯৮ অনুসমর্থন করেছে। এই কনভেনশনে স্বাধীনভাবে যৌথ দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিয়তা দিয়েছে। সবাই জানে, ধর্মঘটের অধিকার হলো যৌথ দরকষাকষির প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। ‘অত্যাবশ্যক পরিসেবা’ বিলে ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেয়ার অর্থ হলোÑ যৌথ দরকষাকষির অধিকারও কেড়ে নেয়া। এটাও সরকারের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রæতির স্পষ্ট বরখেলাপ এবং শ্রমিক সংগঠন ও আন্দোলনকে অকার্যকর করে মালিকদের নির্যাতন, বঞ্চনা ও শোষণ সুরক্ষার হাতিয়ার।
আই.এল.ও’র সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ ঐ প্রতিষ্ঠানে গঠনতন্ত্র মানতে বাধ্য। যেখানে বলা হয়েছে কোন সদস্য রাষ্ট্র কোন কনভেনশন অনুসমর্থন করলে তার প্রতিটি বিধান বাস্তবায়ন করবে। রাষ্টের প্রচলিত আইন কনভেনশনের কোন বিধানের সাথে অসংগতিপূর্ণ হলে সেই আইন পরিবর্তন করতে হবে। অথচ প্রস্তাবিত আইনে অনুসমর্থনকৃত কনভেনশনের বিধান অগ্রাহ্য করে সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তি লংঘন করছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত আইনটি শুধু শ্রমজীবি মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুন্নু করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের সংবিধান সম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, প্রস্তাবিত ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল ২০২৩’ প্রত্যাহারের জোর দাবী জানাচ্ছে।
৪। সভায়, সাংগঠনিক কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়।
৫। বিস্তারিত আলোচনা শেষে সভাপতি উপস্থিত সদস্যবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।