আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:৪৮
প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিএনপির উপদেষ্টা ইব্রাহিম রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ও দুই সন্তান মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের পাশে দাঁড়াবার কেউ নেই। দুই সন্তানের লেখা-পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর সিদ্ধিরগঞ্জের বাসা ভাড়া দীর্ঘদিন দিতে না পারায় সেখান থেকেও নানা বঞ্চনা ও মানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজের কিডনি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। সেখানেও ব্যর্থ হয়েছেন। পরবর্তীতে রক্ত দিয়ে সামান্য কিছু টাকা আনতে গিয়েও শরীরের দুর্বলতার কারণে কর্তৃপক্ষরা রক্ত নিতেও অপরাগতা প্রকাশ করেছে। শেষে উপায় না পেয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন জানিয়েছেন অনুরূপ আবেদন জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব বরাবর। সময় গড়িয়ে অনেক দিন হয়ে গেল সেখান থেকেও কোন সুখবর না পেয়ে তিনি এখন মানুষিকভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। যে কোন মুহুর্তে একটি দুর্ঘটনা যদি ঘটে যায় এ দায়-ভার কে নেবে। আমি যার কথা এতক্ষুন বলছিলাম তিনি গত ৩০ অক্টোবর দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, জাতীয়তাবাদী চেতনার বাতিঘর, সাপ্তাহিক জনকথা এবং দৈনিক মার্দেকা এর প্রকাশক ও সম্পাদক, জীবন বীমা কর্পোরেশনের সাবেক পরিচালক, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃতিসন্তান ইবরাহিম রহমান বিনা চিকিৎসায় অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নামাজের জানাযা শেষে দাফন করা হয়। মৃত্যুর দুইদিন পর তার স্ত্রী শাহনাজ দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায় খবরটি পৌছালে কোন রকম তার মৃত্যুর সংবাদ ছাপানো হয়। যে মানুষটি সারা জীবন জাতীয়তাবাদী আদর্শের ঝান্ডা নিয়ে কাজ করেছেন তার মৃত্যু এমন করুণ ভাবে বিনা চিকিৎসায় হবে কোনদিন কল্পনাও করিনি।
যিনি দুটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন এবং একজন প্রবীন সাংবাদিক হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন সেই সাংবাদিক নেতার মৃত্যুতেকোন সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতারাও শোক প্রকাশ করেননি। এমনকি জাতীয়তাবাদী দল কিংবা ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাও তার শোক বিবৃতিও প্রদান করেননি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাস্কর।
বেশ কিছুদিন আগে প্রবীন সাংবাদিক ইবরাহিম রহমান ৯ মাস নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। সংবাদটি দৈনিক দিনকাল পত্রিকায় ছোট্ট করে ছাপানো হয়েছিল। তখনও তাকে উদ্ধার করার কোন বক্তব্য কিংবা বিবৃতি কোথাও পাওয়া যায়নি। অনেকদিন পর তিনি ফিরে এলেও কিভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন এই সংবাদ কাউকে জানান নি। তবে, তারপর থেকে অনেক নিরব ও নিষ্কীয় হয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিটি মুহুর্ত অর্থ অভাবে কাটছিল তার শেষ দিনের মুহুর্তগুলো। প্রায়দিন দুপুরে কলা, রুটি, চা খেয়েই দিন পার করে দিতেন এই সাংবাদিক নেতা।
মাঝেমাঝে তাকে ভালো কিছু খাবার খাওয়ানোর কথা বললেও বলতেন তুমি তো আমার মতই। কলা, রুটি খাওয়াও এতেই আমি খুশি। পল্টন থেকে ধীর গতিতে সংগ্রাম ও দিনকাল অফিসে পায়ে হেটে যেতেন। পকেটে থাকতো দেশপ্রেমের গল্প নয়ত বা আদিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সাহসী লিখনী। পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় ফিচার কলামে প্রকাশ হলে হয়ত বা অনেকেই বাহবা দিতেন কিন্তু তিনি কি খেয়েছেন বা খাননি একথা কেউ জিজ্ঞেস করতেন না। বড্ড অভিমান, চাপা কষ্ট আর অর্থ অভাবে হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি যখন মারা গেলেন তখনও তার খবর কেউ রাখলো না। ষাট দশকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবকে তুখোর এই ছাত্রনেতা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে কাজ করে গেছেন। পুরষ্কার পেয়েছেন লাঞ্চনা আর হতাশা।
এই লেখাটি আমি লিখতাম না। যদি না তার স্ত্রী ও দুই সন্তান মানবেতর জীবনযাপন না করতো তারা এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। আমি দেখছি আশার আলো। কারণ যখন নয়া দিগন্ত পত্রিকায় তার মৃত্যুর খবর দেখলাম পাশে আর একটি খবর আমাকে দারুনভাবে আনন্দিত করেছে। বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও স্বেচ্চাসেবক দলের সভাপতি, জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন নিবেদিত প্রাণ মরহুম শফিউল বারী বাবু ভাইয়ের পরিবারের কাছে একটি ফ্ল্যাট এর চাবি ও দলিল বুঝিয়ে দিয়েছে তখন একজন অন্য দলের কর্মী হিসেবে ঘটনাটি আমাকে আলোড়িত করেছে। কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি বিএনপি পরিবারের কাছে। বাবু ভাই যখন বেঁচে ছিলেন তখন তার স্ত্রী বিথিকা বিনতে হোসাইন জাতীয়তাবাদী দলের নির্যাতিত, নিপিরীত গুম হওয়া পরিবারের পাশে যেভাবে আর্থিক সাহায্য নিয়ে দাড়িয়েছিলেন সেই টাকার কিছু অংশ রেখে দিলেও এ রকম দুটো তিনটে ফ্ল্যাট কেনা যেত। কিন্ত এই পরিবার এক মুহুর্তের জন্য নিজেদের দিকে না তাকিয়ে দলের জন্য নিবেদিত ছিল। সেই জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে যেটুকু করা হয়েছে তাও ইতিহাস হয়ে থাকবে। তবে বাবু ভাইয়ের স্ত্রী বিথিকা বিনতে হোসাইনকে রাজনৈতিক পদ দিয়ে মর্যাদা দিলে তৃণমূল নেতা কর্মীরা রাজনীতিতে প্রাণ ফিরে পাবে।
শেষ দিকে এই টুকু বলতে চাই প্রবীন সাংবাদিক ইবরাহিম রহমানের পরিবারের পাশে জাতীয়তাবাদীর চেতনার প্রতিটি মানুষকে দাঁড়ানো উচিত। বাবু ভাইয়ের পরিবারের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন সেভাবে তৃণমুল সকল নেতা কর্মীর দুর্দিনে দাড়াতে পারলে বিএনপি ঘুড়ে দাড়াবে। অন্ধকার ঘুচবে আলো উঠবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক। প্রবীন সাংবাদিক ইবরাহিম রহমানকে জান্নাত দান করুক।
লেখক
মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা
চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি
০১৭১০২২৪৩৬৭
ইব্রাহিম রহমানের স্ত্রীর নাম্বার ০১৬৭৯৫৭২৯৫৫
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |