আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:১৯
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- বাংলাদেশে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার প্রত্যাশী/আইনের আশ্রয়প্রার্থী ধর্ষণ অপরাধেভুক্তভোগী নারীকে অবমাননাকর সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারার অধীনে উন্মুক্ত আদালতে প্রতিনিয়ত তারঅতীত চরিত্র ও যৌন ইতিহাস সম্পর্কে অসম্মানজনক ও অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রশ্নেরসম্মুখীন হতে হয়; যা ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধ প্রমানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। ধর্ষণ অপরাধপ্রমাণের মুল উপাদান ‘সম্মতি’ কে গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিক্ষেত্রে ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীর‘চরিত্র’ ও ‘অতীত যৌন ইতিহাস’ কে গুরুত্ব দেয়া হয়; ফলে ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারী বিচার পেতে আইনের দারস্থ হয় না বা বিচারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে; যা অভিযুক্তকে অপরাধ থেকে অব্যাহতি
দিতে সাহায্য করে। সংবিধানে নারী পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও স্বাক্ষ্য আইনের সুস্পষ্ট কিছু ধারার মাধ্যমে শুধুমাত্র ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী নারীকে অবমাননাকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করা হয়; যা এক অর্থে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যেরই শামিল।
‘ধর্ষণ আইন সংস্কার এখনই’ ‘জধঢ়ব খধি জবভড়ৎস ঘড়’ি সংক্রান্ত প্রচারনা শুরু হয়েছিল ২০১৮ তে।
প্রচারনার মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণ রোধে ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনগত এবং
প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা এবং এ সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার জন্য সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাবনাসমূহ প্রণয়ন করা। এই প্রচারণার অংশ হিসাবে ২০১৯ সালে ১৭ টি সংস্থার সমন্বয়ে ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগী ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনসমূহ সংস্কারের দাবীতে ‘চৎবংংঁৎব এৎড়ঁঢ়’ হিসেবে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’ ‘জধঢ়ব খধি জবভড়ৎস ঈড়ধষরঃরড়হ’ গঠন করা হয়। অক্টোবর ২০২০ এ দেশজুড়ে ধর্ষণ-বিরোধী বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়ে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনসমূহ সংস্কারের দাবীতে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’ ২০২১ সালে দশ দফা দাবী উত্থাপন করে। উত্থাপিত এ ১০ দফা দাবীর মধ্যে অন্যতম একটি দাবী ছিল:ধর্ষণ মামলায় অভিযোগকারী ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির চরিত্রগত সাক্ষ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করাঃ সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা এবং এ সংক্রান্ত আরো ৩টি ধারা সংশোধনের মাধ্যমে ধর্ষণ মামলার বিচারে অভিযোগকারীর চরিত্রগত সাক্ষ্য বিবেচনায় আনা বন্ধ করতে হবে। এরূপ সংস্কারের মাধ্যমে বিচারকগণ যাতে নিশ্চিত করতে পারেন যে আসামী পক্ষের আইনজীবীগণ
জেরার সময় অভিযোগকারীকে কোন অবমাননাকর বা অবজ্ঞামূলক প্রশ্ন না করে।
রেইপ ল রিফর্ম কোয়ালিশন নারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ সংক্রান্ত সাক্ষ্য আইনে বিদ্যমান ১৫৫ (৪) ধারা সম্পূর্ণরূপে বাতিলের পাশাপাশি যৌন অপরাধসমূহের বিচারকার্যের ক্ষেত্রে অভিযোগকারিনীর সচ্চরিত্র যেন কোনভাবেই প্রাসঙ্গিক না হয়- এ বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাক্ষ্য আইনের ৫৩ ধারা (ফৌজদারী মামলায় পূর্ববর্তী সচ্চরিত্র প্রাসঙ্গিক) এর অধীনে এ বিষয়ক একটি উপধারা সংযোজনের দাবি জানায়। একইসাথে, যৌন অপরাধের বিচারকার্যে জেরা করার সময় অভিযোগকারিনীর চরিত্র বিষয়ক যে কোন প্রশ্ন করা সম্পূর্ণরূপে বেআইনী এ বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাক্ষ্য আইনের ১৪৬ ধারা (জেরায় আইনগত প্রশ্ন) এর অধীনে এ বিষয়ক একটি উপধারা সংযোজনের দাবি জানায়। পাশাপাশি, ধারা ১৫০ এর অধীনে বিচার কার্যক্রমে ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন অপরাধের অভিযোগকারীর চরিত্র নিয়ে কোন প্রশ্ন যাতে করতে না পারে তার জন্য আদালত ও সংশ্লিষ্ট অ্যাডভোকেট এর জন্য সুনির্দিষ্ট শৃংখলামূলক ব্যবস্থা প্রচলন করা বিষয়ক একটি উপবিধি সংযোজনের দাবি জানায়।
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ১৫৫ (৪) ধারা মতে, অভিযোগকারী সাধারণত অনৈতিক চরিত্রের – তা প্রমানের মধ্য দিয়ে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানীর চেষ্টার জন্য বিচারের ক্ষেত্রে সাক্ষীর গ্রহণযোগ্যতাকে দূর্বল করা যেতে পারে। আবার ১৪৬ (৩) ধারা মতে কোন সাক্ষীকে জেরা করার সময় তার চরিত্রকে আঘাত করে এমন প্রশ্নের মাধ্যমে সাক্ষীর গ্রহনযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। বিচারকার্যে নারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ সংক্রান্ত সাক্ষ্য আইনে বিদ্যমান ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) ধারাসমূহকে লিঙ্গ বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক বাতিলের দাবীতে উচ্চ আদালতে গত ১৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখ তিনটি মানবাধিকার সংস্থা যথাক্রমে- বøাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও নারীপক্ষ যৌথভাবে একটি জনস্বার্থ মামলা (রীট নং ১০৪৭৬/২০২১) দায়ের করে। মামলাটির প্রাথমিক শুনানীঅন্তে গত ১৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখ অ্যাটর্নী জেনারেল আদালতকে অবগত করেন যে, আইন মন্ত্রণালয় হতে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি খসড়া সংশোধনী বিল প্রস্তুতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ জবাবের প্রেক্ষিতে আদালত ৪ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করে এবং উক্ত দিন সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিল বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের অগ্রগতি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয় হতে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিল বিষয়ক একটি খসড়া বিল আদালতে পেশ করা
হয়। কিন্তু উক্ত খসড়া বিলে সংশ্লিষ্ট আরো ৩টি ধারা সম্পর্কে কোন ধরনের সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়নি। যদিও ১৪৬ (৩) ধারা সংশোধন বিষয়ে আদালত অভিমত প্রকাশ করেন যে, ১৪৬(৩) সম্পূণুরূপে বাতিল করা সম্ভব নয়, এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট সংশোধনীর বিষয়সমূহ উল্লেখপূর্বক একটি ঝঁঢ়ঢ়ষবসবহঃধৎু অভভরফধারঃ আদালতে পেশ করতে বলা হয়। বর্তমানে মামলাটি শুনানীর জন্য অপেক্ষমান আছে।
উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে, উন্মুক্ত আদালতে ধর্ষণ
অপরাধে ভুক্তভোগী নারীর প্রতি অবমাননাকর অসম্মানজনক অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার বিধান সম্পূর্ণরূপে বাতিলের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে সাক্ষ্য আইনে এ সম্পর্কিত ধারাসমূহ যথাক্রমে ১৫৫ (৪) ও ১৪৬ (৩) বিলোপপূর্বক সাক্ষ্য আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধনীর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ও আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ বিশ্লেষণ করে বøাস্ট দেখেছে যে, ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে চারিত্রিক সাক্ষ্যের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সাক্ষ্য আইনের আরো দুটি ধারায় সংশোধন আনা প্রয়োজন। ধারা – ৫৩ এ বলা হয়েছে, অভিযুক্ত একজন ভাল চরিত্রের ব্যক্তি
তা ফৌজদারি কার্যধারায় প্রাসঙ্গিক। ফলে ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির অতীত ভালো চরিত্রের বিষয়টি বর্তমান অপরাধকে দায়মুক্তি দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বøাস্ট সুপারিশ করছে যে, এই ধারায় ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন অপরাধের জন্য ব্যতিক্রম বিধান করে একটি উপবিধি সংযুক্ত করা। আবার ধারা – ১৫০ এ বলা হয়েছে যদি আদালত মনে করেন যে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, এবং যদি কোন অ্যাডভোকেট দ্বারা জিজ্ঞাসা করা হয়, তাহলে মামলার পরিস্থিতি হাইকোর্ট বিভাগ বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ, যার অধীনে অ্যাডভোকেটগণ এই ধরনের পেশাগত অনুশীলন করেন, তাকে জানাতে পারেন। বøাস্ট সুপারিশ করছে যে, এই ধারায় একটি
উপধারা যুক্ত করে বিচার কার্যক্রমে ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন অপরাধের অভিযোগকারীর চরিত্র নিয়ে কোন প্রশ্ন যাতে করতে না পারে তার জন্য আদালত ও সংশ্লিষ্ট অ্যাডভোকেট এর জন্য সুনির্দিষ্ট শৃংখলামূলক ব্যবস্থা প্রচলন করা।
Dhaka, Bangladesh মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |