আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৭:০১
বিডি দিনকাল ডেস্ক : উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিয়ে সরকার ‘খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা আব্বাস।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জীবন-সংগ্রামের ওপর লেখা এক গ্রন্থ প্রকাশনার অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে একটি কথা বলতেই হয় অন্যভাবে যে, মুহুর্তের আনন্দঘন মন থাকে বেদনাবিধুর। যার সম্পর্কে কথা বলছি, তিনি(খালেদা জিয়া) কিন্তু আমাদের মাঝে এখানে নাই। উনাকে আমাদের সামনে আসতে দেয়া হয় না, উনাকে কথা বলতে দেয়া হয় না। উনার চিকিৎসা… যেথানে বাংলাদেশের ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন… তারা বলছেন, তাকে অবিলম্বে বিদেশে নেয়া দরকার।”
‘‘বারবার বারবার বারবার বলার পরেও জেনেশুনে একটা মানুষকে কিভাবে হত্যা করা হচ্ছে এটা ইতিহাস স্বাক্ষী হয়ে থাকবে… আজকে বিভিন্নজনের বক্তব্যে এটা উঠে এসেছে এবং আসবে। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকবে যে, যারা উনাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না তারা ইতিহাসে অপরাধীর মতো থাকবে।”
‘যখন সুযোগ আসবে ইনশাল্লাহ তাদের বিচার হবে’ বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন মির্জা আব্বাস।
গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরদের নিবিড় পর্যবেক্ষনে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিসা দিচ্ছেন তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গুরুতর অসুস্থ হয়ে কিছু দিন পরপর খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
৭৯ বয়েসী সাবেক প্রধানমন্ত্রী হৃদ্রোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিস, আর্থরাইটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিতসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড কয়েকবার বিএনপি চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিতসার জন্য দ্রুত বিদেশে নেয়ার সুপারিশ করেছেন।
গুলশানে হোটেল লেকশোরে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ‘র লেখা ইংরেজী গ্রন্থ ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইভ, হার স্টোরি’ এর বাংলা সংস্করণ ‘খালেদা জিয়া : জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থে প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। ইতি প্রকাশনা ৬৭০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে। শাহরিয়ার সুলতান ইংরেজি এই গ্রস্থটি অনুবাদ করেন। গ্রন্থটির মূল্য্ দুই হাজার টাকা।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ এই সরকার বার বার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকতে দেবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এই সরকার থাকলে এদেশের স্বাধীনতা থাকবে না যদি এদেশের সাধারণ মানুষ সচেতন না হয়।”
‘‘ আমাদের দেশের মানুষকে যদি সচেতন করতে না পারি, যদি নিজেরা সচেতন না হই তাহলে এই সরকারের হাত থেকে বাঁচতে পারবো না। আজকে বক্তাদের বক্তব্যেও এই কথাটি উচ্চারিত হয়েছে।”
অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার কথা তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ এতো নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণ কোনো মানুষ মানুষের সাথে করতে পারে এটা বলা যায় না। আমি এখানে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন(বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক)দেখতে পারছি। আমি উনাকে(খালেদা জিয়াকে) হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। উনারা(চিকিৎসকরা)দেখিয়েছিলেন… কিরকম করে হার্টে বাইপাস করা যাচ্ছে না কিন্তু সেটা একটা বিকল্প তারা করছেন যাতে রক্ত জমে ব্লক হয়ে মারা না যান সেরকম করে একটা প্যাসেজ তৈরি করা। দেখে আমার নিজে এতো খারাপ লেগেছিলো যে, এই দৃশ্য দেখার পরে কেউ তাকে আটকিয়ে রাখতে পারে এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য।”
‘‘ শেখ হাসিনা সেটা দেখেছেন তাতো আমি বলি না। কিন্তু তিনি জানেন না তা হতে পারে না। কারণ উনি প্রতিনিয়ত খবর তো রাখেন। রাখবার পরেও এই নিষ্ঠুর আচরণ করেন।’’
নানা চরাই-উতরাই পেরিয়ে নিজের কর্মদক্ষতায় খালেদা জিয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হয়েছেন উল্লেখ করে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর গ্রন্থটি নেতা-কর্মীদের পড়ার অনুরোধ জানান মান্না।
সরকারের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন,‘‘ ৭ জানুয়ারি পরে দেশের মানুষের মধ্যে অনেকে বলেছেন, আর পারলে না… এরা পাঁচ বছরই থাকবেন, কেউ কেউ রকম করে বলেন, যতদিন জীবিত আছে নড়াতে পারবেন না। এখন দেখছি নিজে নিজেই নড়ছে।”
‘‘ কেনো তিনটা এমন এমন শট হয়েছে… একটা প্রাক্তন আইজি, একটা প্রাক্তন চিফ অফ স্টাফ, আরেকটা তিন বারের এমপি। চোরগুলো ডাকাতগুলো গায়ের জোরে এমপি হয়েছে… তাদের চেহারা এক্সপোজড হয়েছে যার ফলে সবাই বুঝতে পারছে…। পত্রিকায় লেখেছে দেখলাম তিনটা বিষয় নিয়ে বিব্রত সরকার। এই দায় কার? চিফ অফ স্টাফ কে বানিয়েছে, আইজি কে বানিয়েছে, এমপি কে বানিয়েছে? সবাইকে উনি(শেখ হাসিনা) প্রতিপালন করে বড় করে লুটপাট করবার ক্ষমতা দেবার পরে সবগুলো এক্সপোজড হয়ে গেছে… তখন আবার পত্রিকায় লেখছে দায় কার? বাহ।”
রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান বলেন, ‘‘ বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রা্গমেটিক পপুলার লীডার। আজকে তার ওপর জেল-জুলুম-নির্যাতন উনি ভিকটম হয়েছেন… এটা একটা টর্চার। রাজনীতি করে গিয়ে উনি বিভিন্ন সরকারের আমলে ভিকটিম হয়েছেন…. হাসিনা আমলে জেলে গিয়েছেন, এরশাদের আমলে জেলে গিয়েছেন, এখন উনি কত বছর ধরে জেলে আছেন…চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। চোখ দেখাতে আমাদের প্রেসিডেন্ট চলে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুরে ফ্যামিলিসহ… আরো অনেক নেতা চলে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানীতে যখন-তখন। অথচ বেগম জিয়াকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এটা একটা প্রতিশোধ, এটা একটা রেলিভেন্স। এভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।”
‘‘ আমি বলব, বেগম খালেদা জিয়া প্রিভ্যাইল সিম্বোলাইজেস বাংলাদেশ। তিনি আজকে নিজের প্রিয় জন্মভূমিতে বন্দি, আমি মনে করি বাংলাদেশও বন্দি। বাংলাদেশ ইজ এ প্রিজনার, ভেতর থেকে বাংলাদেশও বন্দি।সুতরাং খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে সিম্বোলাই করে বলে আমি মনে করি।”
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, গ্রন্থের অনুবাদক শাহরিয়ার সুলতান, ‘ইতি প্রকাশনা’র প্রকাশক জহির দীপ্তি এবং গ্রন্থের লেখক প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ‘র সহধর্মিনী দিনারজাদি বেগম রাখেন।
প্রকাশনার অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামী মজিবুর রহমান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাম্যবাদী দল(মার্কবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, জাগপা খন্দকার লুৎফুর রহমান, ইকবাল হোসেন প্রধান, এনডিপির আবু তাহের, পিপলস পার্টির বাবুল সর্দার চাখারি, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম,বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী, বিএনপির আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মনিরুল হক চৌধুরী, আবদুস সালাম, আফরোজা খানম রীতা, এসএম আবদুল হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিজন কান্তি সরকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, শ্যমা ওবায়েদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজাম, অধ্যাপক আনম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী উপস্থিত ছিলেন।
Dhaka, Bangladesh মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |