আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:২২
ইয়াসির ইয়ামীন:-ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।(০২ নবেম্বর ১৯৩৫-২৪ অক্টোবর ২০২০)
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল।ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানান স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে ১৫ অক্টোবর ঢাকার আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে স্ট্রোকেও আক্রান্ত হন। গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। শনিবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে আটটায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক-এর মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালের ০২ নবেম্বর, কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে। বাবা মুমিন-উল হক ছিলেন চিকিৎসক। মা নূর জাহান বেগম গৃহিণী। তাঁর একমাত্র ছেলে ব্যারিস্টার ফাহিম-উল হক এবং পুত্রবধূ রোকেয়া হকও যুক্ত রয়েছেন আইন পেশায়।
জনাব হক ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন ১৯৫১ সালে। ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৭-তে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এলএলবি করেন ১৯৫৮ সালে। এরপর কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৬৫-তে সুপ্রিমকোর্টে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। বর্ণাঢ্য জীবনের দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর পার করেছেন আইন পেশায়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিমিনাল ল-তে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন জনাব হক। ব্যারিস্টারি পড়েছেন হিন্দু ল নিয়ে। তিন বছরের ব্যারিস্টারি কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন মাত্র দেড় বছরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু ল পড়ানোর শুভ সূচনা তাঁর হাত ধরেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পর পর দু’বার সোশ্যাল সেক্রেটারি পদে জিতেছিলেন। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যখন কেন্দ্রীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি, তখন পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন জনাব হক।
ঢাকার ফার্মগেটে ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালটি গড়েছেন তাঁর দাদা। ঢাকা শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়াও সুবর্ণ ক্লিনিক, আদ-দ্বীন হাসপাতাল, বারডেম, আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালসহ অনেক চিকিৎসা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা-অগ্রযাত্রায় গভীরতম ভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। এককভাবে গাজীপুরের চন্দ্রায় গড়েছেন ১০০ শয্যার “সুবর্ণ-ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল”। নিজের এবং স্ত্রীর উপার্জিত প্রায় সব অর্থই মানব সেবায় ব্যয় করেছেন।
তাঁর স্ত্রী ডাক্তার ফরিদা হক বিশ্ব থেকে গুটি বসন্ত রোগ নির্মূলে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন, এজন্য পেয়েছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার “স্বর্ণপদক সম্মাননা”। কাউ পক্স নির্মূলের জন্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাশিয়া এবং মঙ্গোলিয়াও গিয়েছিলেন ডা. ফরিদা হক।
১৯৯০-র ০৭ এপ্রিল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত “এজি” পদে দায়িত্ব পালন করলেও গ্রহণ করেননি কোনো বেতন-ভাতা বা সম্মানী। এই পদে দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজেকে সরকারের নয়, জনগণের সেবক মনে করতেন- এমন মন্তব্য তাঁর সিনিয়র, সমসাময়িক ও অনুজ সহকর্মী-সহযোগী-সুহৃদদের। তাঁদের অকৃপণ ভাষ্য হলো- ব্যারিস্টার হক ছিলেন নির্লোভ, নীতিবান ও সৎ মানুষ। তিনি নিজে সক্রিয় রাজনীতি না করলেও রাজনীতিকদের অধিকারের প্রশ্নে আমৃত্যু সোচ্চার ছিলেন। ছিলেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের অগ্রণী ধারক ও বাহক।
সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই করেন ব্যারিস্টার হক। দুই নেত্রীর মধ্যেকার দূরত্ব ঘোচাতে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। এই অপূর্ণতার আক্ষেপ নিয়েই তিনি পৃথিবী ছাড়লেন।
দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বরাবরই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন জনাব হক। গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও আইনি বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করেছেন এই প্রবীণ আইনজীবী।
তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ আইনবিদকে হারালো। বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের এই নক্ষত্র মানুষের মনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর মৃত্যুতে আইন অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের অবসান ঘটলো।
হে দানবীর,
হে বাতিঘর,
হে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর,
আপনাকে অগুণতি সালাম।
অকৃপণ শ্রদ্ধা।
আল্লাহ সুবহানুওয়াতা’লা আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
আমীন। সুম্মা আমীন।
লেখক- সাংবাদিক
(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |