আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১২:৫০
জুলাই-২০২৩ মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলা, নির্যাতন ও বাধার মুখে পড়েছেন রেকর্ড সংখ্যক ৩৫ জন সাংবাদিক। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৯ জনসহ জুলাইতে ১৩ সাংবাদিক মামলার আসামি হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন একজন। মোট ৪৮ জন সাংবাদিক এ মাসে নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতায় এ মাসে সর্বাধিক সংখ্যক সাংবাদিক আহত ও হেনস্তার মুখে পড়েছেন।
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহকালে এবং ফেনীতে বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ ও সরকার দলীয়দের হামলায় আহত ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধার ঘটনা ঘটে।
এছাড়া সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও লাকসাম, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র ও শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালে নজর রেখে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র মনিটরিং কমিটি সাংবাদিক নিপীড়নের এ চিত্র পেয়েছে। বিএফইউজে’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনের নেতৃত্বে এ মনিটরিং কমিটিতে কাজ করছেন আহবায়ক ও সহসভাপতি রাশিদুল ইসলাম,সদস্য সচিব ও সহকারি মহাসচিব শহীদুল্লাহ মিয়াজী, প্রচার সম্পাদক মাহমুদ হাসান ও দফতর সম্পাদক তোফায়েল হোসেন। সংবাদমাধ্যমে খবরের মর্যাদা পায়নি এমন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা এ পরিসংখ্যানের বাইরে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস জানুয়ারি থেকে জুনে মোট ১৫০ জন সাংবাদিক নানাভাবে নিগ্রহের শিকার হন। খুন হন দুই সাংবাদিক।
হামলার শিকার হয়েছেন তারা হলেন- ৮ জুলাই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ মারধরের শিকার হন সাংবাদিক আবদুস সালাম। তিনি স্থানীয় আমাদের বড়াল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। মাদক কারবারিরা তাঁর ওপর এ হামলা চালিয়ে মারধর করে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
১৪ই জুলাই নোয়াখালীতে বিএনপি’র সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ার সময় লাকসামে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের আক্রমনের শিকার হন ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বাবুল তালুকদার।
তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস ভাংচুর করা হলে তিনি কোন রকমে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
১৮ই জুলাই গাবতলী থেকে বিএনপি’র পদযাত্রার কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বাংলা কলেজের সামনে সংঘর্ষে আহত হন যমুনা টিভির সাংবাদিক শরীফুল ইসলামসহ কয়েকজন।
১৮ই জুলাই ফেনীতে বিএনপি’র পদযাত্রার সংবাদ সংগ্রহকালে আওয়ামী লীগের হামলা এবং ফেনী প্রেস ক্লাবে আক্রমনের সময় স্থানীয় ১১ জন সাংবাদিক হেনস্থার শিকার হয়েছে। ইটপাটকেলের আঘাত ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় সাংবাদিকদের। হামলায় ফেনী প্রেস ক্লাবের জানালার কাঁচ ভাংচুরসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হেনস্তা ও হুমকির শিকার সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এন এন জীবন, মানবজমিন প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম, মোহনা টিভি প্রতিনিধি তোফায়েল আহমেদ নিলয়, বাংলাভিশনের মামুন, সময় টিভির রাসেল, ডিবিসি’র দুলাল তালুকদার ও ফেনীর তালাশের এম এ আকাশ। এদের কেউ শারীরিকভাবে নিগ্রহের শিকার হন, কেউ হন অপদস্ত।
২৪শে জুলাই নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁওয়ে নিজ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন দৈনিক আমাদের কন্ঠোর ক্রাইম রিপোর্টার ও ডিইউজে’র নির্বাহী সদস্য রাজু আহমেদ। এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধ নিয়ে কথা বলায় দুষ্কৃতকারিরা তাঁর ওপর হামলা চালায় বলে রাজু জানান।
২৪ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিনিধি, চৌদ্দগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চৌদ্দগ্রাম টেলিভিশন সাংবাদিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন নয়ন। উপজেলা পরিষদের কাছে দোয়েল চত্ত্বরে দিনদুপুরে তার ওপর হামলা করে অজ্ঞান হয়ে পড়ার পর সন্ত্রাসীরা বীরদর্পে চলে যায়। আগের দিন ২৩শে জুলাই স্থানীয় ভোরের কলাম পত্রিকার প্রতিনিধি আতাউর রহমান রিপনের ওপরও সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। সংবাদ প্রকাশের জের এ দুটি হামলা হয় বলে জানা গেছে।
২৭শে জুলাই সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণে হামলায় রক্তাক্ত হন স্থানীয় দৈনিক শুভ প্রতিদিন এর সহকারী সম্পাদক এডভোকেট তাজ উদ্দিন। তিনি দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও সিএসবি টেলিভিশনের সাবেক সিলেট প্রতিনিধি এবং সিলেট মেট্রোপালিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য। তুচ্ছ ঘটনায় হামলা করে তাঁর নাক ফাটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়।
২৮শে জুলাই ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত শেয়ারবিজ-এর বীর সাহাবীর মোবাইল কেড়ে নেন এবং হেনস্তা করেন পুলিশের এসি আবদুল্লাহ আল মামুন। এ নিয়ে এসি মামুনের সঙ্গে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তুমুল বচসা হয়। পরে চাপের মুখে ফোন ফেরৎ দিতে বাধ্য হন।
গত ২৮শে জুলাই ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় হামলার শিকার হন দৈনিক কালের কন্ঠের ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ পাল। আখাউড়ার রাধানগর কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ক্লিনিক থেকে একটি মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দিলে সাংবাদিক বিশ্বজিৎকে মারধর করা হয় বলে কালের কন্ঠে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা যায়।
২৯শে জুলাই ঢাকার প্রবেশ পথে বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচির সংবাদ সংগ্রহকালে অন্তত ৯ জন সাংবাদিক শারীরিকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশের টিয়ার শেল, ছররা গুলি ও সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলায় তারা কমবেশি আহত হন। আহতরা হচ্ছেন- যমুনা টেলিভিশনের শরীফুল ইসলাম, নিউজ টুয়েন্টিফোরের শাকিল ও আজনবী, যুগান্তরের তরিকুল ইসলাম, চ্যানেল আইয়ের আক্তার হোসেন ও মনির, মানবজমিনের নূরে আলম জিকু ও কিরণ শেখ এবং রেডিও ধ্বনির শাহাবুদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া মাতুয়াইল এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও বাধার মুখে পড়েন বাংলাভিশনের সেকান্দার রেমান, মাইটিভির ইউসুফ আলী ও জয়নাল আবদীন শিশির, বিদেশী গণমাধ্যম রাপ্টলির প্রতিনিধি হোসাইন তারেক, সাংবাদিক শাহরিয়ার জামান প্রমুখ।
মামলা ও গ্রেফতার: ২৭শে জুলাই মিরপুরের নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দৈনিক পাঞ্জেরীর নির্বাহী সম্পাদক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নির্বাহী সদস্য তালুকদার নুরুল মোমেন রুমিকে। তাকে বিএনপির পদযাত্রায় সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে।
১১ই জুলাই প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সিএমএম আদালতে মামলা করা হয়। চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার পারভেজ দানু প্রকাশিত সংবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে এ মামলা করেন। মামলার অপর দুই আসামি পত্রিকাটির প্রকাশক কাউসার আহমেদ অপু এবং পটিয়া প্রতিনিধি শফিউল আযম।
৩০শে জুলাই ঢাকার কাছে সাভারে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। স্থানীয় দৈনিক ফুলকির সম্পাদক নাজমুস সাকিব ও দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সাভার প্রতিনিধি এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে সাভার থানায় এ মামলা দায়ের করেন শাহীনুর ইসলাম নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী। দৈনিক ফুলকিতে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবরের সাথে ভুল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি প্রকাশ করায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও ভুল ধরা পড়ার সাথে সাথে সংশোধন করে ক্ষমা চায় পত্রিকাটি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন নবীনগর পৌরসভার নারী কাউন্সিলর নিলুফার ইয়াসমিন। ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সন্তান সেজে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন’ শীর্ষক সংবাদের জেরে দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন দৈনিক ভোরের সময়ের সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল, দেশ রূপান্তরের জ ই বুলবুল, দৈনিক বর্তমানের মো: সফর মিয়া, ঢাকা নিউজের মমিনুল হক রুবেল এবং সত্যের সন্ধানে পত্রিকার নবীনগর প্রতিনিধি। মামলাটি গত জানুয়ারিতে দায়ের করা হলেও তদন্ত শুরু হওয়ার পর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে জানা জানি হয়।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |