আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৭:৪৩
আবুবকর সিদ্দিক,জয়পুরহাট প্রতিনিধি :-জয়পুরহাটের তুলশীগঙ্গা নদী পুন:খনন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার হওয়ায় জয়পুরহাট সদর, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন এলাকার কৃষক। নদী পুন:খনন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় তিন দশক থেকে রোপা আমন ঘরে তুলতে পারেনি এলাকার কৃষকরা। সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যেত এসব ফসলের মাঠ। এতে কষ্টে দিন কাটতো কৃষকদের। কৃষকের সেই কষ্ট লাঘবে নদী খনন ও বাঁধ পুন:নির্মাণের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে নদী পুন:খনন ও বাঁধ সংস্কারের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ফসলের স্বপ্ন দেখছে এলাকার কৃষকরা।
জয়পুরহাট সদর ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর উপজেলার বিস্তির্ণ মাঠ চিরে বয়ে গেছে তুলশীগঙ্গা নদী। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি অপসারণ এবং খরা মৌসুমে নদীর পানি ব্যবহার করে ফসল চাষের জন্য ১৯৯২ সালে নদীর উভয় তীরে নির্মাণ করা হয় ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। একই সাথে নদীর পানি ফসল উৎপাদনের জন্য বাঁধের উভয় তীরে নির্মাণ করা হয় ১৭টি ¯øুইসগেট। কিন্তু নদী ভরাট হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জয়পুরহাট সদরের বানিয়াপাড়া, সোটাহার, ধারকী, সতীঘাটা, ক্ষেতলালের বটতলী, ইকরগাড়া, হাওয়ার বিল, সন্যাসতলী, দেওগ্রাম, জিয়াপুর,আমিরা, মহব্বতপুর এবং আক্কেলপুরের সোনামুখী, হাস্তাবসন্তপুর, জাফরপুর, ছিরামপুর মাঠ পানিতে ডুবে থাকে। নদী দিয়ে পানি অপসারন না হওয়ায় প্রায় দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে এসব পানি মাঠে থাকায় রোপা আমন ধান উৎপাদন করতে পারে না এলাকার কৃষক। আর সেই থেকে কৃষকরা দাবি করে আসছিল নদী পুন:খনন ও বাঁধ সংস্কারের। প্রায় তিন দশক পর তুলশীগঙ্গা নদীর সাড়ে ৪১ কিলোমিটার পুন:খনন এবং নদীর উভয় তীরের ৩০ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হয় গত বছরের জুলাই মাসে। আর এজন্য সরকারি বরাদ্দ মিলেছে ৭৪ কোটি টাকা। বর্ষার আগেই নদী খনন ও বাঁধ সংস্কার প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন,‘নদীর পাশেই আমাদের গ্রাম। আর গ্রামের পরই মাঠ। যে মাঠে ফসল উৎপাদন করে আমাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। নদী ভরাট হওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই নদীর পাড় উছলে আমাদের বাড়ি ঘর এবং ফসল ডুবে যায়। এবার নদী খনন করায় আমরা উপকৃত হয়েছি।
ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর সাখিদারপাড়া গ্রামের কৃষক মহির উদ্দিন বলেন,‘নদীর পূর্ব পাড়ে হাওয়ার বিলে আমাদের গ্রামের অধিকাংশ কৃষকের জমি। আমরা জমিগুলো থেকে কোন দিন রোপা আমন ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। কারণ বর্ষার সময় নদীর পানি আমাদের ফসল ডুবে দেয়। প্রায় ৩০ বছর থেকে এ অবস্থা। এ নিয়ে অনেক যোগাযোগ করেও কাজ হয়নি। কিন্তু এবার নদী খনন এবং বাঁধ সংস্কারের কাজ একসাথে করায় ফসল ছাড়াও ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা দুর হয়েছে। আশা করছি এবার রোপা আমন ফসল আমাদের ঘরে উঠবে। ফসল নিয়ে আশার এমন কথা জানিয়েছেন ওই এলাকার শত শত কৃষক।
ক্ষেতলাল উপজেলার তুলশীগঙ্গা ও মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাইকুল ইসলাম এবং মশিউর রহমান বলেন, তুলশীগঙ্গা নদীর কারণে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমাদের এলাকার মানুষরা। ভারি বৃষ্টিপাত হলেই নদীর তীরের বাঁধ উছলে পানি প্রবেশ করে মাঠে। বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ফসল তলিয়ে যায়। সেই সাথে ডুবে যায় নদী তীরবর্তী প্রায় ১৫ থেকে ২০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। নদীটি যেভাবে খননের পাশাপাশি বাঁধও সংস্কার করা হয়েছে,তাতে আশা করছি এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স.ম মেফতাহুল বারি বলেন,নদী খননের আগে ফসলহানি ঘটতো প্রতিবছর। খননের ফলে কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো.তাজমিনুর রহমান বলেন,‘তুলশীগঙ্গা নদী পুন:খনন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ে অবশিষ্ট কাজও শেষ হবে। আর এ কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি অনেক সমৃদ্ধ হবে।
Dhaka, Bangladesh মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |