- প্রচ্ছদ
-
- ঢাকা
- টাঙ্গাইলের পিডিবির কর্মচারীর রহস্যজনক মৃত্যু
টাঙ্গাইলের পিডিবির কর্মচারীর রহস্যজনক মৃত্যু
প্রকাশ: ১ জানুয়ারি, ২০২৪ ৬:১২ অপরাহ্ণ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি :টাঙ্গাইলের সখিপুরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) অফিস সহকারী আলাউদ্দিনের মৃত্যু-রহস্য ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মৃত আলাউদ্দিন উপজেলার বিউবো অফিসে অফিস সহকারী হিসাবে কাজ করতেন। কয়েক মাস যাবৎ তার বিরুদ্ধে বিদ্যুতের তার চুরির অভিযোগ আনে ওই অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা। পরিবারের সদস্যদের দাবি, চুরির মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে না পেরে আলাউদ্দিন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। আলাউদ্দিন আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইট নোট লিখে গেছেন। এতে তার মৃত্যুর জন্য সখিপুর বিউবো অফিসের কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়েছে বলে জানান পরিবার।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) আলাউদ্দিনের বড় ভাই মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সখিপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) থেকে ১০/১২ জন লোক আমাদের বাসায় এসেছিলেন। তারা আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি মিমাংসার কথা বললে আমরা স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলিয়ে দেই। এ সময় তারা আমাদেরকে ১ লাখ টাকার মত দিতে চাইলে আমরা তা গ্রহণ করিনি। নিহতের ছেলে নাসির উদ্দিন আসিফ জানান, সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে টাঙ্গাইলের সখিপুর থেকে ঢাকা খিলগাঁও নিজ বাসায় আসেন বাবা। এসেই গায়ের জ্যাকেট ও মোবাইল ফোন পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়ে বের হয়ে যান। বলে যান কিছু সময়ের মধ্যেই ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। কয়েক ঘণ্টা পর তারা এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পান, ৪ নম্বর রোডে একটি গাছের সাথে গলায় ফাঁস দিয়েছেন তার বাবা আলাউদ্দিন। সেখানে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ দেখতে পাই আমরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন নিহত আলাউদ্দিনের স্বজনরা। একই সাথে তাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিও জানান তারা।এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সখিপুর বিউবো অফিসের কর্মকর্তারা নানা উপায়ে চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের পরিবার। ওইদিন (আত্মহত্যার দিন) রাত আনুমানিক ৩টার দিকে সখিপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর তালুকদার লোকজন নিয়ে আলাউদ্দিনের সখিপুরের বাসায় যান বলে অফিস সূত্রে জানা যায়। এদিকে নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর তালুকদার তার চুরির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে আলাউদ্দিন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে জানান। অসুস্থার কারণে তিনি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে বেশ কয়েকবার চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও আবু বকর তালুকদার উল্লেখ করেন।
জানা যায়, গত ২৯/০১/২০২৩ ইং তারিখে সখিপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ থেকে সরকারের বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত ও নতুন লাইন করার জন্য বরাদ্দকৃত মালামালের বড় একটা অংশ ভাংগারী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ঢাকায় চালান করার সময় কদমতলী থানার মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক আটক হয়। এ সময় পিকআপে বিপুল পরিমাণ তামার তারসহ বিভিন্ন সাইজের তার জব্দ করা হয় এবং পিকআপ চালক আলহাজ, ভাংগারী ব্যবসায়ী সোহেল যার বাড়ী সখিপুর পৌরসভার বৈছার মোড় এলাকায়, এছাড়াও আব্দুর রহিম নামের একজনকে আটক করা হয় যার স্থায়ী বাড়ী নোয়াখালী। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকায় বসবাস করছেন বলে যানা যায়।
আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভাংগারী ব্যবসায়ী মোঃ সোহেল টাংগাইল, সখিপুর বিউবোর ঠিকাদার মোঃ অন্তর আহমেদ, ভান্ডার রক্ষক এম.এ হান্নান, এর জড়িত থাকার বিষয়ে জানা গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্বাসউদ্দিন, ঠিকাদার মোঃ অন্তর আহমেদ ও ভান্ডার রক্ষক এম এ হান্নানের সাথে সখিপুর থানা পুলিশের মাধ্যমে যোগাযোগ করার পরে অদৃশ্য কারণে তাদের নাম বাদ দিয়ে দায়সারা চার্জসিট তৈরী করে আটককৃতদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন এবং তারের পরিমাণ কমিয়ে মাত্র ১২০০ কেজি তামার তার উল্লেখ করে জব্দ তালিকা করেন। এটা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বোর্ডের ওপর মহলে জানাজানি হলে সখিপুর বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বিদ্যুতের তার চুরির অভিযোগ আনা হয় বলে একই অফিসের কেউ কেউ দাবি করছেন।
তবে সখিপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর তালুকদারের বিষয়ে আরো অভিযোগ তুলে ওই অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকৌশলী আবু বকর তালুকদার সখিপুর বিদ্যুৎ অফিসে যোগ দেয়ার পর থেকে অধিকাংশ কর্মচারী তার হয়রানীর শিকার। অফিসের কেউ তার ও ঠিকাদার অন্তর আহমেদের মতের বাইরে গেলে তাদেরকে শোকজ করে দেন। এমনকি গত বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ওই অফিসের লাইনম্যান দীনেশ চন্দ্রকে তুচ্ছ বিষয়ে শোকজ করা হয় বলেও অভিযোগ করেন ওই অফিসের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকজনকে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে নানা সময়ে শোকজ করার কথাও বিউবো অফিস সূত্রে জানা যায়।
তবে প্রকৌশলী আবু বকর তালুকদার রাজধানীর কদমতলী থানা পুলিশ কর্তৃক কয়েকজনকে তারসহ আটকের পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন–তার চুরির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এ বিষয়ে দেশের কোনো থানায় আমাদের অফিসের কারো নামে বা যাদের নাম উল্লেখ করা হলো তাদের নামে কোনো মামলা নেই এবং কেউ আটকও হয়নি। আর আমাদের অফিস কর্তৃক মৃত আলাউদ্দিনকে চুরির অপবাদ দেয়ার বিষয়টিও সত্য নয়। আমাদের অফিস থেকে তার চুরির কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের অফিস থেকে যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে, তাদেরকে ন্যায়সঙ্গত কারণেই করা হয়েছে এবং বিষয়টি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তারাও জানেন। আর আলাউদ্দিন আত্মহত্যার আগে সুইসাইট নোটে কেন আমাদেরকে দায়ী করেছেন, এটা তিনি এবং তার পরিবারই ভালো বলতে পারবেন। আমাদের জানা নেই। আর আলাউদ্দিন সাহেব যেহেতু দীর্ঘ দিন আমাদের অফিসে কাজ করেছেন এ কারণেই তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য টাকা দিতে চেয়েছিলাম। অন্যকোনো কারণ নেই।
Please follow and like us:
20 20