আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:৫৮
ডেস্ক :-শুটার আনসার। ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী। টিলাগড়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক পরিচিত নাম। এমসি কলেজের গণধর্ষণের ঘটনার প্রধান হোতা সাইফুরের অপরাধ জগতের ঘনিষ্ঠজন। সাইফুর সিন্ডিকেটের সেরা অস্ত্রবাজ হিসেবেও পরিচিত। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে নানা ঘটনা ঘটিয়ে আলোচিত হয়েছে শুটার আনসার। অবশেষে সেই শুটার আনসারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সিলেটের টিলাগড়, মেজরটিলায় জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। বর্তমানে মেজরটিলা-টিলাগড় কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের নাজমুল গ্রুপের কর্মী হিসেবেও সে পরিচিত।
শুটার আনসারের পুরো নাম আনসার আহমদ। বাড়ি মেজরটিলার সৈয়দপুর এলাকায়। শাহ্পরান থানা পুলিশ জানিয়েছে- শুটার আনসার গ্রেপ্তার হয়েছে গত বৃহস্পতিবার রাতে। ওইদিন আগ্নেয়াস্ত্রসহ মেজরটিলা ও টিলাগড়ের মধ্যবর্তী সরকারি কলেজের সামনে তার অপরাধ আস্তানায় অবস্থান করছিল। সঙ্গে ছিল তার অপরাধ সিন্ডিকেটের সদস্যরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র ও ইয়াবাসহ শুটার আনসারকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে শুটার আনসারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করেছে। এরপর থেকে কারাগারে রয়েছে আনসার। পুলিশ জানায়- আনসারের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০-১২টি। নানা ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তবে- বেশির ভাগ মামলাই হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে গুলির ঘটনায়। গত ১০ই অক্টোবর সৈয়দপুর আবাসিক এলাকায় আরেকটি ঘটনা ঘটিয়েছিল শুটার আনসার ও তার অপরাধ সহযোগী মুন্না, রবিন, শামীম, সুলতান, জাবির সহ কয়েকজন। চাঁদা না দেয়ায় ওইদিন শুটার আনসারের নেতৃত্বে সৈয়দপুর এলাকার এডভোকেট সৈয়দ মুক্তাদির আলীর বাসায় আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে তাণ্ডব চালায়। তারা এ সময় আইনজীবীর বাসা তছনছ করা ছাড়াও দু’টি মোটরসাইকেল ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় আইনজীবী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এর আগে ২০১৯ সালের ৩রা জুলাই শুটার আনসারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছিল খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে তারা পুলিশের উপরও হামলা চালায়। হামলায় কয়েকজন পুলিশও আহত হন ও রাস্তায় চলাচলরত অবস্থায় যানবাহনে তাণ্ডব চালায়। এ ঘটনায় আনসার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শাহ্পরান থানায় পুলিশ এসল্ট মামলা হয়েছে। একই বছরের ১৮ই জানুয়ারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও প্রকাশ্য গুলিবর্ষণ করেছিল শুটার আনসার ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে আনসারসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করেছিলেন। ২০১৪ সালে টিলাগড়ের পাম্প মালিক মুজিবুর রহমানের টাকা ছিনতাইয়ের মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছিল শুটার আনসার। ২০১৬ সালে শাহ্পরান থানায় শুটার আনসারের বিরুদ্ধে দু’টি ও ২০১৮ সালে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ জানায়- নানা অপরাধকাণ্ডের কারণে মামলা করা হলে এখন পর্যন্ত ৫-৬ বার গ্রেপ্তার হয়েছে শুটার আনসার। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার র্যাবের হাতে আটক হওয়ার মাস খানেক আগে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ঘটনায় সে র্যাবের হাতে আটক হয়েছিল। খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় আরো কয়েকবার আটক হয়। আটক হয়ে কারাগারে গেলেও বেরিয়ে এসে সে একইভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এমসি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- শুটার আনসার ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে সাইফুর ও রবিউলের সঙ্গে কলেজ নিয়ন্ত্রণে ছিল তারও। একবার হেলমেট পরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি করে আনসার। এ ঘটনার পর তার নাম আলোচিত হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমসি কলেজের মন্দিরের টিলায় শুটার আনসার, সাইফুর, রবিউলসহ তাদের সিন্ডিকেট অবস্থান করতো। আর সেখানে প্রতিদিনই ঘটতো ছিনতাইয়ের ঘটনা। এছাড়া ক্যাম্পাসে শ্লীলতাহানির মতো ঘটনায়ও জড়িত শুটার আনসার। কয়েক বছর আগে এমসি কলেজে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনের ফুটেজ সংগ্রহকালে শুটার আনসারের নেতৃত্বে টেলিভিশন সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে- তার মূল আস্তানা হচ্ছে এমসি কলেজের পার্শ্ববর্তী সরকারি কলেজ হোস্টেলের সামনে। সেখানে সরকারি জমির উপর কয়েকটি ঝুঁপড়ি ঘর বানিয়ে চায়ের দোকান বসিয়েছে আনসার। আর ঝুঁপড়ি ঘরে আনসারের সহযোগীরা সব সময় আড্ডা দিতো। তারা সেখানে মাদক, জুয়ার আস্তানা গড়ে তুলেছিল। এই ঝুঁপড়ি ঘরে এসে আড্ডা দিতো এমসি কলেজের ধর্ষক সাইফুর, রবিউল, শাহ রনিসহ অন্যরা। ওই এলাকার শিলং তীর নামক জুয়ার নেতৃত্বে রয়েছে শুটার আনসার। ছাত্রলীগের নাজমুল গ্রুপের নেতা হওয়ার কারণে এলাকায় আধিপত্য, প্রভাব সবকিছুই রয়েছে আনসারের। এ কারণে সে বেপরোয়া টিলাগড় ও মেজরটিলা এলাকায়। সৈয়দপুরে প্রবাসীর কয়েকটি বাসা ও জমি দখল করে রেখেছে শুটার আনসার। এর মধ্যে লন্ডন প্রবাসী আশিক মিয়া, এলাকার রাজু মিয়ার সম্পত্তিও দখলে সে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে মহড়া দেয়। শুটার আনসারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ভুক্তভোগী এডভোকেট সৈয়দ মুক্তাদির আলী জানিয়েছেন- এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত ঘটনায় শুটার আনসার জড়িত। কোনো ঘটনা ঘটলেই অস্ত্র নিয়ে সে হামলা চালায়। এ কারণে তার ভয়ে সবাই তটস্থ থাকেন। চাঁদা দেয়ার কারণে তার বাসায় হামলা ও তাণ্ডব চালিয়েছিল আনসার ও তার সহযোগীরা। এসব ঘটনায় তিনি মামলা করেছেন। আনসারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আর্জিতে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ জানিয়েছিলেন- কলেজের আশেপাশের টিলাময় জায়গায় আনসার ও তার সহযোগীরা অসামাজিক কাজ সহ ছিনতাই, রাহাজানি করতো। শিক্ষার্থীরা এতে প্রতিবাদ করলে আনসার, নাইমসহ আসামিরা জোরপূর্বক হোস্টেলে ঢুকে গুলিবর্ষণ ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। এদিকে- ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ঘটনায় শুটার আনসার ও তার সহযোগীদের আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |