আজ বুধবার | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ২:৩০
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:-টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন তিনি। মহাসড়কে ডাকাতির কবল থেকে কীভাবে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন সেটিই জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে রোববার (২৩ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে শফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘গত বৃহস্পতিবার জরুরি প্রয়োজনে আমি ঢাকায় এসেছিলাম। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার পর ঢাকা থেকে আর টাঙ্গাইল যাওয়ার বাস নেই। আমি ও বন্ধু আবদুল্লাহপুর যখন পৌঁছালাম, তখন রাত প্রায় সাড়ে ১২টা। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে রাজশাহীগামী একটি বাসের চালককে হাত দেখালেও থামেনি। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাস দেখতে পেয়ে আবারও হাত দেখালাম। বাসটি থেমে যায়।
এরপর দুই বন্ধু দ্বিতীয় সারির দুটি আসনে বসলাম পাশাপাশি। বাসটা একটু অন্ধকার, কেমন একটু ফাঁকা ফাঁকাও মনে হয়েছিল। জিজ্ঞাসা করতে বাসচালকের সহকারী বলেন, ‘বেশির ভাগ যাত্রীই ঘুমোচ্ছেন। আরও যাত্রী পথ থেকে উঠবেন। দেড়শ টাকা ভাড়া মিটিয়ে দুজনেই এরপর গা এলিয়ে দিলাম। কামারপাড়া পার হওয়ার পর বেশ নির্জন একটা জায়গায় গিয়ে তাদের ওপর সাত থেকে আটজন ঝাঁপিয়ে পড়ে। একজন গলায়, আরেকজন পেটে ছুরি ধরে আমাদের। আমার বন্ধুকে বাসের পেছনের দিকে নিয়ে যায়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, চড়থাপ্পড় চলে। একজন বলে, ‘এই বাসের সব ডাকাত।’
পরে আমি ‘শোনার সঙ্গে সঙ্গে আত্মসমর্পণ করলাম। ওদের বললাম, যা আছে নিয়ে যান। কোনো ক্ষতি কইরেন না।’
ডাকাত দলের সদস্যরা ওই সময় আমার ব্যবহৃত তিনটি মুঠোফোন, দুটি ওয়ালেট, দুটি এটিএম কার্ড, বিকাশ ও কার্ডের পিন নম্বর নেয়। মুঠোফোনটি পাসওয়ার্ড দিয়ে বন্ধ করা ছিল। আমাকে দিয়েই ডাকাত দল মুঠোফোন খুলিয়ে বিকাশ থেকে টাকা নেয়। বারবার তারা জানতে চায়, ব্যাংকে কত টাকা আছে। আমি জবাবে শুধু বল্লাম, এক লাখ টাকা পর্যন্ত তোলা যাবে। কত টাকা আছে, আমি মনে করতে পারছি না।
সবকিছু কেড়ে নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা সবার চোখ-হাত-পা বেঁধে ফেলে। নাইলনের সুতা দিয়ে বেঁধে ফেলায় আমার হাত দুটো অবশ হয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে টুকরা টুকরা কথা কানে আসছিল আমার। কেউ কেউ গোঙাচ্ছিলেন। সবকিছু দিয়ে দেয়ার পরও ডাকাত দলের অত্যাচার শেষ হয় না। একবার আমার মনে হয় মাথায় কেউ পিস্তল ঠেকিয়েছে, একবার পেটে গুঁতো দেয়।
এরপর ভোররাত চারটা সাড়ে চারটার দিকে চন্দ্রার আগে কবিরপুর নামের একটা জায়গায় বেশ কয়েকজন যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেয় ওরা। তাদের মধ্যে আমার বন্ধুও ছিলেন। আমার বন্ধু আমার স্বজনদের খবর দেন। এবার নতুন করে নির্যাতন শুরু হয় আমার ওপর। আমাকে মারতে মারতে পেছনে নিয়ে যায় ডাকাতেরা। সারা রাতে অন্তত ৮০টি থাপ্পড় মেরেছে ডাকাতেরা আমাকে। হঠাৎ বাসটি থেমে গেল।
বেশ কিছুক্ষণ আর কারও সাড়াশব্দ পায়নি। আমি বুঝতে পারলাম বাসটি বেশ অনেকক্ষণ ধরে আর চলছে না। ধারণা ছিল হয়তো উত্তরবঙ্গের কোনো জায়গায় চলে এসেছি। মরব কি বাঁচব, তা নিয়ে তখনও দ্বিধায় ছিলাম।
এর মধ্যে একজন এসে আমার চোখ ও হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। তিনি নিজেকে বাসচালকের সহকারী বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘তিনি নিজে, বাসচালকও ভুক্তভোগী। ডাকাত দলের লোকজন যাত্রী সেজে তাদের বাসে উঠে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল।’
আমি জানতে চায়লাম যে কোথায় আছি। পরে তিনি বললেন, ‘জায়গাটিতে বাস থেমে আছে, সেটি চট্টগ্রাম রোডের কাছের কোনো একটি জায়গা।’ বাসচালক তার সহকারীদের বলেন, ‘সবাই মিলে পুলিশের কাছে যাবেন। তিনি বাসটিকে ঘুরিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যেতে বলেন।’ কেননা ওখানে থানা আছে। তারা প্রথমে রাজি হলেও পরে বলেন, ‘মামলা করলে বাস থানায় আটকে রাখবে। মালিকের সঙ্গে পরামর্শ না করে এই সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবেন না।’
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হাত-পা-চোখ সব বেঁধেছিল ওরা। আমার অ্যাজমা আছে। শ্বাসকষ্ট শুরু হতে ইনহেলার চেয়েছিলাম, দেয়নি। আমি শুধু কলেমা পড়ছিলাম। মনে হচ্ছিল, বাচ্চাদের মুখ আর দেখা হলো না।’
মহাসড়কে চলাচলকারী একটা বাস ১২ ঘণ্টা ধরে ঢাকা শহরে সারা রাত ঘুরে ডাকাতি করে, কিন্তু ঢাকা সিটির কোনো চেকপোস্ট সেটি থামায় না, বিষয়টা খুবই ভাবনার। এর পাশাপাশি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রাতে যাতায়াত না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আরও বলেছেন, ‘কাউন্টার ছাড়া কোনো জায়গা থেকে বাসে না ওঠতে।’
ডাকাত দলের লোকজন নিজেদের মধ্যে কথা বলেনি? এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল বলেন, ‘তারা একে অন্যকে সাংকেতিক নামে ডাকছিল। কাউকে বেড়াল, আবার কাউকে মাস্টার বলে সম্বোধন করছিল। গাঁজা-ইয়াবাও সেবন করছিল।’
শফিকুল বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী পৌঁছে আগে মাতুয়াইলের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড অ্যান্ড মাদার হেলথের (আইসিএমএইচ) ঠিকানা জেনে নেই। এখানে একসময় প্রশিক্ষণ নিয়েছি আমি। এক দৌড়ে হাসপাতালে গিয়ে পরিচিত বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বললাম। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম থানায় যাব।
যাত্রাবাড়ী থানায় যাবার পর থানার পুলিশকে সবকিছু খুলে বললাম। শুনে তারা বলেন, ‘যেহেতু আবদুল্লাহপুর থেকে বাসে উঠেছেন তাই অভিযোগ দিতে হবে সেখানে।’ শুনে উত্তরা পশ্চিম থানায় গেলে সেখান থেকে বলা হয়- যেখানে নেমেছেন অভিযোগ সেখানে দিতে হবে।
শফিকুল আরও বলেন , ‘আমি বুঝলাম, কেউ দায়িত্ব নিতে চাইছে না। জান নিয়ে ফিরেছি। বাসায় ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম।’
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক তদন্ত ইয়ামীন কবির বলেন, ‘ডাকাতির অভিযোগ নিয়ে একজন এসেছিলেন। তাকে পরামর্শ দিয়ে আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি।’
অন্যদিকে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. আখতারুজ্জামান ইলিয়াস জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।
তবে শফিকুল ঘটনা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার পর তার সঙ্গে ভুক্তভোগী আরেক দল যোগাযোগ করে। তারাও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকাগামী অপর একটি বাসে ডাকাতের কবলে পড়ে। সেই বাসও পুলিশ জব্দ করেছে।
হাইওয়ে রেঞ্জের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক বলেন, ‘বাসটি রাস্তায় পড়ে ছিল, তারা জব্দ করেছেন। মামলা হয়েছে কিনা জানেন না। কারণ, হাইওয়ে থানায় মামলা হয় না।’
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:19 PM |
Isha | 6:40 PM |