ডেস্কঃ- যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতা শুরুতে ঘোষণা দেন ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে লড়বেন। টানা কয়েকদিন তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ীদের চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা জানান। কিছুদিন পরই ওই নেতা নিজেকে গুটিয়ে নেন। দলের হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়ায় সরে দাঁড়ান তিনি। কয়দিন পর মহানগর আওয়ামী লীগের আরেক নেতা একইভাবে চা-চক্র ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার দাবি দলীয় হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন। নির্বাচনের পর তিনি কি কি উন্নয়ন করবেন, কেমন সহযোগিতা লাগবে সেসব বলেন।
ওই আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এক এমপিও একইভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। মনোনয়ন পেতে ওই তিন নেতার চা-চক্রে উপস্থিত এক ব্যবসায়ী বলেন, সবাই বলছেন আওয়ামী লীগের সবুজ সংকেত পেয়েছেন। আমাদের সহযোগিতা চান। কিন্তু দলের মনোনয়ন তো পাবে একজন। বিষয়টি আমার জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানান, মনোনয়ন ঘিরে এরইমধ্যে নির্বাচনী আসনে নানা রকম ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যে লবিং, গ্রুপিং এখন তুঙ্গে। কাকে রেখে কাকে সমর্থন দেবো, কার জন্য কাজ করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। যেই এমপি পদে আসুন না কেন তারই সহযোগিতা লাগবে। নির্বাচনের প্রচারণা শুরু না হলেও এরইমধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচনের জন্য এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। এজন্য তারা নানা ধরনের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়েছেন। অনেকে আবার সরব হয়েছেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিএনপি আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে উপনির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। তাই দলীয় প্রতীক পেলেই ‘নিশ্চিত জয়’- এমনটি ভেবে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাদের মধ্যে মনোনয়ন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। মিরপুর, দারুসসালাম, শাহ্ আলী, রূপনগরের আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনে দোলাচলে আছেন সাধারণ ভোটাররাও। স্থানীয় নেতারা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। এ কারণে নির্বাচনকেন্দ্রিক গড়ে উঠছে গ্রুপিং। বিষয়টি দলের জন্য বিব্রতকর বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড এই আসনের আওতাধীন। জাতীয়ভাবেই আসনটির গুরুত্ব অনেক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসলামুল হক আসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপি প্রার্থী এসএ খালেককে পরাজিত করেছিলেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি নৌকার মাঝি হয়ে সংসদে যান। এই আসনের এমপি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসলামুল হক গত ৪ঠা এপ্রিল মারা যান। ইতিমধ্যে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের ভেতরে এরই মধ্যে এই আসনে নৌকার প্রার্থী নিয়ে আলোচনা- শুরু হয়ে গেছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা লম্বা হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী বৃদ্ধির সংখ্যা আরো প্রকট হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, নির্বাচন কমিশন আসনটিতে উপনির্বাচনের ঘোষণা দিলে মনোনয়ন ফরম ছাড়া হবে। তারপর দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত করা হবে প্রার্থী। বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যেকোনো নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেতে অধিকসংখ্যক প্রার্থী চেষ্টা করবেন- এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। যারা প্রচারণা করছেন তারা সবাই জানেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- সদ্য প্রয়াত এমপি আসলামুল হকের সহধর্মিণী মাকসুদা হক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এসএ মান্নান কচি, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দারুস সালাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মাজহারুল আনাম, শাহ্ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার দেওয়ান আবদুল মান্নান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হানিফ, সিআইপি ড. আরিফ আহমেদ চৌধুরীসহ আরো বেশকিছু স্থানীয় নেতা। এছাড়া সাবেক কাউন্সিলর ও অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলও নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করে পোস্ট দিয়েছেন। ইতিমধ্যে কিছু মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে কাদা-ছোড়াছুড়িও শুরু হয়েছে। কেউ কেউ অন্য প্রত্যাশীকে বিএনপি বা অন্য কোনো দলের সমর্থক হিসেবে প্রচার করছেন।