আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:৩৭
ঢাকা:-ফাঁকা কেন্দ্র। ভোটার শূন্য। আনসার, পুলিশ আর পোলিং এজেন্টদের ঘুরাঘুরি। আড্ডা, গল্প। অনেকটা আয়েশি দিন কাটিয়েছে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু ভোটকেন্দ্রগুলো বিএনপি’র এজেন্ট ও ভোটারদের প্রবেশে বাধা পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকরা অভিযোগ করেছে মারধরেরও। করোনাভাইরাসের মধ্যেই ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে গতকাল।
নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ও নওগাঁ-৬ আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল। সকাল নয়টায় ঢাকা-৫ আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া শুরু হয়। এই উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রয়োগের হার ছিল একেবারেই কম। ভোট কক্ষের ভেতর পোলিং অফিসাররা গল্পগুজব করে অলস সময় পার করছিলেন। নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের কেন্দ্রের সামনে বসে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। সবাই ছিলেন খোশ মেজাজে। বিকাল তিনটার দিকে সরজমিন যাত্রাবাড়ীর আইডিয়াল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই নেই। এই কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং অফিসার হামিদুল ইসলাম বলেন, প্রত্যাশিত ভোটারদের লক্ষ্য করা যায়নি। একই কেন্দ্রের মহিলা বুথের প্রিজাইডিং অফিসার মোতাহার হোসেন বলেন, অল্পসংখ্যক ভোট পড়েছে। যেটাকে ভালো সংখ্যা ধরা যাবে না। আবার ইভিএম মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ না মেলার কারণেও অনেক ভোটার ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন। যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল হাইস্কুল ও কলেজ কেন্দ্রের মহিলা বুথের ভোটার জয়া আরা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেও ভোট দিতে পারেননি। পরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানীর ডেমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চোখে পড়লো এক জটলা। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলে যে যার মতো সরে গেলেন। বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে গিয়ে চোখে পড়লো আরো বেশ কয়েকটি জটলা। সবার গলায় ঝোলানো নৌকার ব্যাচ। একটু পরে সবাই যে যার মতো লাইনে দাঁড়িয়ে গেলেন। দীর্ঘ এই লাইনে শতাধিক ভোটার থাকলেও একজনও পাওয়া যায়নি ধানের শীষ অথবা অন্য প্রতীকের ভোটার। ভেতরে গিয়ে পাওয়া যায়নি কোনো ধানের শীষের এজেন্ট। ঘণ্টাখানেক পর আমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। কেন্দ্রের সামনে ভিড় থাকলেও ভেতরে গিয়ে দেখা গেল প্রায় সবগুলো বুথই ফাঁকা। কেন্দ্রের সামনে চোখে পড়েছে শুধু সাংবাদিক, নির্বাচনী কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। ঢাকা-৫ উপনির্বাচনে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র ঘুরে এমনই চিত্র চোখে পড়েছে গতকাল। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রয়োগের হার ছিল একেবারেই কম। ভোট কক্ষের ভেতর পোলিং অফিসাররা গল্পগুজব করে অলস সময় পার করেছেন। বিএনপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রতিটি কেন্দ্র ঘুরেই গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, তার এজেন্টদের কেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি। বের করে দেয়া হয়েছে।
সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে সরজমিন ঘুরে নানা চিত্র দেখা গেছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে নৌকা সমর্থকদের মহড়া, বুথ শূন্য ভোট কেন্দ্র, ধানের শীষ এজেন্টদের বের করে দেয়া ছাড়াও নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৬৬ নং ওয়ার্ডের ১৪৮ ও ১৪৯ কেন্দ্র, দেল্লা, সারুলিয়া ডগাইর দারুস সুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসা, সানারপাড় রুস্তম আলী হাই স্কুল, ফুলকলি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬৬ নং ওয়ার্ডের ভ্যামুইল আইডিয়াল স্কুল, ৬৭ নং ওয়ার্ড লতিফুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, ৬৮ নং ওয়ার্ডের হাজী আদর্শ মোয়াজ্জেম আলী হাই স্কুলসহ প্রায় কেন্দ্রেই কোনো ধানের শীষের এজেন্ট চোখে পড়েনি। কেন্দ্র থেকে বিএনপি’র সকল পোলিং এজেন্টদের পুলিশের সামনেই আওয়ামী লীগের কর্মীরা বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী।
জানতে চাইলে ডেমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার শিব শংকর রায় বলেন, এখানে কোনো প্রার্থীর সমর্থকদের বের করে দেয়া হয়নি। ধানের শীষের প্রার্থীর লোকজন গতকাল রাতে আমার কাছে একটা ফরম নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আজ সকালে তাদের কেউ আসেনি। এদিকে, কদমতলীর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ৪ নম্বর ভোটকক্ষে ৪০১টি ভোটের মধ্যে মাত্র ভোট পড়েছে ৬টি। পৌনে একটায় পর্যন্ত সারুলিয়ায় দারুল সুন্নাহ ফাজিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে ২২৫ ভোট কাস্ট দেখা গেছে। দনিয়ায় বর্ণমালা উচ্চ বিদ্যালয়ে বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত একটি বুথেও কোনো ভোট পড়েনি। দুপুর একটা পর্যন্ত হলি সোল কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১৫৮৬টি। আই সি এম এইচ স্কুল কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৪৭৫। দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৬টি। সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে মোট ভোটার ২৩৭৬। দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১০৫টি।
এদিকে সন্ধ্যায় উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ এবং ফলাফল বর্জন করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ। পাশাপাশি অনিয়মের প্রতিবাদে আজ রোববার দুপুর ২টায় নির্বাচনী এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদ তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এর আগে সকাল ৯টায় এ আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে সালাহউদ্দিন আহমেদের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আরো পাঁচজন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে লড়েন কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।
সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। সেখানে তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দিচ্ছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। এ নির্বাচন একটি নজির হয়ে থাকবে। ফলাফল যাই হোক, সেটা মেনে নেবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা-৫ আসনে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মো. কাজী মনিরুল ইসলাম, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ, গণফ্রন্টের এইচ এম ইব্রাহিম ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির মীর আব্দুস সবুর, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আনছার রহমান শিকদার ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আরিফুর রহমান (সুমন মাস্টার)। উল্লেখ্য, মো. হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে ঢাকা-৫ আসনটি শূন্য হয়।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |