আজ শনিবার | ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |৪ঠা রজব, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৪:২৩

শিরোনাম :

নতুন প্রজন্ম, যারা আমাদের সবচেয়ে বড় আশার উৎস:দিনাজপুরে মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারিরীক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতে ‘ফিরোজায়’ যান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ২২৭ জন প্রার্থী চাকরি ফেরত পেতে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন দেশে মোট ভোটার বেড়ে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জনে দাঁড়িয়েছে:নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ অবশেষে বাংলাদেশের জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম ব্যক্তির যে শক্তি আছে সেই শক্তির কাছে সরকারের শক্তি একেবারে নস্যি:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের কারণে আওয়ামী লীগ এক ধরণের সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে:সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলামপন্থি সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, ’৭১ এ আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল?:রুহুল কবির রিজভী ক্যাপাসিটির নামে হাসিনার সরকার ১৫ বছরে অনেক টাকা নিয়ে গেছে…. প্রায় এক লাখ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে: ইকবাল হাসান মাহমুদ সাবেক এটর্নি জেনারেল প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

তুলসী কেন বৃক্ষ হয়েও জগৎপূজিতা?

প্রকাশ: ৫ এপ্রিল, ২০২২ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ
উজ্জ্বল রায়, নিজস্ব প্রতিবেদক :তুলসী মাহাত্ম্য-বৃক্ষ হয়েও তুলসী কেন পূজনীয়া? মন্দির প্রাঙ্গণে ও গৃহাঙ্গনে পবিত্র তুলসী বৃক্ষ রাখা, তাঁর পূজা-পরিক্রমা করা, কন্ঠে তুলসীকাষ্ঠের মালা ধারণ করা হিন্দুদের বিশেষত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রাচীন সংস্কৃতি। কিন্তু কেন বৃক্ষ হওয়া সত্ত্বেও তুলসীকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হয়, এ বিষয়টি অনেকেরই অজানা। তাই এই প্রবন্ধে তুলসীর কী পরিচয়? ভূমন্ডলে তুলসীর আবির্ভাব কীভাবে হলো? তুলসী কীভাবে বৃক্ষে পরিণত হলো? তুলসী কেন বৃক্ষ হয়েও জগৎপূজিতা? তুলসী কাষ্ঠের মালা কন্ঠেধারণের কী আবশ্যকতা? ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হলো। তুলসীর পরিচয়/তুলসী মূলত কে? সাধারণ বিচারে তুলসী (Tulsi/Holy/Basil/ thai Krapho) একটি  Lamiaceae পরিবারের অন্তর্গত এক সুগন্ধি ও ঔষধি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum sanctum ( sanctum অর্থ পবিত্র স্থান) কল্প কল্প ধরে প্রায় প্রতিটি হিন্দু গৃহে পবিত্র বৃক্ষরূপে পূজিত হয়ে আসছে। মূলত, তুলসী হলেন লক্ষীদেবীর তথা শ্রীমতি রাধারাণীর অংশস্বরূপা সখী ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সী। গোলোক বৃন্দাবনে (চিন্ময়জগতে) গোপিকা বৃন্দাদেবীরূপে তুলসী রাধাকৃষ্ণের নিত্য সেবিকা এবং তাদের বিচিত্র দিব্য লীলা সম্পাদনের মূল পরিচালিকা। তিনি শ্রীকৃষ্ণের দূতী, কুঞ্জাদি সংস্কারে অভিজ্ঞা ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পন্ডিতা। তিনি সমস্ত দেবীগণের মধ্যে পবিত্ররূপা এবং সমুদয় বিশ্বের মধ্যে তাঁর তুলনা নেই বলে তিনি তুলসী নামে কীর্তিতা (ব্র.বৈ.পু. প্রকৃতিখন্ড, ২২.২৪, ৪২)। আর কৃষ্ণভক্তি প্রদায়িনী বলে তাকে ভক্তিদেবী বা ভক্তিজননী বলেও সম্বোধন করা হয়। বৃন্দাদেবীর আজ্ঞাক্রমেই বৃন্দাবনে পত্র, পুষ্প, ফল, ভ্রমর, মৃগ, ময়ূর, শুক-শারী ইত্যাদি পশুপাখিরাও চিরবসন্ত শ্রীকৃষ্ণের কেলিকুঞ্জে পরম রমণীয় শোভা ধারণ করে। সৃষ্টির প্রারম্ভে স্বায়ম্ভূব মন্বন্তরের প্রথম পাদে তিনি কেদার রাজার কন্যারূপে বৃন্দাদেবী নামে যজ্ঞকুন্ড থেকে আবির্ভূত হন। তিনি যে বনে তপস্যা করেছিলেন তাই জগতে বৃন্দাবন নামে প্রসিদ্ধ হয়। শ্রীল কবিকর্ণপুর গোস্বামীকৃত ‘গৌরগণোদ্দেশ দীপিকা’ অনুসারে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যলীলায় বৃন্দাদেবী মুকুন্দ দাসরূপে আবির্ভূত হন। এই বৃন্দাদেবী এবে কৈল আগমন। শ্রীমুকুন্দ দাস নামে দিল দরশন।
ভক্তামৃত লহরী আবার, এই বৃন্দাদেবীই অন্য এক স্বরূপে অভিরামশক্তি শ্রীমতি মালিনীদেবী রূপে আবির্ভূত হন। ব্রজে বৃন্দা সমজ্ঞাতা ইদানিং মালিনী স্মৃতা।। (শ্রীঅভিরাম লীলামৃত, ৭ম পরিচ্ছেদ) গৌড়ীয় আচার্যশ্রেষ্ঠ শ্রীল রূপ গৌস্বামীপাদ ‘শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণগণোদ্দেশ দীপিকা’ গ্রন্থে বৃন্দাদেবীর পরিচয় প্রসঙ্গে লিখেছেন- “শ্রীমতি বৃন্দাদেবীর দেহকান্তি মনোহর ও তপ্তকাঞ্চনের ন্যায়; নীল বসন পরিধানে মুক্ত ও পুষ্প দ্বারা বিভূষিতা। তাঁর পিতার নাম চন্দ্রভানু, মাতা ফুল্লরা, পতির নাম মহীপাল ও ভগিনী মঞ্জরী। শ্রীমতি বৃন্দাদেবী বৃন্দাবনে সর্বদাই বাস করেন। শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের নানাবিধ লীলার দূতী এবং লীলারসে সর্বদাই সমুৎস্যুক, উভয়ের মিলনকার্যে প্রেমে পরিপূর্ণা থাকেন এই বৃন্দাদেবী।” বৃন্দাদেবীর প্রতি অনুগত্য ও তাঁর কৃপা ভিন্ন বৃন্দাবনে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের নিত্যসেবাধিকার কদাপি কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই, বিশেষত গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের নিকট তুলসী পরম আদরণীয়া, শ্রদ্ধার্হ ও পূজনীয়া।
Tulsi-তুলসী ভূমন্ডলে তুলসীর আবির্ভাব কীভাবে হলো? রাধাকৃষ্ণের নিত্যপ্রিয়া ও সেবিকা তুলসী মহারাণী তথা বৃন্দাদেবী জগজ্জীবের কল্যাণার্থে ভিন্ন ভিন্ন কল্পে ও মন্বন্তরে ভিন্ন ভিন্নভাবে এজগতে আবির্ভূত হন। তাই জগতে তুলসীর আবির্ভাব সম্পর্কে পুরাণে বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। একই তুলসীদেবী কখনো জলদ্ধরের পত্নী, কখনো শঙ্খচূড়ের পত্নী, আবার, কখনো বা ধর্মদেবের পত্নী, কখনো ধর্মধ্বজ কন্যা, কখনো চন্দ্রভানু কন্যা, আবার কখনো কেদাররাজের কন্যারূপে আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই জেনে রাখা দরকার যে, এই প্রত্যেক কন্যাই এক বৃন্দাদেবী এবং প্রত্যেক জন্মেই তিনি কৃষ্ণভক্তিপরায়ণা ছিলেন। প্রবন্ধের সীমিত পরিসরে বৃন্দাদেবীর সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করা সম্ভবপর নয় বিধায় পাঠকের জন্য প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক বর্ণনা এ প্রবন্ধে তুলে ধরা হলো। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে (শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড, ৮৬ অধ্যায়) উল্লেখ আছে যে, শ্রীকৃষ্ণের পিতা নন্দমহারাজের প্রশ্নের উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, হে ব্রজরাজ, সৃষ্টির প্রারম্ভে স্বায়ম্ভুব মন্বন্তরের প্রথম পাদে স্বয়ম্ভুব মনু ও শতরূপার দুইপুত্র হয়-প্রিয়ব্রত ও উত্তাপনপাদ। উত্তানপাদের পুত্র ধ্রুব। ধ্রুব মহারাজের পুত্র নন্দসাবর্ণি, তাঁর পুত্র কেদার রাজ। তিনি ছিলেন পরম বৈষ্ণব ও সসাগরা পৃথিবীর অধিপতি। একসময় কেদার রাজার যজ্ঞকুন্ড থেকে লক্ষীদেবীর অংশরূপে এক কন্যা আবির্ভূত হন (কমলা কলয়া জাতা যঞ্জকুন্ড সমুদ্ভবা। বহ্নিশুদ্ধাং শকধানা রত্নভূষণ ভূষিতাস৥ এবং সে কন্যা কেদার রাজ ও তাঁর পত্নীকে তাঁর পিতা-মাতারূপে গ্রহণ করেন। পিতামাতাকে অবগত করে সেই কন্যা তপস্যার উদ্দেশ্যে যমুনার তীরবর্তী রমণীয় পূণ্য বনে গমন করেন। ঐ কেদারকন্যার নাম ছিল বৃন্দা। তাই, তার পপোবন বলে সেই বন জগতে বৃন্দাবন নামে প্রসিদ্ধ হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করার মানসে দীর্ঘকাল তপস্যার পর ব্রহ্মার নিকট থেকে তিনি শীঘ্রই শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করার বর প্রাপ্ত হন। এরপর বৃন্দাকে পরীক্ষা করার জন্য ব্রহ্মা মনোহর বেশে ধর্মকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। কন্দর্পসম সুপুরুষ ধর্মকে বৃন্দা প্রণাম ও সেবাদি করেন এবং তাঁর  নিকটেও একই বর প্রার্থনা করেন। কৃষ্ণপ্রাপ্তি সুদর্লভ বলে ধর্ম বৃন্দাকে নিরুৎসাহিত করে তাঁকেই (ধর্মকেই) পতিরূপে গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন। বৃন্দা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে তিনবার ‘তোমার ক্ষয় হোক’ বলে ধর্মকে অভিশম্পাত করেন। এরপর সূর্যদেবের নির্দেশে বৃন্দা পুনঃঅভিশাপ প্রদানে নিরত হন এবং সমস্ত দেবতা বৃন্দাকে ধর্মের পুনঃজীবন দান করার নির্দেশ দেন। ধর্মপত্নী মুর্তিদেবীও তখন সেখানে উপস্থিত হন। তার অনুরোধে ভগবান শ্রীবিষ্ণু বৃন্দাদেবীকে বলেন, “হে বৃন্দে, তুমি তপস্যা দ্বারা ব্রহ্মার ন্যায় যে আয়ু লাভ করেছ তা এখন ধর্মকে অর্পণ করে গোলোকধামে গমন করো। তোমার এই তপস্যার দ্বারা তুমি পরে আমাকে অবশ্যই লাভ করবে। বরাহ কল্পে তুমি গোলোক হতে গোকুলে (ভৌম বৃন্দাবনে) এসে জন্মলাভ করবে। রাসমন্ডলে রাধিকা ও গোপীগণের সাথে আমাকে প্রাপ্ত হবে।” বিষ্ণুনির্দেশে বৃন্দাদেবীর কৃপায় ধর্ম পুনরুত্থিত হলেন। ততক্ষণে গোলোক হতে এক দিব্য রথ এল বৃন্দাদেবী তাঁর নিত্য ধাম প্রাপ্ত হলেন এবং অন্যান্য দেবতারা স্ব-স্ব স্থানে প্রাস্থান করলেন। তুলসী কীভাবে বৃক্ষে পরিণত হলো? ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে, প্রকৃতিখন্ডে, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, দেবর্ষি নারদের প্রশ্নের উত্তরে ভগবান শ্রীনারায়ণ তাঁর নিকট তুলসীর বৃত্তান্ত বর্ণনা করেন। নারয়ণের বর্ণনানুসারে, একসময় দক্ষসাবর্ণি নামক মনুর বংশোদ্ভুত রাজা ধর্মধ্বজ লক্ষীদেবীর উপাসনা করেছিলেন। লক্ষীদেবী তাঁর প্রতি প্রসন্ন হয়ে তাঁকে বরদান করেন। ফলে, ধর্মধ্বজরাজের পত্নী মাধবী লক্ষীর অংশরূপিণী মনোহরা এক পদ্মিনী কন্যা প্রসব করেন। চম্পকবর্ণা সুকেশী মনোহরা অপূর্ব সুন্দরীকন্যাকে দর্শন করে নরনারীগণ তাঁর তুলনা দিতে অক্ষম হয়েছিলেন বলে পুরাবিদ পন্ডিতগণ তাঁকে ‘তুলসী’ নামে অভিহিত করেন। পরবর্তীকালে তুলসী যোগ্যা স্ত্রীর ন্যায় তপস্যার জন্য বদরিকাশ্রমে গমন করেন। সেখানে “মম নারায়ণঃ স্বামী ভবিতেতি” অর্থাৎ “নারায়ণ আমার স্বামী হোন” এরূপ সংকল্পপূর্বক দৈবপরিমাণে লক্ষ বছর ধরে কঠোর তপস্যায় রত থকেন। তখন ব্রহ্মা তাঁকে বর প্রার্থনা করার নির্দেশ দিলে তুলসী ব্রহ্মাকে বলেন, “আমি গোলোকধামে গোপী রূপে শ্রীকৃষ্ণের অংশস্বরূপা এবং তাঁর প্রিয়া ও সখী। রাসেশ্বরী শ্রীমতি রাধারাণীর অভিলাষে ও শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে আমি মর্ত্যে মানবীরূপে জন্মগ্রহণ করেছি। শ্রীকৃষ্ণ আমাকে ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণপূর্বক তাঁরই অংশস্বরূপ চতুর্ভুজ নারায়ণকে আমার পতিরূপে প্রাপ্ত হওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করার নির্দেশ দেন। দ্বিভুজ শ্যামসুন্দর শ্রীকৃষ্ণে আমার যেরূপ অভিলাষ, চতুর্ভূজ নারায়ণে সেরূপ নেই। তথাপি কৃষ্ণসন্তুষ্টিহেতু আমাকে এই বর দিন, যেন আমি নারায়ণকে পতিরূপে লাভ করতে পারি এবং রাধারাণীরও প্রিয়া হতে পারি।” ব্রহ্মা তুলসীকে রাধার মন্ত্র, স্তোত্র, কবচ, পূজাবিধানসহ তাঁর মনোপূত বর প্রদান করেন। তবে, নারায়ণ প্রাপ্তির পূর্বে ব্রহ্মা তাঁকে শঙ্খচূড়ের পত্নীরূপে কিছুকাল অতিবাহিত করার নির্দেশ প্রদান করে অন্তর্হিত হন। শঙ্খচূড় গোলোকবৃন্দাবনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই অংশপ্রকাশ সুদামাসখারূপে নিত্য বিদ্যমান। শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছায় রাধারাণীর অভিশাপে তিনি শঙ্খচূড় রূপে মর্ত্যে জন্মগ্রহণ করেন। (ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্র.খন্ড, ২০,২১ অধ্যায়) শঙ্খচূড় শিবের কাছ থেকে বর প্রাপ্ত হয়েছিলেন যে, যতদিন তার পত্নী তুলসী সতীত্ব বজায় থাকবে, ততদিন তাকে কেউ বধ করতে পারবে না। এরপর দেবতাদের অজেয় শঙ্খচূড়ের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়। তখন দেবতাদের প্রার্থনায় কৃষ্ণাংশ ভগবান শ্রীবিষ্ণু শঙ্খচূড়ের ছদ্মবেশে তুলসীকে তার পূর্বকৃত তপস্যার ফলদান তথা পতিসঙ্গ দান করেন;  যদিও পূর্বে ভগবানকে পতিরূপে লাভ করতে চেয়েছিলেন, তবুও সেসময় তার বর্তমান পতিবিয়োগ ও বিষ্ণুর এ আপাত ছলনা সইতে না পেরে তিনি তখন ভগবান শ্রীবিষ্ণুর ওপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। ক্রোধ সংবরন  করতে না পেরে তিনি বিষ্ণুর এ আচরণকে পাষাণ হৃদয় বিবেচনা করে তাঁকে পাষাণ (পাথর) হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেন এবং তৎক্ষণাৎ দেহত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। পরে তুলসী তার ভুল বুঝতে পারেন যে, তিনি ভগবানের প্রতি অভিশম্পাত করছেন। তখন ভগবানও তুলসীকে বরদান করেন। শ্রীবিষ্ণুর বরে সাধ্বি তুলসী দেহত্যাগের পর দিব্যদেহ ধারণপূর্বক গোলোকে শ্রীকৃষ্ণকে  পতিরূপে প্রাপ্ত হন; তাঁর শরীর ভারতে গন্ডকী নামে প্রসিদ্ধা, মনুষ্যগণের পুণ্যপ্রদা পবিত্রা নদীরূপে পরিণত হয় এবং তাঁর কেশকলাপ তুলসী কেশসম্ভুতা বলে তুলসী নামে বিখ্যাত পবিত্র বৃক্ষরূপ ধারণ করে। অচিন্ত্য (চিন্তার অতীত) শক্তিধর নটোবর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেরূপ আপন ভগবত্ত্বা বলে রাসলীলায় নিজেকে অসংখ্যরূপে বিস্তার করেছিলেন, তথাপি তিনি এক, তদ্রুপ বৃন্দাদেবীও পরবর্তীকালে ভগবানের অচিন্ত্য শক্তিবলে এক হয়েও সুন্দরী, স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল, বৈকুন্ঠ ও আমার সন্নিধানে তুলসীবৃক্ষ সমুদয় পুষ্প হতে শ্রেষ্ঠ হবে। তুলসী তরুমূলে সমূদয় তীর্থের অধিষ্ঠান থাকবে।”তুলসী কেন বৃক্ষ হয়েও জগৎপূজিতা? পূর্বোল্লেখিত আলোচনায় এটা অবশ্যই স্পষ্ট হয়েছে যে, তুলসী কোনো সাধারণ বৃক্ষ নয়। মূলত, তিনি এ জড়জগতের উর্ধ্বে অবস্থিত চিন্ময় গোলোকবৃন্দাবন ধামে নিত্য বাসরতা কৃষ্ণপ্রেয়সী এবং রাধাকৃষ্ণের নিত্য সেবিকা। তবুও বদ্ধজীবের প্রতি কৃপা করতে, বিশেষ কিছু ঘটনাকে নিমিত্ত করে তিনি এজগতে বৃক্ষরূপে প্রকটিত হয়েছেন। মূর্তিমান দেবী হয়েও গঙ্গা-স্বরস্বতী যেরূপ যুগপৎ নদীরূপে বিদ্যমান, তদ্রুপ তুলসী গোলোক নিবাসী গোপিকা হয়েও যুগপৎ বৃক্ষরূপে বিদ্যমান। তাই তাঁর পূজাকে যদি কেউ সাধারণ বৃক্ষপূজা বলে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন, তা নেহাৎ অজ্ঞতা। তুলসী ভক্তিদেবী বিধায় তাঁর নিত্য পূজার ফলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অবশ্যই ভক্তি লাভ হয়। ব্যবহারিক অনুশীলন না করলে কখনোই তা কারো অনুভূত হবে না, ঠিক যেমন মধুর বোতল লেহন করলে কখনো মধুর স্বাদ পাওয়া যায় না। তাই জীবশিক্ষার নিমিত্তে ভগবান শ্রীনারায়ণ স্বয়ং এ তুলসী পূজা প্রচলন করেন। তুলসী পূজা প্রসঙ্গে শাস্ত্রে বহু প্রমাণ রয়েছে, যার কিয়দংশ এখানে তুলে ধরা হলোঃ
Tulsi-তুলসী তুলসী পূজা কেন করবেন? তার শাস্ত্র প্রমাণ! ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ (প্রকৃতিখন্ড, ২২ অধ্যায়) অনুসারে, একসময় দেবী তুলসী অভিমান বশত অন্তর্হিত হলে তুলসীবনে গমনপূর্বক শ্রীহরি তুলসীর পূজা ও স্তব করেন। তখন দেবী তুলসী বৃহ্ম হতে আবির্ভূতা হন এবং শ্রীহরির পাদপদ্মে শরণ নেন। সেখানে এও বলা হয়েছে, যে মানব হরিপ্রণীত মন্ত্ররাজ পাঠ করত ঘৃতপ্রদীপ, ধূপ, সিঁদুর, চন্দন, পুষ্প, নৈবেদ্য ও অন্যান্য উপহার দ্বারা যথাবিধি তুলসীর পূজা করবেন, তিনি সর্বসিদ্ধি লাভ করবেন। পদ্মপুরাণঃ পদ্মপুরাণের উত্তরখন্ডে (অধ্যায় ২৩) মহাদেব নারদমুনিকে সম্বোধন করে বলেন-তুলসী সম্বন্ধীয় পত্র, পুষ্প, ফল, মূল, শাখা, ত্বক, স্কন্ধ এবং মৃত্তিকাদি সমস্তই পবিত্র। যে গৃহে তুলসী-বৃক্ষ অবস্থিত, তার দর্শন-স্পর্শনেই ব্রহ্মহত্যাদি পাপ বিলয়প্রাপ্ত হয়। যে যে গ্রহে, গ্রামে বা বনে তুলসী বৃক্ষ বিরাজ করে, জগৎপতি শ্রীহরি প্রীতচিত্তে সেই সেই ক্ষেত্রে বাস করেন। পদ্মপুরাণ, সৃষ্টিখন্ডে (অধ্যায়-৬০) সমস্ত পত্র পুষ্প মধ্যে মঙ্গলময়ী তুলসীই সাধুতমা। তা সর্বমঙ্গলপ্রদা, শুদ্ধা, বৈষ্ণবী, বিষ্ণুপ্রিয়া, ভক্তিমুক্তিপ্রদা, মুখ্যা এবং সর্বলোক মধ্যে পরম শুভা। যেখানেই তুলসী বন, সেখানেই ভগবান কেশব (কৃষ্ণ) এবং সেখানেই ব্রহ্মা, কমলা (লক্ষী) ও অন্য সমস্ত দেব সন্নিহিত। অতএব, তুলসী দেবীকে সর্বদাই পূজা করবে।  পদ্মপুরাণ, সৃষ্টিখন্ডে (অধ্যায়- ৬১.৫-৬)-তুলসী নামোচ্চারণমাত্রই মুরারি হরি প্রীতি লাভ করেন, পাপসকল বিলয় প্রাপ্ত হয় এবং অক্ষয় পূণ্য লাভ হয়ে থাকে- এমন তূলসীকে লোকে কেন পূজা-বন্দনা করবে না?
নিত্যং যস্তুলসী দত্ত্বা পূজয়েন্মাঞ্চ মানবঃ।
লক্ষাশ্বমেধজং পুণ্যং লভতে নাত্র সংশয়ঃ।।
(ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড ২১.৪৫)
“যে মানব প্রত্যহ তুলসীপত্র দ্বারা আমাকে পূজা করবেন, নিশ্চয়ই তার লক্ষ অশ্বমেধের ফল হবে।” এভাবে শাস্ত্রে তুলসীপূজার বহু মাহাত্ম কীর্তিত হয়েছে। নামাচার্য শ্রীল হরিদাস ঠাকুর সর্বদা তুলসীকে সামনে রেখে হরিনাম জপ করতেন। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, নামাচার্য হরিদাস ঠাকুর, শিব-পার্বতী, এমনকি শ্রীমতি রাধারাণী তুলসী সেবা আচরণের মাধ্যমে জীবকে তা অনুসরণ করার শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং, কৃষ্ণভক্তি লাভেচ্ছু প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত নিয়মিত তুলসীদেবীর আরাধনা করা তুলসীমালা কেন ধারণ করবেন?
নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য অধুনা নরনারীর দেহে নানারকম অলংকার দেখা যায়- বিভিন্ন কাষ্ঠনির্মিত, মৃত্তিকা বা ধাতুনির্মিত ও মানুুষের হাড়-কংকাল আকৃতির নানারক অলংকার। কিন্তু এসব উদ্ভট সাজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ সহজতর হলেও এর মাধ্যমে আত্মিক কল্যাণ সাধনের কোনো সুযোগ আছে কি? অথচ বৈদিক শাস্ত্রে এ ব্যাপারেও স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এবং তা আধুনিক অন্তঃসারহীন লোকরঞ্জনের  জন্য নয়, বরং তা ধারণের মাধ্যমে আমাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার কল্যাণ সাধিত হয়। তুলসীমালা তার মধ্যে অন্যতম। এখন প্রশ্ন হলো তুলসীমালা ধারণের কী আবশ্যকতা রয়েছে? তুলসীমালা না পড়ে কি সাধু হওয়া যায় না? শাস্ত্রে কোথায় আছে যে, তুলসীমালা ধারণ করতে হবে? উত্তরে সহজভাবে বলা যায়, ঠিক যেমন পুলিশের পোশাক না পড়েও কেউ পুলিশ হতে পারে, কিন্তু কেউ পুলিশ কি না তা তার পোশাকের মাধ্যমে সহজে চিহ্নিত করা যায়, একইভাবে কারো গলায় তুলসীমালা দেখে সহজে বোঝা যায় যে, তিনি বৈষ্ণম। শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, কুকুরের গলায় বেল্ট থাকলে যেমন বোঝা যায় যে, তার মালিক আছে, তখন কেউ তাকে উত্যক্ত বা তার ক্ষতি করে না। একইভাবে, কারো গলায় তুলসীমালা দেখে বোঝা যায় যে, তিনি ভগবানের ভক্ত, আর ভগবদ্ভক্ত হওয়ার ফলে যমদূতেরা কখনো তাকে স্পর্শ করে না। তাছাড়া, একথা অনস্বীকার্য যে, বাহ্যিক বেশভূষা অবশ্যই ব্যক্তির মনে প্রভাব ফেলে। যেমন, সাধারণ ঘরোয়া পোশাক পরিহিত অবস্থায় মনোভাব একরকম থাকে, আবার, একই ব্যক্তি যখন প্যান্ট, শার্ট, কোট, স্যু, হাতে ঘড়ি, গলায় টাই পড়বে, তখন তা অবশ্যই তার মনে ব্যতিক্রম প্রভাব ফেলবে। এ ব্যাপারে কারো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা না থাকলে আজই পরীক্ষা করে যাচাই করতে পারেন। তেমনি, কেবল বাহ্যিক বেশভূষার ওপর কারো সাধুতা নির্ভর না করলেও, মনে সাধুভাব বজায় রাখতে তা অবশ্যই সাহায্য করে। এছাড়া, তুলসী ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়। তাই ভগবানের অতি প্রিয় তুলসী গলায় ধারণ করার মাধ্যমে কেউ তুলসীদেবীর কৃপায় ভগবানের দৃষ্টি আকর্ষণ তথা কৃপার পাত্র হতে পারেন, ঠিক যেমন কারো সন্তানকে ভালোবাসার মাধ্যমে সেই সন্তানের মায়ের ভালোবাসা অর্জন করা যায় বা প্রিয় পাত্র হওয়া যায়। শাস্ত্রানুসারে, তুলসীর সমস্ত কিছুই পবিত্র। তাই তুলসীমালা ধারণের মাধ্যমে আমরা পবিত্র হই। পবিত্র তুলসীমালা ধারণকারী ব্যক্তির স্নানকালে প্রতিবার গঙ্গা স্নানের ফল লাভ হয়, কারণ তুলসী গঙ্গার ন্যায় পবিত্র। তদুপরি, শাস্ত্রে তুলসীর মহিমা বর্ণনের পাশাপাশি তুলসীমালা ধারণের বহু নির্দেশনা রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলোঃ Tulsi-তুলসী তুলসী সেবা কীভাবে করবেন? শ্রীল রূপ গোস্বামীকৃত ভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থে স্কন্দপুরাণের উদ্ধৃতি দিয়ে নানা প্রকার তুলসীসেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-“যাঁর দর্শনে পাপ ও রোগ নাশ হয়, স্পর্শের ফলে শরীর শুদ্ধ হয়, জল সিঞ্চন করার ফলে ভয় দূর হয়, রোপণ করার ফলে ভগবদ্ভক্তি লাভ হয় এবং শ্রীকৃষ্ণের চরণে অর্পণ করার ফলে পূর্ণ ভগবৎপ্রেম লাভ করা যায় (উল্লেখ্য যে, দ্বাদশীতে তুলসীপত্র চয়ন নিষিদ্ধ), সেই তুলসীদেবীর চরণে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।” আরো বলা হয়েছে, “তুলসী সর্বমঙ্গলময়ী। তাঁকে দর্শন করলে, স্পর্শ করলে, স্তবন করলে, বন্দনা করলে, তাঁর মহিমা শ্রবন করলে অথবা রোপণ করলে সবরকমের কল্যাণ লাভ করা যায়। এই প্রকার বিধির মাধ্যমে তুলসীদেবীর সেবা করলে নিত্যকাল বৈকুণ্ঠজগতে বাস করা যায়।” তুলসীদেবীর কৃপা লাভের আরেকটি বিশেষ পন্থা হলো তুলসী প্রদক্ষিণ। প্রদক্ষিণের এ পদ্ধতি অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত। তাই বিভিন্ন ধর্মে প্রদক্ষিণের রীতি দেখা যায়। মন্ত্রোচ্চারণপূর্বক (যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাদি কানি চ। তানি তানি প্রণশ্যন্তি প্রদক্ষিণ পদে পদে৥) নিষ্ঠাসহকারে তুলসী প্রদক্ষিণ কালে ব্যক্তির চিত্ত ভক্তিজননী তুলসীদেবীর প্রতি নিবিষ্ট হয়। শ্রদ্ধা ও ভগবদ্ভক্তি নিশ্চিতরূপে বর্ধিত হয় এবং চিত্ত স্থির হওয়ার ফলে আধ্যাত্মিক মার্গে দ্রুত অগ্রসর হওয়া যায়।
তুলসী মালা কেন ধারণ করবেন, তার শাস্ত্র প্রমাণ। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণঃ তুলসীকাষ্ঠনির্মাণমালাং গৃহ্নাতি যো নরঃ।
পদে পদেহশ্বমেধস্য লভতে নিশ্চিতং ফলম্।।
(ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড-২১.৪৭)
“যে নর তুলসীকাষ্ঠ-নির্মিত মালা ধারণ করবেন, নিশ্চয়ই তাঁর পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল হবে। স্কন্দপুরাণঃ “ভগবান বললেন, যে মানব তুলসীকাষ্ঠ-সম্ভূত মাল্য ধারণ করেন, আমি প্রত্যহ তাকে দ্বারকাবাসের ফল পদান করি। যে নর ভক্তিসহকারে আমার উদ্দেশ্যে তুলসীকাষ্ঠ-সম্ভুত মাল্য প্রদান করে ভক্তিপূর্বক তা গ্রহণ করেন, তার কোনো পাতক নেই, তার প্রতি আমি অত্যন্ত প্রীত এবং তিনি আমার প্রাণ সদৃশ। যিনি তুলসীকাষ্ঠ-সম্ভুত মাল্যে ভূষিত হয়ে পিতৃ ও দেবগণের পূজা প্রভৃতি পুণ্য কার্য করেন, তার কোটিগুণ পূণ্য হয়ে থাকে।
তুলসীকাষ্ঠমালাং তু প্রেতরাজস্য দূতকাঃ।
দৃষ্টা নশ্যতি দূরেণ বাতোদ্ধূতং যথা দলং।।১২।।
তুলসীকাষ্ঠমালাভির্ভূষিতো ভ্রমতে ভুবি।
দুঃস্বপ্নং দুর্নিমিত্তঞ্চ ন ভয়ং শত্রুবৎ ক্বচিৎ।।১৪।।
যমদূতগণ তুলসীকাষ্ঠসম্ভূত মাল্য দর্শন করে বায়ুচলিত পত্রের ন্যায় দূর হতে পলায়ন করে। যিনি তুলসীকাষ্ঠ মাল্যে ভূষিত হয়ে বসুধা বিচরণ করেন, কখনো তাঁর দুঃস্বপ্ন, দুর্নিমিত্ত বা শত্রুজনিত ভয় থাকে না। ধারয়ন্তি ন যে মালাং হৈতুকাঃ পাপবৃদ্ধয়ঃ। নরকান্ন নিবর্তন্তে দগ্ধা কোপাগ্নিনা মম।।১৫। যেসকল হেতুবাদী পাপবুদ্ধি লোক তুলসীমালা ধারণ করে না, আমার কোপাগ্নি দ্বারা দগ্ধ হয়ে তারা কখনো নরক হতে প্রতিনিবৃত্ত হয় না। অতএব, তুলসীমাল্য ধারণ করবে।”(স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ড, মার্গশীর্ষমাসমাহাত্ম্য, ৪.৭-১৫)। পদ্মপুরাণঃ তুলসী কাষ্ঠের মহিমা প্রসঙ্গে পদ্মপুরাণে (উত্তরখন্ডে অধ্যায় ২৩) বলা হয়েছে-“তুলসী মাষ্ঠানলে যাদের দেহ দগ্ধ হয় এবং মৃতব্যক্তির সর্বাঙ্গে তুলসীকাষ্ঠ দিয়ে পশ্চাৎ যে ব্যক্তি তাকে দাহ করেন, তারা সকলেই পাপ হতে মুক্ত হয়ে থাকে। তুলসীকাষ্ঠমালাস্তু কণ্ঠস্থাং বহতে তু যঃ।
অপ্যশৌচহপ্যনাচারো ভক্ত্যা যাতি হরের্গৃহম্।।
(পদ্ধপুরাণ, স্বর্গখন্ড, ৪৭.৪৫) যে তুলসীকাষ্ঠমালা কন্ঠস্থ করে বহন করে, সে অশৌচ বা অনাচার হলেও হরির গৃহে (বৈকুন্ঠে) যায়।”যঃ পুনস্তুলসীমালাং কন্ঠে কৃত্বা জনার্দনম্।
পূজয়েৎ পুণ্যমাপ্নোতি প্রতিপুষ্পং গবাযুতম্।।৪৮। ধারয়ন্তি ন যে মালাং হৈতুকাঃ পাপবুদ্ধয়ঃ।
নরকান্ন নিবর্তন্তে দগ্ধা কোপগ্নিনা হরেঃ।।৪৯।।
“যে মানব তুলসীমালা কন্ঠে করে জনার্দনের পূজা করে, সে প্রতি পুষ্পে গবাযুতের (অযুত গোদানের) পুণ্য প্রাপ্ত হয়। যেসকল পাপবুদ্ধি ব্যক্তি নানা কারণ দর্শিয়ে তুলসীমালা ধারণ করে না, তারা হরির কোপাগ্নিতে দগ্ধ হয়ে নরক হতে প্রত্যাবৃত হতে পারে না। নিবেদ্য কেশবে মালাং তুলসীকাষ্ঠসম্ভবাম্। বহতে যো নরো ভক্ত্যা
তস্য বৈ নাস্তি পাতকম্৥৫২৥ তুলসীকাষ্ঠমালাস্তু প্রেতরাজস্য দূতকাঃ। দৃষ্টা নশ্রতি দূতগণ তুলসীকাষ্ঠসম্ভূত মাল্য দর্শন করে বায়ুচলিত শুল্ক পত্রের ন্যায় দূরে অন্তর্হিত হয়।” অতএব, মানুষ্য মাত্রেরই ভগবানকে নিবেদিত তুলসীকাষ্ঠমালা কন্ঠে পরিধান করা কর্তব্য।
Please follow and like us:
error20
fb-share-icon
fb-share-icon20

খুলনা

আরও পড়ুন

গত ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ

  • আর্কাইভ

    বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় জড়িত আসামি তেজগাঁও থানা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল হাসান আটক

    কারওয়ান বাজার এলাকার তালিকাভুক্ত শীর্ষ চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী রাসেল জমাদ্দার ওরফে রাসেলকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ

    ১১টি মামলার আসামি পেশাদার ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী সাইদুলকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ

    বিপিএলে ঢাকা পর্বের শেষ ম্যাচে দিনের দ্বিতীয় খেলায় খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ২০ রানে হেরেছে ঢাকা

    নতুন প্রজন্ম, যারা আমাদের সবচেয়ে বড় আশার উৎস:দিনাজপুরে মির্জা ফখরুল

    আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজী ও দখলদারিত্বের অভিযোগে ২৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আমিন-কে বহিস্কার

    গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকায় স্বৈরাচারী হাসিনার দোসর সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর’র পিএস জুয়েল মোল্লার নাম!

    ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত আনিসুর- সেক্রেটারি শাকিল মনোনীত

    উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপি’র সাবেক প্রচার সম্পাদক’র মৃততে উত্তর বিএনপি’র আহবায়ক আমিনুল এবং সদস্য সচিব মোস্তফা জামান’র শোকবার্তা

    সারিনা আলম কনস্ট্রাকশন এর বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত

    খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারিরীক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতে ‘ফিরোজায়’ যান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

    বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ২২৭ জন প্রার্থী চাকরি ফেরত পেতে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন

    চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) প্রথমার্ধে দেশের রফতানি আয় বেড়েছে ১২.৮৪ শতাংশ

    হৃদরোগ হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে পুলিশ লাইন হাসপাতালে ওষুধ নিতে যাওয়ার পথে বাসের ধাক্কায় মারা গেছেন এক পুলিশ কনস্টেবল

    আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা বিদেশি প্রভুদের সহযোগিতায় ষড়যন্ত্র করে বেড়াচ্ছে:আমিনুল হক

    দেশে মোট ভোটার বেড়ে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জনে দাঁড়িয়েছে:নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ

    অবশেষে বাংলাদেশের জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন কাজী নজরুল ইসলাম

    রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে ১ জন নিহত

    ব্যক্তির যে শক্তি আছে সেই শক্তির কাছে সরকারের শক্তি একেবারে নস্যি:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

    রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কের কারণে আওয়ামী লীগ এক ধরণের সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে:সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

    ইসলামপন্থি সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, ’৭১ এ আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল?:রুহুল কবির রিজভী

    ক্যাপাসিটির নামে হাসিনার সরকার ১৫ বছরে অনেক টাকা নিয়ে গেছে…. প্রায় এক লাখ কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে: ইকবাল হাসান মাহমুদ

    সুপ্রিম কোর্ট বার আয়োজিত বই মেলা আগামী রোববার উদ্বোধন করবেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ

    কুড়িগ্রামে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন

    শিক্ষকতার পাশাপাশি শিক্ষকদের এ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আছে- ডা: সালাউদ্দিন বাবু

    রাণীশংকৈল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণের উদ্বোধন

    রাণীশংকৈলে জাতীয় পার্টির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

    নানা আয়োজনে জাজিরায় ছাত্রদলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

    কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে ৭৫ বোতল ফেনসিডিল সহ ১ মাদক ব্যবসায়ী আটক

    সাবেক এটর্নি জেনারেল প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

    • Dhaka, Bangladesh
      শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫
      SalatTime
      Fajr5:21 AM
      Sunrise6:42 AM
      Zuhr12:03 PM
      Asr3:05 PM
      Magrib5:25 PM
      Isha6:46 PM
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুল হাসান বাবলু
    ই-মেইলঃ dk.kamrul@gmail.com
    copyright @ বাংলাদেশ দিনকাল / বিডি দিনকাল ( www.bddinkal.com )
    বিডি দিনকাল মাল্টি মিডিয়া (প্রা:) লিমিটেড প্রতিষ্ঠান।