ডেস্ক:-তারা শিশু। নিষ্পাপ। তবু জীবন কাটছে কারাগারে। যে বয়সে খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। সেই বয়সে বন্দি জীবন কাটছে তাদের। মাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে দেশের কারাগারগুলোতে মায়ের সঙ্গেই ঠাঁই হয়েছে ৩৪৩টি শিশুর। তাদের অধিকাংশের বয়স এক থেকে ১০ বছর।
বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ার কারণে আদালত ওইসব মায়েদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাদের আইনজীবীরা আদালতের বিচারকের কাছে প্রার্থনা করেন যে, নারী আসামির যে শিশু সন্তান আছে, সেই সন্তানকেও তাদের সঙ্গে কারাগারেও রাখার সুযোগ দিতে। নতুবা শিশু একা থাকতে পারবে না। কান্নাকাটি করবে। পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আদালত এসব শিশুকে কারাগারে মায়েদের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেন। দেশের মোট ৬৮টি কারাগারে ৩৪৩টি শিশু তাদের মায়ের সঙ্গে আছে।
কারাগারে থাকা শিশুদের মায়েরা অধিকাংশই মাদক মামলার আসামি। কেউ চুরির দায়ে কারাগারে আছে। অনেক আসামির দীর্ঘদিন ধরে জামিন হয়নি। কারাগারে যেসব মায়েদের সঙ্গে শিশুরা আছে তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকেন কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও শিশুদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন কারাগারের চিকিৎসক সন্ধ্যাকালীন রাউন্ড দিয়ে থাকেন। কারা অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর ওপর কারাগারের পরিবেশটা প্রভাব ফেলে। কারাগারে বন্দি মায়েদের সঙ্গে শিশুরা থাকলে তাদের সুস্থ সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত কারা-মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. আবরার হোসেন মানবজমিনকে জানান, আদালতের আদেশে বন্দি মায়েদের সঙ্গে ৩৪৩ জন শিশু দেশের বিভিন্ন কারাগারে আছে। কারাগারের মধ্যে তাদের বিশেষ সেবা দেয়া হয়। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যেসব নারী আসামির শিশু সন্তান রয়েছে তাদের দিকে নজর দিয়ে আদালত শিশুসহ তাদের কারাগারে পাঠানোর অনুমতি দেন। যাতে মা কারাগারে থাকাকালীন অবস্থায় শিশুর কোনো অসুবিধা না হয়। যেসব মা শিশুসহ কারাগারে বন্দি রয়েছেন তাদের জন্য বিশেষ ওয়ার্ডের ব্যবস্থা আছে।
সূত্র জানায়, তবে কোনো কোনো কারাগারে শিশুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড রয়েছে। এসব শিশু মায়েদের সঙ্গে নির্ধারিত নারী কয়েদিদের ওয়ার্ডেই ঘুমায়। তবে শিশুদের সারাদিন কাটে খেলার মাঠে ও ডে-কেয়ার সেন্টারে ঘুরে-ফিরে। দেশের কারাগারগুলোতে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের পড়ালেখা এবং অসুস্থ হলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখেছে। তবে অভিযোগ আছে, সব কারাগারে শিশুদের জন্য এমন ব্যবস্থা নেই। এতে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ও কাশিমপুর কারাগারে একাধিক জঙ্গি নারীর সন্তান রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাধারণ নারী কয়েদির ওয়ার্ডে না রেখে ওইসব মা-শিশুকে আলাদা প্রিজন সেলে রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, যেসব শিশুর বয়স এক থেকে ছয় বছর তাদের মায়ের সঙ্গে নারী কয়েদির কক্ষে রাখা হয়। এসব শিশু মা ছাড়া থাকতে পারে না। আর যেসব শিশু মাকে ছাড়া থাকতে পারে তাদের জন্য আলাদা শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। তাদের সেখানে তিনবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কারাগারে থাকা শিশুদের জন্য রয়েছে বিশেষ স্কুল। সেখানে তাদের কারাগারের নারী শিক্ষক দিয়ে পড়ানো হয়। এছাড়াও দেশের একাধিক কারাগারে বন্দি মায়ের সঙ্গে থাকা শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। যাতে তারা বিনোদন পেয়ে থাকে।
সূত্র জানায়, বন্দি শিশুরা যাতে তাদের বাবা ও পরিবারের অন্যান্য স্বজনদের দেখতে পারেন এজন্য তাদের সাপ্তাহিক সাক্ষাতের ব্যবস্থা আছে। ছোট শিশুদের বাবাকে দেখানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী করোনার সময় সাক্ষাৎ বন্ধ ছিল। তবে গত মাস থেকে তা আবার চালু হয়েছে।