আজ শুক্রবার | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১০ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:০৬
দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাকে এ নিয়োগ দেন। এর আগে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ ৬ বিচারপতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন।
নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ৯৫(১) অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ-কে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগদান করিয়াছেন। এই নিয়োগ শপথগ্রহণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।
আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। প্রথমে প্রধান বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। এরপর একে একে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতিও একই প্রক্রিয়ায় পদত্যাগ করেন। আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র তাদের এ পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পদত্যাগকৃত আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি হলেন- বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান বিচারপতি ফুলকোর্ড সভা ডাকেন। সকালে বিষয়টি চাওর হলে ফুলকোর্ড সভা ডাকার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলের নেতৃত্বে আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনসহ আপিল বিভাগ প্রদক্ষিণ করে।
পরে বিক্ষোভ মিছিলটি সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশে সজল বলেন, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা পদত্যাগ না করলে তাদের বাসা ঘেরাও করা হবে। তাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
পরে এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, শনিবার সকালে হঠাৎ করে জানতে পারি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো উপদেষ্টার কারও সঙ্গে আলাপ না করেই প্রধান বিচারপতি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে ফুলকোর্ড সভা ডেকেছেন। আমাদের কাছে তথ্য ছিল, তারা ভিন্ন উদ্দেশ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে ভার্চ্যুয়াল সভা ডেকেছেন। সেই সভায় যোগ দিতে হাইকোর্টের বিচারপতি ও বহু আইনজীবীর মধ্যে জুম মিটিংয়ের লিংক সেন্ড করা হয়। আমি নিজে সকাল ১০টার দিকে লিংক ওপেন করে জয়েন্ট করি। দেখি বহু বিচারপতি যুক্ত রয়েছেন। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলি, শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করছেন। বিচার বিভাগও এর বাইরে নয়। আপনারা যারা যুক্ত হয়েছেন, তারা এই সভা বয়কট করুন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘেরাও করেছে। সভা বন্ধ করতে আমি তাৎক্ষণিক সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলকেও ফোন করে ফুলকোর্ড সভা স্থগিত করার আহ্বান জানাই। পরে আমরা মিছিল সহকারে আপিল বিভাগে যাই। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে সরাসরি সভা বন্ধ করার অনুরোধ করি। তিনি আমাদের বলেন, সভা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে সকাল ১১টার দিকে পুরো সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বৈষষ্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তারা সুপ্রিম কোর্টের চারদিকে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। একপর্যায়ে হাইকোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দেখেছি শত শত শহীদের রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে বানচাল করার জন্য অপশক্তি, পরাজিত শক্তি চেষ্টা করছে। আমরা তাদের প্রতিহত করবো, প্রতিরোধ করবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন যে, আমাদের অ্যাপিলেট ডিভিশনের প্রধান বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে একটা অনলাইন ক্যু করার চেষ্টা করছে। আমরা দেখেছি হাসিনার ছেলে জয় বলেছেন যে, তার মা নাকি পদত্যাগ করেননি। সেক্ষেত্রে যে সরকার গঠন হয়েছে তা অবৈধ। অর্থাৎ সংবিধান লঙ্ঘন করে এ সরকার গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। সুতরাং যার পতন ঘটেছে তার পদত্যাগ করার প্রয়োজন পড়ে না। এতে উত্তাল হয়ে উঠে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে হাইকোর্টে নানান স্লোগান দিতে থাকেন। ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘দফা এক, দাবি এক, বিচারপতির পদত্যাগ’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘শেখ হাসিনার দালালি, চলবে না- চলবে না’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। একপর্যায়ে দুপুরে পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানান সাংবাদিকদের। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আমি পদত্যাগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সন্ধ্যার মধ্যে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবো।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, মহাসচিব কায়সার কামাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল। হাইকোর্ট ভবনের সামনে বারের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:29 PM |
Isha | 6:49 PM |