আজ মঙ্গলবার | ২৩শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | ভোর ৫:২৫
নেতাদের সাজা দিয়ে চলমান আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে দেয়া বিচারিক আদালতের সাজা উচ্চ আদালতের বহাল রাখার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব এই হুশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, ‘‘ এই মামলাগু্লোর রায় দেয়া থেকে বুঝা যায় যে, এই সরকার সম্পূর্ণ রাষ্ট্র যন্ত্রকে দখল করে নিয়েছে, বিচার ব্যবস্থাকে দখল করে নিয়েছে। ফরমায়েসী রায় দিয়ে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চাইছে।এটা আজকের ব্যাপার নয়, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তারা একই কাজ করছে।”
‘‘ আজকে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছে, আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে যে রায় দিয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি যে, এটা একটা ফরমায়েসী রায়। এই ধরনের রায় দিয়ে কোনো দিন গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। জনগন তাদের অধিকার অবশ্যই আদায় করবে।”
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আমান উল্লাহ আমান দম্পত্তির আপিল খারিজ করে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের কারাদন্ড এবং আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানের তিন বছরের কারাদন্ড বহাল রাখার আদেশ দেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টায় শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
মিথ্যা মামলায় নেতৃ্বৃন্দকে সাজার দেয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ সরকার দেশের জনগনকে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে দূরে রাখা, রাজনীতি থেকে দূরে রাখা এবং সত্যিকার অর্থে এখানে যের সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন না হতে পারে, তারা যেন একদলীয় নির্বাচন আবার করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার এসব কাজ করছে। কিন্তু এবার জনগন এটা করতে দেবে না।”
‘‘ এই সব ঘটনা থেকে পরিস্কার হয়ে গেলো এই সরকারের কোনো রকমের শুভ বুদ্ধির উদয় হবার সম্ভাবনা নাই। একমাত্র জনগনের উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করেই আইনের শাসন, গণতন্ত্রের শাসন,গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনকে ফেরত আনতে হবে তাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।”
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল বিপদগামী সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেই থেকে এ্ই দিনকে বিএ্নপি ‘শাহাদাত দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
সকাল ১১টায় শেরে বাংলা নগরে বিএনপি মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালামসহ নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরে বাংলানগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে যান এবং কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন। প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতেও তারা অংশ নেন।
দিবসের শুরুতে ভোরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে।
দলের প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আজকে এমন এক সময়ে আমরা এই মহান নেতার শাহাদাত বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি যখন বাংলাদেশ আজকে সম্পূর্ণভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার যাতাকলের মধ্যে পড়েছে, যখন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, যখন মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, যখন বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করা হচ্ছে…. সেই সময়ে আজকে এই নেতার শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা আমাদের সমগ্র জাতির কাছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।”
‘‘ এবং ১৯৭৫ সালের পরে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র, একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে নতুন করে একটি বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন এবং জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত সফল নেতৃত্বে ‘বোটমলেস বাসকেট’ বাংলাদেশকে বলা হয়েছিলো সেই বোটমলেস বাসকেট থেকে সত্যিকার অর্থেই একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশে করবার যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন, যে ভিত্তি তিনি রচনা করেছিলেন সেই নেতার প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।”
‘‘ দুর্ভাগ্যের বিষয় যে গণতন্ত্রকে জিয়া্উর রহমান পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সেই হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম-লড়াই করেছিলেন, তিনি এখনো এই গনতন্ত্রের জন্য গৃহে অন্তরীন হয়ে আছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব তিনি নির্বাসিত হয়ে আছেন, প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দমন করা হচ্ছে, জনগনেরর অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেই সময়ে এই মহান নেতা শাহাদাত বার্ষিকী আমাদেরকে নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করছে। আমরা আজকে নতুন করে শপথ নিয়েছি যেকোনো মূল্যে আমরা বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো।
‘নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধা’
সকাল ১০টা থেকে শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সমবেত হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিন, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল,মুক্তিযোদ্ধা দল, তাঁতী দল, মতস্যজীবী দল, ড্যাব, এ্যাব, জাসাস, জিসাস, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, জিয়া পরিষদ, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, জিয়া মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন পুস্পস্তবক অর্পন করে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাসির উদ্দিন অসীম, শাম্মী আখতার, নিলোফার চৌধুরী মনি, শামীমুর রহমান শামীম, মীর নেওয়াজ আলী, আমিনুল হক, কাজী আবুল বাশার, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, যুব দলের সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজিব আহসান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নায়াব ইউসুফ, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, উলামা দলের শাহ নেসারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার, এ্যাবের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাছিন আহমেদ, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, এসএম শাহাদাত প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শেরে বাংলা নগরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি মহাসচিব গাবতলী বাস স্ট্যান্ডের সামনে দুঃস্থ ও গরীবদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময়ে আমান উল্লাহ আমান, এসএ ছিদ্দিক সাজু, আমিনুল হকসহ মহানগর নেতৃবৃন্দ ছিলেন।
দক্ষিন ও উত্তরের মোট ৫৭টি স্পটে দুঃস্থদের মধ্যে এই খাবার সামগ্রি ও বস্ত্র বিতরণ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন(ড্যাব) উদ্যোগে দিনব্যাপী বিনামূল্য স্বাস্থ্যসেবা ও ঔষধ বিতরনের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করেছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:22 AM |
Sunrise | 6:42 AM |
Zuhr | 12:04 PM |
Asr | 3:06 PM |
Magrib | 5:27 PM |
Isha | 6:47 PM |