সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার ১৩নং মুলিয়া ইউনিয়নে ‘জায়গা আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৩ টি ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুজন গাইন। ‘জায়গা আছে ঘর নাই’ প্রকল্পে ঘর দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে টাকা নেওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেন তিনি। কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন তা বলে দেওয়ার মাধ্যমে বুঝা যায় ‘জায়গা আছে ঘর নাই’ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এমনকি ঘর দেওয়ার কথা বলে সামর্থ্যবান লোকদের কাছ থেকেও নিয়েছেন টাকা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প ‘জায়গা আছে, ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় নড়াইলে সদর উপজেলায় ৬২ টি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতি ঘর বাবদ সরকার ১ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।
এই প্রকল্পে অনুমোদিত ঘরের তালিকা উপজেলা পর্যায়ে আসার পর ইউপি চেয়ারম্যানরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা থেকে নিজ নিজ ইউনিয়নের তালিকা সংগ্রহ করে কপি দিচ্ছেন মেম্বারদের। এই সুযোগে মেম্বার ও সংরক্ষিত নারী মেম্বাররা তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঘর পাওয়ার সংবাদ দিয়ে ঘর পেতে হলে ২০ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা বলছেন। আর টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না বলে আসছেন।
উপকারভোগীরা তাদের কথা বিশ্বাস করে সুদে এনে বা ধারদেনা করে ঘর বাতিল হওয়ার ভয়ে টাকা দিচ্ছেন মেম্বারদের। মেম্বাররা এই টাকার একটি অংশ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যারদের। এভাবে উপকারভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। এমনকি এ টাকা নেওয়ায় কোনো লুকোছাপাও নেই।
আবার উপকারভোগী অনেকে টাকা না দিতে পারলে মেম্বাররাই অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘর তুলে দিচ্ছেন। এমনকি তালিকায় নাম দেওয়া রয়েছে, তদবির করে আগামীতে ঘর এনে দেওয়া হবে, এমন আশ্বাস দিয়েও অগ্রিম টাকা নেওয়া হচ্ছে প্রায় ইউনিয়নেই।
নড়াইল সদর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের সর্বত্রই এই অবস্থা বিরাজ করার অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘর বরাদ্দ বাতিল হওয়ার ভয়ে দরিদ্র এসব মানুষ মুখ খুলতে চান না। তবে টাকা দেওয়ার কথা অনেকেই স্বীকার করেছেন।
মুলিয়া ইউনিয়নের উপকারভোগী মিরা বিশ্বাস, ও রাজুবালা সিকদার, পঞ্চানন বর্মন, জানান, ঘর দেওয়ার কথা বলে জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দাবি করেন। এ টাকা দিতে না পারলে ঘর দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন। পরে তারা ধারদেনা ও ঋণ নিয়ে তাদেরকে টাকা দেন। সদর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নেই টাকা নিয়ে শুধু দরিদ্রদেরকেই নয়, অনেক অবস্থা সম্পন্নদেরকেও এই প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার সুজন গাইন হিজল ডাঙ্গা গ্রামের সেবিকা শাখারির নামে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত ঘর না পাওয়ার বিষয়ে বলেন,আমি এ কাজের পিআই সি, হলেও টাকা নিয়েছে চেয়ারম্যান। কাঠ খুটি তৈরি হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি ঘরের কাজ শুরু হবে। সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি বিভিন্ন ইউনিয়নে এই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে এ ব্যাপারে নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি কল্যাণমুখী প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। যারা এ প্রকল্পটি নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি।