উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে :-নড়াইলের তিনটি উপজেলার বাজারগুলোতে উঠেছে দেশি আগাম জাতের রসালো লিচু। অনেকে আবার লাভের আশায় আগেভাগেই বাজারে নিয়ে আসছেন অপরিপক্ব লিচু। কিন্তু মৌসুমের নতুন ফল হিসেবে তুলনামূলক একটু বেশি দামেই লিচু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বাজারগুলোতেও লিচুর বেশ চাহিদাও রয়েছে।
ব্যবসায়ী মহল থেকে জানা যায়, আর কয়েক দিন পর বিভিন্ন উন্নত জাতের লিচু বাজারে পাওয়া যাবে। এখন ১০০ লিচু ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে দাম সাধ্যের বাইরে হওয়ায় আগাম লিচু কিনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।
বাজারে লিচুর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের আগাম উপস্থিতি। তবে বাংলা পঞ্জিকা হিসাবে বৈশাখ মাস এখনো এক সপ্তাহ বাকি। সাধারণত ফলের মাস জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে বাজারে লিচু উঠতে দেখা যায়। কিন্তু এবার তার আগেই নড়াইলের বাজারে উঠতে শুরু করেছে লিচু।
এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী বাড়তি লাভের আশায় সময়ের আগেই বাজারের ঝুড়িতে তুলেছে দেশি জাতের আধপাকা লিচু। দাম বেশি, আকারে ছোটো আর স্বাদেও টক মিষ্টি হলেও লিচুর দামটা বেশ তেঁতো।
অনেকে লাভের আশায় আগেভাগেই অপরিপক্ব লিচু বাজারে নিয়ে আসছেন। তবে লিচুর সম্ভাবনাময়ী নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকার লিচুর বাগান কেনা ব্যাপারীরা বলছেন ভিন্ন কথা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, খুব সকালে ব্যাপারীরা বাগান থেকে লিচু পেড়ে খাঁচায় ভরছেন, তুলছেন ট্রাকে। শুধু স্থানীয় বাজারে নয়, এসব লিচু যাচ্ছে বিভাগীয় শহর খুলনা ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। আবার অনেক লিচু চাষি নিজে লিচু পেড়ে নিয়ে আসছেন বাজারে। কেউ খুচরা বিক্রি করছেন, কেউবা দিচ্ছেন আড়তে।
নড়াইল পৌর শহরের মাছিমদিয়া কবর সংলগ্ন একটি লিচু বাগানের ব্যাপারী মহিদুল ইসলাম বলেন, তীব্র গরমের কারণে পরিপক্ব হওয়ার আগেই গাছেই ফেটে যাচ্ছে লিচু। এসব সমস্যার কারণে লিচু চাষিরা অনেকটা কাঁচা অবস্থায় তাদের লিচু বাগানগুলো বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। তিনি এ বছর আড়াই লাখ টাকার লিচু বাগান কিনেছেন। পাইকারি ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে এর দর ৩০০ টাকা।
লিচু পাড়া শ্রমিক মো. মিনারুল ইসলাম জানান, প্রতি ১০০টি লিচু কেনা ও শ্রমিকসহ যাবতীয় খরচসহ মোট খরচ ১৫০ টাকা, পাইকারি বিক্রি ২০০-২৫০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ৫৫ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় লিচুর এই সম্ভাবনাময়ী এ জেলায় মূলত উন্নতমানের জাত হিসেবে পরিচিত বোম্বাই, মোফাজ্জফর, চায়না-থ্রিসহ কয়েক জাতের লিচুর ফলন হচ্ছে। রসালো এসব লিচুর উৎপাদনও বেশি, আকারও বড়।
জেলা শহরের পুরোনো বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ফলের বাজার, রূপগঞ্জ বাজার, লোহাগড়া বাজার, লক্ষ্মীপাশা বাজার ও কালিয়া পৌরশহরের কলেজ রোডের ফলের বাজারসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার এবং সড়কের দুই পাশে বাহারি এ ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ঝুড়ির মধ্যে কিংবা টুলের ওপর সাজানো সবুজ পাতায় মোড়ানো লাল আভার লিচুগুলো এখন থোকায়-থোকায় শোভা ছড়াচ্ছে।
মৌসুমি ফল হিসেবে বেশি দাম দিয়েই ক্রেতারা কিনছেন লিচু। দাম যাই হোক, কেনাবেচায় নেই ভাটা। মাসজুড়ে বাজারে এর উপস্থিতি থাকলেও এ বছর আগেভাগেই বাজারে লিচু উঠতে শুরু করেছে। আগাম বাজারে আসা এসব লিচু নড়াইলের পাতি (দেশীয় জাত) বলছেন ব্যবসায়ীরা। এই দেশীয় জাতের লিচুগুলো একটু টক ও হালকা মিষ্টি।
নির্জনা খানম নামের এক ক্রেতা জানান, ছোট্ট আদরের মেয়ের বায়নার কারণে শহরের বাস টার্মিনাল বাজার থেকে ১০০টি লিচু কিনেছেন ৩০০ টাকা দরে। তবে স্বাদ ও গুণে এখনো লিচু পরিপক্ব হয়নি। কেবলমাত্র বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে লিচু ভাঙছেন। এগুলো দেশি জাতের লিচু। স্বাদেও টক-মিষ্টি। অনেকগুলো খুবই টক।
নড়াইলের পুরোনো বাস টার্মিনাল সংলগ্ন লিচু ব্যবসায়ী সামাদ মল্লিক জানান, ঈদের আগে থেকে বাজারে লিচু আসা শুরু হয়েছে। এগুলো দেশি জাতের গুটি লিচু। তাই আকারে ছোট, স্বাদেও টক। সময়ের আগে নয়, ঠিক সময়েই গাছ থেকে নামিয়েছি। বাজারে পুরোদমে লিচু আসা শুরু হয়নি। যে কারণে বর্তমানে লিচুর দাম একটু বেশি। আগামী দুই সপ্তার মধ্যেই প্রচুর পরিমাণে লিচু বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন সব ধরনের ক্রেতা লিচুর স্বাদ নিতে পারবে।
জানতে চাইলে নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় জানান, লিচু প্রকৃতপক্ষে বাজারে আসার কথা জ্যৈষ্ঠ মাসে। কিন্তু ঈদের বাজারে চাহিদা থাকায় দর বেশি পাওয়ায় ও কালবৈশাখী ঝড়ের কথা চিন্তা করে লিচু চাষিরা অপরিপক্ব লিচুই বাজারে এনেছেন।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরে জেলায় লিচু চাষের পরিমাণ বেড়েছে। ধীরে ধীরে লিচু চাষেও কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। লিচু চাষ করে অনেক কৃষক স্বাবলম্বী হয়ে ওঠায় এবার লিচুতে নীরব বিপ্লব ঘটতে চলেছে। বর্তমানে জেলার ৫৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লিচুর বাগান রয়েছে।