আজ শুক্রবার | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১০ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১:১১
নজরুল ইসলাম মানিক, সাভার ও আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি : ঢাকার আশুলিয়ার নবনীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও আশুলিয়া-ইপিজেড-টঙ্গী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন হাটবাজার, শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য করছে ওসমান নামের এক ব্যক্তি। তবে তিনি এ প্রতিবেদককে মোঠোফোনে জানান, মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলার জন্য তিনি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।
মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তুপে চরম দূভোর্গে পড়েছে পথচারী সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা প্রকাশ্যে দিনে-রাতে ফেললেও নিশ্চুপ সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ প্রতিষ্ঠানটি শুধু দায়সাড়া কাজ সেড়েছেন একটি সাইনবোর্ড দিয়েই। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে যে স্থানে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে ‘ময়লা ফেলা নিষেধ’ মহাসড়কের সেই স্থানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। যার ফলে বাতাসে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে মিশে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ এবং চরম হুমকির মূখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
দিন-রাত কোন না কোন সময় আবাসিক এলাকার ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন এলাকার শিল্প কারখানার বর্জ্য ছোট ছোট ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ভ্যানগাড়ি এবং ট্রাক্টর চালিত ভ্যান দিয়ে মহাসড়কের পাশেই ফেলা হচ্ছে। প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে এসব ময়লা আবর্জনা ফেলা হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও আশুলিয়া-ইপিজেড-টঙ্গী মহাসড়ক ঘুরে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে ওসমান নামের এক ব্যক্তি আশুলিয়ার জিরানী বাজার, কোনাপাড়া, টেঙ্গুরী, গাজীপুর মহানগরীর পানিশাইল, জিরানী বাজার পূর্ব পাশ, মাধবপুর, ডাক প্রশিক্ষণের সীমানা ঘেষা উত্তর ও পূর্বপাশ সহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে আবাসিক এলাকার ময়লা আবর্জনা এনে নবীনগ-েচন্দ্রা মহাসড়কের পাশে ফেলেন। এসব অঞ্চল থেকে ময়লা আনার জন্য বেশ কয়েকজন লোকও নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। তাদের প্রত্যেকের বেতন ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। যেসকল বাড়ি থেকে ময়লা আনা হয় ওই বাড়ি থেকে প্রতি মাসে ২’শ থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করে থাকে ওসমানের লোকজন। এছাড়া রুম প্রতি ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করে উত্তোলন করা হয়।
সরেজমিনে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ি স্ট্যান্ডের উত্তর পাশে, শ্রীপুর উত্তর পাশে, চক্রবর্তী, মোজারমিল এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে এবং আশুলিয়া-ইপিজেড-টঙ্গী সড়কের আশুলিয়া ব্রীজের নীচে ও জিরাব এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তুপ চোখে পড়েছে। ভ্যান গাড়ি সহ ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান দিয়ে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে মহাসড়কের পাশেই ফেলা হচ্ছে। অনেক শিল্প-কারখানাগুলোও তাদের কারখানার ময়লা আবর্জনা বা বর্জ্য নিজস্ব পরিবহনযোগে মহাসড়কের পাশেই ফেলছে।
কথা হয় আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলতে আসা রফিকুল, নাজমুল ও মকবুলের সাথে। তারা জানায়, তারা তিনজনই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন আবাসিক এলাকা (পানিশাইল, জিরানী বাজার পূর্ব পাশ, ডাক প্রশিক্ষণের সীমানা ঘেষা উত্তর ও পূর্বপাশ সহ বিভিন্ন পাড়া) থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে মহাসড়কের পাশেই ফেলেন। এ কাজের জন্য তাদেরকে মাসিক ১২হাজার আবার কেউ ১১হাজার টাকা বেতনে পেয়ে থাকেন। রফিকুল ইসলাম কাজ করেন লোকমানের আন্ডারে। লোকমানই তাদেরকে ময়লা আর্বজনা বিভিন্ন এলাকার বাসা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে মহাসড়কের পাশে ফেলতে বলেছেন বলেও জানায় রফিকুল।
এদিকে, ময়লা ফেলতে আসাতে নাজমুল ও মকবুল জানায়, তারা দু’জনেই মোবারক নামের একজনের আন্ডারে কাজ করে থাকেন। তারা দু’জনেই বেতনভোক্ত।
তাদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, তাদের প্রধান লিডার হচ্ছে ওসমান নামের এক ব্যক্তি। তার কথা মতই সকলেই ময়লা বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে ভ্যান গাড়ি দিয়ে মহাসড়কের পাশে ফেলা হয়।
এব্যাপারে লোকমান হোসেন জানান, ‘আমিতো বেতন ভোক্ত কর্মচারী। ময়লা আবর্জনা মহাসড়কের পাশে কেন ফেলেন এমন প্রশ্নেবর জবাবে তিনি জানান, ‘‘এটা ওসমান জানে। আমরাতো তার আন্ডারে কাজ করি। এটা ওনিই জানেন। ওনার সাথে দেখা করে কথা বলেন।’’
এব্যাপারে অভিযুক্ত ওসমান মোঠোফোনে জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকা গুলোর ময়লা আশুলিয়াস্থ নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পাশে স্তুপ করার বিষয়টি আমি কোন চেয়ারম্যান, সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তা বা সরকারী কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে আলোচনা না করেই ময়লা ফেলছি। ওই এলাকাগুলো থেকে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে গাড়ি লোড করে যারা ওই খানে ময়লা স্তুপ করে তারা প্রত্যেকেই আমাকে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা দিয়ে থাকে। এতে তিনি মাসে ১৫হাজার থেকে ২০হাজার টাকা পেয়ে থাকেন বলে স্বীকার করেন। এই প্রতিবেদক এই টাকা কি চাদাঁ হিসেবে গ্রহন করেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ফোনটি কেটে দেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (মানিকগঞ্জ) মো: গাউস-উল-হাসান মারুফ জানান, মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলার কারণে জনগণের জনস্বার্থ বিঘিœত হয়। ময়লা ফেলার বিষয় নিয়ে আমাদের মন্ত্রণালছ পর্যায়ে, সচিব পর্যায়ে বিভিন্ন আন্ত:মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। স্থানীয় পৌরসভা, বাড়িঘর বা সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে ময়লা ফেলা হয়। বৈঠকে তাদের স্থানীয় সরকার, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা তাদের বলা হয়েছে। তাদের ময়লা ফেলার জয়গা নাই। ময়লা কোথায় ফেলবে ? ময়লা ফেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটা হয়তো একটু সময় লাগবে। ফিক্সড জায়গা হয়ে গেলেই হয়তো রাস্তার পাশে ময়লা ফেলবে না।
তিনি জানান, ‘‘আমাদের অগোচরে ময়লা ফেলে যাচ্ছে। আমরা মাঝে মধ্যে অভিযানে বের হয়ে ভ্যানগাড়িসহ ধরেছি। ভেঙ্গে দিয়েছি। এরপরেও হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাতে তারা আর ময়লা ফেলতে না পারে। আমাদের পাশাপাশি যদি পুলিশ প্রশাসন এব্যাপারে কাজ করে তাদের ধরে শাস্তির আওতায় আনে তাহলে হয়তো রাস্তার পাশে আর ময়লা ফেলবে না বলে তিনি প্রস্তাব করেন।
ছবির ক্যাপশন : এভাবেই মহাসড়কের পাশে ভ্যান গাড়ি দিয়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ছবিটি নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার টক্রবর্তী এলাকা থেকে তোলা।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:42 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:08 PM |
Magrib | 5:29 PM |
Isha | 6:49 PM |