আজ বুধবার | ২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১০:৩২
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- পল্টনের জনসমুদ্রে সরকার পদত্যাগে ‘এক দফা’র আন্দোলনের ঘোষণা দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার বিকালে নয়া পল্টনের সমাবেশে থেকে বিএনপি মহাসচিব এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি তারা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকে আমরা একটা যৌথ ঘোষণা দেবো যার যার জায়গা থেকে। সেই সিদ্ধান্ত.টি হচ্ছে.. যুগপতধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের এক দফার ঘোষণা। এক দফা আর কোনো দফা নাই।”
‘‘ বাংলাদেশের জনগনের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী অবৈধ সরকারের পদত্যাগ… এক দফা এক দাবি…..। কী? ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠন করে তার অধিনে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা।”
‘‘ বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা গায়েবী মামলা প্রত্যাহার তারেক রহমানের মামলাসহ, ফরমায়েসী সাজা বাতিল, সংবিধান রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পূণঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপতধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করার ঘোষণা প্রদান করছে।”
এই যুগপত আন্দোলনের বাইরে যেসব দল রয়েছে তাদেরও সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘‘ আসুন আমরা এক সাথে সমবেত হয়ে আজকে গোটা বাংলাদেশের মানুষ সব যেভাবে এগিয়ে এসেছে, আপনারা এগিয়ে এসে আমরা একটা দুর্বধ্য উত্তাল আন্দোলন গড়ে তুলে এই লুটেরা ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগনের একটা সরকার জনগনের একটা রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারি।”
ফখরুল বলেন, ‘‘ সেই লক্ষ্যে আপনারা যার কথা শুনার জন্য অপেক্ষা করেন সবসময় তিনি(তারেক রহমান) শ্লোগান দিয়েছেন কি? বাংলাদেশে টেক ব্যাক করতে হলে কি করতে হবে? যদি না শুনে কথা ফয়সালা হবে কোথায়? রাজপথে। আমাদের কথা হচ্ছে পরিস্কার। আমাদের কথা ও জনগনের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি এই যে কর্মসূচি দিয়েছে এটা প্রাথমিক কর্মসূচি।”
‘‘ আমরা আবারো আহ্বান জানাচ্ছি এই অবৈধ অসাংবিধানিক লুটেরা কর্তৃত্ববাদী সরকারকে যে, এখনো সময় আছে এই ঘোষণার পরে পরেই পদত্যাগ করুন। অন্যায় বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস পরিস্কার করে বলে দেয় তখন কিন্তু পালাবার পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
দুপুরের দিকে হটাৎ করে বৈরী আবহাওয়া কিছুটা বিগ্ন সৃষ্টি করে । তারপরেও নেতা কর্মীরা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল।
কর্মসূচি :
মির্জা ফখরুল কর্মসূচি ঘোষণা করেন বলেন, ‘‘ এই একদফার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১৮ জুলাই ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে মার্চ ও পদযাত্রার কর্মসূচি। এই মার্চ ও পদযাত্রার মধ্য দিয়ে তাদের(সরকার) পতন তরান্বিত হবে।”
‘‘ ঢাকা মহানগরীতে হবে দুইদিন। ১৮ জুলাই সকাল ১০টায় গাবতলী হতে যাত্রাবাড়ী শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা এবং ১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উত্তরার আবদুল্লাহপুর হতে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা।অন্যান্য মহানগরী ও জেলায় একই পদযাত্রা ও মার্চ অনুষ্ঠিত হবে।”
‘এটা প্রাথমিক কর্মসূচি’
মির্জা ফখরুল হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘ এটা হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক কর্মসূচি।এরপরেও আঙ্গুলে ঘি না উঠে তাহলে কি করে উঠাতে হয় এদেশের মানুষ তা জানে।”
‘‘ আজকে শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে যেভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে সমবেত হয়েছে, আগামী দিনগুলোতেও ইনশাল্লাহ ১৮ তারিখ ১৯ তারিখ শুধু নয় তারপরে প্রয়োজনে আপনাদের প্রত্যাশিত কর্মসূচি দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট অবৈধ লুটেরা সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।”
সরকারের অপশাসন, দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা ও দ্রব্যেমূল্যে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।তিনি বলেন, ‘‘ ইনশাল্লাহ আমাদের বিজয় হবেই হবে।”
প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিরপেক্ষ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। নইলে এর পরিণতি শুভ হবে না বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব জানান, এই কর্মসূচি বাইরে দলের অঙ্গসংগঠনের ঘোষিত তারুণ্যে সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিও চলবে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা ২টায় এই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের মূল ব্যানারে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছবির পাশে লেখা – ‘গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপত ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ১ দফা যৌথ ঘোষণা’।
বেলা ২টায় যখন সমাবেশ শুরু হয় তখন ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল নাইটেঙ্গল মোড় পর্যন্ত পুরো সড়ক জুড়ে মানুষের তিল পরিমান ঠাই ছিলো। গুড়ি গুড়ির বৃষ্টির মধ্যে লাল-সবুজ-হলুদ টুপি পড়ে নেতা-কর্মীরা ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’, ‘ দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে দেখা গেছে। সকালের দিকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস দেশাত্মকবোধ গান পরিবেশন করে।
সমাবেশ বেলা ২টায় শুরু হলেও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নেতা-কর্মীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে। মঞ্চ থেকে নেতা-কর্মীদের স্বাগত জানায়। সমাবেশ শুরুর আগে তিন দফা বৃষ্টি হলেও নেতা-কর্মীরা ভিজে ভিজে এই সমাবেশে থাকে।
দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি ট্রাক একত্রিত করে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। লাগানো হয়েছে শতাধিক মাইক। মঞ্চের চারপাশে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশের পাশাপাশি বিকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রমঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট এবং এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ যুগপত আন্দোলনের এক দফার ঘোষণা দেয়।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গোপীবাগ মাঠে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ থেকে ১০ দফা ঘোষণা করেছিল বিএনপি। টানা ৭ মাস পর সরকার পদত্যাগের একদফার ঘোষণা দিলে বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ আমরা যখন সমাবেশ করছে তখন ওরা শান্তি মিটিং করছে। যারা দেশে খুন-গুম করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে তারা এখন শান্তি মিটিং করে। হিন্দিতে একটা কথা আছে, ৭শ বিড়াল মেরে হজে যায়…।
‘‘ আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, আর লগি-বৈঠার ঘটনা ঘটিয়ে, অশান্তি সৃষ্টি করে, গুম-খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে।”
স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ যারা আমাদের নেতা-কর্মী, সাধারণ জনগনের মন কেড়ে নিয়েছে সাথে সাথে কোনো আপোষ নাই। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। যারা যাবে তাদেরকেও জবাব দিতে হবে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ পত্রিকায় উঠেছে বিভিন্ন জেলার ডিসিদের বদলি করা হয়েছে। কারা হয়েছে? যারা মন্ত্রী, সচিব ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এই পদায়নের মাধ্যমে আমরা সব নাম জেনে গেছি।”
‘‘ আমরা স্পষ্পভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এসব ডিসি-এসপিদের কেউ ওই পদে থাকতে পারবেন না। বিচার বিভাগকেও সরকার দলীয়করণ করেছে। সরকার এখন ওদেরকে দিয়ে বিরোধী দলের মিথ্যা মামলাকে তরান্বিত করতে চাচ্ছে। আমরা বলতে চাই সাবধান… আপনারা সরকারের ওই ভোট চুরির প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত হবেন না।”
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘‘ জনগন আজকে রাস্তায় নেমে এসেছে। শেখ হাসিনার পায়ের নিচে মাটি নেই। এই সরকারের ক্ষমতায় আর সুযোগ নেই।”
‘‘আজকে সমাবেশে আসতে গাবতলী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়া হয়েছে। এই বাধা দিয়ে সমাবেশে জনস্রোত ওরা ঠেকাতে পারেনি। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই এই সরকারের বিদায় হবে। নেতা-কর্মীরা আর এই সরকারের বিদায় ছাড়া ঘরে ফিরে যাবে না।”
ঢাকা উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসে জাকির হোসেন রোকন, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির, ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহজাদা মিয়া, লুতফুর রহমান খান আজাদ, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, খন্দতার আব্দুল মুক্তাদির, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স,রিয়াজ উদ্দিন নসু ,বিলকিস জাহান শিরিন , শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সেলিম ভুঁইয়া, নাজিম উদ্দিন আলমসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ উপলক্ষে নয়া পল্টন সড়কের বিভিন্ন গলিতে ব্যাপক পুলিশ ও সাদা পোষাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পাহারা ছিলো।
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:22 AM |
Sunrise | 6:42 AM |
Zuhr | 12:05 PM |
Asr | 3:07 PM |
Magrib | 5:28 PM |
Isha | 6:48 PM |