আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১২:৫৯
শায়রুল কবির খানঃ- শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দাম্ভিকতার সঙ্গে এ বছরের ৭ জানুয়ারি ডামি প্রহসনের একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করলো। নির্বাচনে ৩০০ আসনের ঘোষিত ২৯৮টির মধ্যে ২২২টিতে নিজেদের নামে ঘোষণা করেছে। দুই-তৃতীয়াংশের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জনগণকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে চতুর্থবার সরকার গঠন করেছিল।
নিজেদের সাজানো নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৪টি দলের একজনও বিজয়ী হয়নি। এর মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবার জামানত হারায়। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ১১, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং কল্যাণ পার্টি থেকে ১ জন করে বিজয়ী ঘোষণা করে। ঘোষণায় বিজয়ী ৬২ জন ডামি স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা।
এই নির্বাচন শেষে দেশে একটি একদলীয় উত্থানের আশঙ্কার মধ্যে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান হয়। ফলে দলের ও সরকার প্রধানের গণভবন থেকে চলে যেতে হলো। লক্ষ-কোটি নেতাকর্মীর রাজনৈতিক জীবন হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়ে তিনি চলে যেতে বাধ্য হলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানালেন, নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪১.৮ শতাংশ। তার এই তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তখনই দেশে বিদেশে প্রশ্ন উঠেছিল। ডামি ও প্রহসনের একতরফা নির্বাচনে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী; নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা; নির্বাচনে সব পক্ষ; রাজনীতিবিদ-সুশীল সমাজের প্রতিনিধি; নির্বাচনে বিশেষ করে দীর্ঘ নৈতিকভাবে পরাজিত আওয়ামী শাসনে মিডিয়ার ভূমিকা; নির্বাচনের ব্যাপারে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের প্রতিক্রিয়া; প্রতিবেশী ভারতের ভূমিকা; চীন-রাশিয়ার আগ্রহ; পশ্চিমা দেশসহ মুসলিম দেশগুলোর ভাবনা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও তার কর্ম-পরিকল্পনা।
এসবের নিখুঁত পর্যালোচনার মূল্যায়নে তৈরি হবে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সুযোগ। তৈরি হবে রাজনৈতিক দলের যোগ্যতাসম্পন্ন নেতৃত্বের সম্ভাবনা। এখন সততার সঙ্গে চূড়ান্ত ধৈর্যের পরীক্ষার বিকল্প নেই।
আওয়ামী লীগের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে সাজানো, ডামি ও প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ হয়, যা আখেরে রাখতে পারেনি। তা যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে গেলো। তার পরিণতি আগামীর সবার জন্য শিক্ষা।
আওয়ামী লীগ কতটা অদূরদর্শী হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের প্রতিপক্ষ বানিয়েছিল। এখন প্রয়োজন তার ক্ষতচিহ্ন মুছে যত দ্রুত সম্ভব জনগণের কল্যাণে গড়ে তোলা; রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা; প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে গড়ে তোলা; নির্বাচনি ব্যবস্থা স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা। যে নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
সেই নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত তৈরি করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। বিনা ভোটে নৈতিকভাবে পরাজিত সরকার কখনও পারে না। ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার দীর্ঘ গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রামে ছিল বিএনপি, যার নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।
তাদের সার্বিক দিকনির্দেশনা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমন্বয়ে “যুগপৎ” আন্দোলনে শরিক দল ও জোটগুলোর আহ্বান ছিল একতরফা, ডামি ও প্রহসনের নির্বাচনে ভোট বর্জনের, যা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিল। এটি আগামীর পথচলায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রেরণার চালিকাশক্তি হয়ে থাকবে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগ যুবলীগসহ পুলিশের হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন, গুম-খুন থেকে নাগরিকদের পরিত্রাণ পাওয়া ছিল সবচেয়ে জরুরি। সেজন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুলিশের সহনশীল আচরণ। আদালতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। বিরাজমান রাজনৈতিক অনৈক্য সংকট কাটাতে বর্তমান সরকারের গঠনমূলক উদ্যোগ নির্বাচিত সরকার কার্যকর সমাধানে আনতে পারবেন।
জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে আমি প্রত্যাশায় রেখে বলতে চাই, রাজনৈতিক শক্তিই স্থায়ী সমাধানের চালিকা শক্তি।
লেখক: সদস্য, মিডিয়া সেল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি); রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |