আজ বৃহস্পতিবার | ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |২রা রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:০৩
আক্তারুজ্জামান বাচ্চু:- গ্রীক দার্শনিক এরিস্টোটল বলেছেন, “উংকৃষ্ট জীবন লাভের জন্য কোনো সমাজের সংগ্রামের নামই রাজনীতি।”
যদিও বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন! তারপরেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে যে ক’জন আদর্শিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আছেন, তাঁদের মধ্যে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অন্যতম। বর্তমান অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শাসকের কবল থেকে মুক্ত করে একটি গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত কল্যাণমূখী রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল তাঁর রাজনৈতিক জীবন। বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক অত্যাচার সহ্য করেও আপোস করেননি! করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন আইসিইউতে রিজভী ভাই!
রাকসুর ভিপি ছিলেন রিজভী আহমেদ। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী রেল ষ্টেশনে গুলিবিদ্ধ হন । গুলিতে খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তখন থেকেই নানা শারিরীক সমস্যায় ভোগেন, পায়ে রড ঢুকানো, এক পা একটু ছোট হয়ে গেছে, হাঁটেন লাঠির সাহায্য নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে! গ্রেফতার, ৩৫ দিন রিমান্ডে থাকাসহ নানা নির্যাতন সয়েও বিএনপির চরম দুঃসময়ে যখন কথা বলার নেতা মেলেনা, তখনো দল ও দেশের পক্ষে সরকারের জনস্বার্থবিরোধী নানান ইস্যুতে সরব থাকেন রিজভী আহমেদ।
১/১১ এর সেনাশাসিত মঈনউদ্দিন-ফখরউদ্দি সরকারের সময় তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিএনপি আহুত হরতালে রিজভী ভাই দলীয় কার্যালয়েই থাকতেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল-সপু-বাবু কমিটির আমি তখন দফতরের দায়িত্বে। সারাদেশে হামলা-মামলা-গ্রেফতারের খবরা-খবর সংগ্রহ করে ব্রিফিংয়ের আগে সব তথ্য দেয়ার জন্য দলীয় নির্দেশে আমাকেও দলীয় কার্যালয়েই থাকতে হতো। রিজভী ভাই রাতে তখন মরহুম মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন সাহেবের খাটে ঘুমাতেন, আমি মহাসচিবের রুমের সোফায়, বেলাল ভাই কনফারেন্স রুমের টেবিলে, আমিনুল ভাইসহ আরও দুই একজনও মাঝে মাঝে থাকতো। রিজভী ভাই রাতে খুব একটা ঘুমাতেন না, ব্যাকপেইনের জন্য আমারও ঘুমাতে কষ্ট হতো! উনি ফজরের আগেই উঠে যেতেন। ভোরবেলায়ই কিছু নেতা-কর্মী চলে আসতো, আমরা রিজভী ভাইয়ের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে মালিবাগ মোড় ঘুরে দলীয় কার্যালয়ে নিচে এসে রিজভী ভাই বক্তব্য দিতেন, মাঝে মাঝে মহাসচিব স্যারসহ অন্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দও আসতেন। পরবর্তীতে পুলিশের বাধায় মিছিল নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত, এক পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই আটকে দিত।
৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলীয় কার্যালয়ের দফতরে গ্লাস দিয়ে আটকানো ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি বাই ৩ ফুট ৫ ইঞ্চি রুমে আড়াই ফুট বাই ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি খাটে আবদ্ধ জীবন, সামনে টেবিলে স্তুপাকৃত কয়েক’শ বই, ওয়াল হ্যাংগারে ঝুলানো কাপড়-চোপড়! পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিলাসিতাহীন জীবনকেই বেছে নিয়েছেন রিজভী ভাই। সারা দেশ থেকে আসা নেতা-কর্মীদের দেখা-সাক্ষাৎ , কথা শোনা, আর ম্যাডামের মুক্তির দাবীতে প্রায়ই ২০-৫০ জনের ঝটিকা মিছিল! শুরুতে স্বল্প সংখ্যক নেতা-কর্মীসহ রিজভী ভাইয়ের মিছিল নিয়ে অনেকেই সমলোচনা করতেন! কিন্তু রিজভী ভাইয়ের অদম্য ও দৃঢ়চেতা ভূমিকায় একে একে অনেকেই যুক্ত হতে থাকায় এক সময় হাজারো নেতা-কর্মীর পদভারে খালেদা জিয়ার মুক্তির মিছিলে রাজপথ প্রকম্পিত হতে থাকলো রিজভী ভাইয়ের নেতৃত্বে।
একবার শরীর খুব খারাপ হয়ে গেল! কিছু খেতে পারেন না, পেটের তীব্র ব্যথায় কুকড়ে উঠেন! কয়েকদিন স্যালাইন চললো, অবস্থা খারাপ দেখে ডাঃ রফিক ভাই অ্যাম্বুলেন্স পাঠালেন, আমি ও তুষার হাসপাতালে নিয়ে গেলাম!
করোনাকালীন সময়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী আদেশে বাসায় ফেরার পরদিন নিজ বাসায় ফেরেন রিজভী ভাই। নিয়মিত অফিসে আসা, মিটিং-মিছিল, নেতা-কর্মীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ চলে সমান্তরালে। জ্বরসহ নানা অসুস্থতা নিয়েও থেমে নেই! একদিন ভাই বললো, জ্বর নিয়েই আজকে তিনদিন সব প্রোগ্রাম করে যাচ্ছি! আমি বললাম, ভাই একটু রেস্ট নেন। উনি শোনলেন না! প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক দলের প্রোগ্রাম শেষে বুকে ব্যাথাসহ অসুস্থতা বোধ করায় ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। হার্টে ব্লক ধরা পড়লো। অনেকে বললেন, রিজভী ভাই আর ফিরবেন না! রিং পড়ানো হলো। আল্লাহর রহমতে রিজভী ভাই আবার ফিরে এলেন। দলীয় কাজ-কর্মে নিয়মিত হলেন। এরই মধ্যে উনার স্ত্রী আরজুমান আরার করোনা আক্রান্ত। উনার স্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠলেন।
১৬ মার্চ রিজভী ভাই করোনা আক্রান্ত হলেন। ১৭ মার্চ স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো । ১ এপ্রিল শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এখনো আইসিইউতে আছেন। বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি নিজেও একটু অসুস্থ! এদিকে রিজভী,সোহেল ভাইসহ অনেকেই করোনা আক্রান্ত! প্রতিটি দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায়। প্রায়ই ডাঃ রফিক ভাইকে ফোন দিয়ে রিজভী ভাইয়ের শারিরীক অবস্থার খোঁজ নেই, দুশ্চিন্তা যেন কিছুতেই কাটে না!
এক সাবেক ছাত্রনেতা, পরবর্তীতে এম. পি. হয়েছিলেন, দলীয় কার্যালয়ের রিজভী ভাইয়ের ছোট রুমে একদিন বসে গল্প করছেন। এক সময় তার হাতে থাকা রোলেক্স ঘড়ি দেখিয়ে রিজভী ভাইকে বললেন, ভাই এই রোলক্স ঘড়িটা আমার খুব সখের! দাম ৫০ লাখ টাকা! পরে রিজভী ভাই আমাকে একদিন এই গল্প বলে বললেন, শোনো আমি ছাত্র রাজনীতি করাকালীন ওকে একশ বা দেড়শ টাকা দিয়েছি রাজনীতি করার জন্য! আজকে তার ৫০ লাখ টাকার শখের রোলেক্স ঘড়ি, প্রাডো গাড়ি ছাড়া চলে না ! আমরা রাজনীতিটাকে ব্রত হিসাবে নিয়েছি। কেউ একটা দামী জামা দিলে নিজে না পড়ে অন্যকে দিয়ে দেই! মানুষ কি বলবে ? এই হলেন রিজভী আহমেদ!
ভাই আপনি ৫০ লাখ বা এক কোটি টাকার রোলেক্স ঘড়ি পড়া, প্রাডো গাড়িতে চড়া বা ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ানোর জন্য রাজনীতি করেন না! দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আপনার ব্রত পালন শেষ হয়নি এখনো! মানুষের দোয়ায় আর আল্লাহর অসীম মেহেরবানিতে ফিরে আসুন রিজভী ভাই আপনার চিরচেনা রাজপথে !
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:21 AM |
Sunrise | 6:41 AM |
Zuhr | 12:02 PM |
Asr | 3:04 PM |
Magrib | 5:24 PM |
Isha | 6:44 PM |