আজ বৃহস্পতিবার | ২৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |১২ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:২২
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরার ঈশা খাঁ অ্যাভিনিউয়ের ৬নং সেক্টরের নাহার ভবনের ৬ তলায় একটি ফ্ল্যাট কিনে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু সেলিনা নাসরিন সুইটি। বেশ কয়েক বছর ধরেই ফ্ল্যাটটি দখলের চেষ্টা করছেন এই প্লটের মালিক রিয়াদ আহম্মেদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) কেবিন ক্রু সুইটি অভিযোগ করে বলেন, ‘১২ বছর ধরে তিনি এই ফ্ল্যাটে থাকছেন। তারা স্বামী মো. সোহেব হার্টের রোগী। সম্প্রতি তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর অফিসের কাজে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এই সুযোগে রিয়াদ সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযোগ দেন এবং তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় বাসায় তার ১৫ ও ১০ বছরের দুটি শিশুসন্তান ছিল।’
সুইটি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ। আমার স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। ফ্ল্যাট কেনার কারণে আমি ভিকটিম হয়েছি। এ ছাড়া এখন রিয়াদ হুমকি দিচ্ছেন আমি যদি ফ্ল্যাট ছেড়ে না দিই তবে আমি ও আমার সন্তানদের হত্যা করা হবে।’
সুইটি জানান, হত্যার হুমকির বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যে উত্তরা সেনাক্যাম্পে ও উত্তরা পূর্ব থানার ওসিকে জানিয়েছেন। সুইটি তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে একটি থানায় একটি জিডিও করেছেন।
তিনি জানান, পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ আমার পরিবারকে নিরাপত্তা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
রিয়াদের বিষয়ে সুইটি আরও জানান রিয়াদ, তার মা, বোন ও এক ভাই প্লটের মালিক। তার বাবা আব্দুল ফজল চৌধুরী এই প্লটটি সরকারিভাবে লিজ পেয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সূত্রে তারা জমির মালিকানা পান এবং পরে দি আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে জমিটি ভবন নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়। এছাড়াও রিয়াদ গত দশ বছর ধরে কোনো সার্ভিস চার্জ দেয় না। গত কয়েকদিন আগে আমাদের বিল্ডিং এর একটি ফ্ল্যাট জোর করে দখল করে।
তিনি বলেন, ‘ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ মিয়ার কাছ থেকে ২০১১ সালে প্রথমে আমার স্বামী ফ্ল্যাটটি কিনতে চুক্তিবদ্ধ হন। পরে ২০১৪ সালে আমরা ফ্ল্যাটটি বুঝে পেয়ে এখানে বসবাস শুরু করি। এখানে গত ১২ বছর ধরে আমরা বসবাস করছি। এরপর থেকে শুনতে থাকি এই ভবনে আমারটাসহ অন্য ফ্ল্যাটগুলোতেও মালিকানা সংক্রান্ত ঝামেলা রয়েছে। ডেভেলপারের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনলেও প্লটের একাংশের মালিক রিয়াদ দাবি করেন, তিনি কোনো জায়গা ডেভেলপার কোম্পাটিকে দেননি। তিনি নিজেও এই ভবনের ৮ তলার বাসিন্দা। এখন এই ফ্ল্যাটটি দখল করার জন্য আমাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ফ্ল্যাটের জন্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা তিনি ওই ডেভেলপার কোম্পানিকে পরিশোধ করেছেন বলেও জানান।’
দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সালেকিন জানান, ফ্ল্যাট কিনে তিনিও বিপাকে পড়েছেন। তারাও কাগজপত্র এখনো বুঝে পাননি। এ নিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির মালিক সাইফের সঙ্গে তাদের কয়েক দফা মিটিং হয়েছে। কোম্পানির মালিক জানিয়েছেন, প্লটের এক অংশের মালিক রিয়াদ মামলা করেছেন বলে জটিলতা হচ্ছে।
এ ছাড়া ৬ তলায় থাকা সুইটির পরিবারকে হয়রানি করছেন। আমার ও সুইটির ফ্ল্যাটটিও দখলে নিতে চাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ডেভেলপার কোম্পানির মালিক মো. সাইফ বলেন, ‘রিয়াদ ও তার পরিবার এই ভবনেই থাকেন। ২০১০ সালে এই জমিটি ভবন নির্মাণ করার জন্য রিয়াদসহ তার মা, বোন ও ভাইয়ের কাছ থেকে নেওয়া হয়। তার পরিবারের অন্যরা ঝামেলা না করলেও তিনি নিজেই বিভিন্ন মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করছেন ও ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে জটিলতা সৃষ্টি করছেন। তবে আমরা চেষ্টা করছি যারা ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা যেন প্রতারণার শিকার না হন।’
তিনি বলেন, ‘এই জমির অন্য মালিকরা কোনো সমস্যা করছেন না। রিয়াদ বিভিন্ন সময়ে টাকা দাবি করে ফ্ল্যাটের ক্রেতা ও আমাকে হয়রানি করছেন। সম্প্রতি ৬ তলায় সোহেবকে তিনি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি এই বিষয়টি সমাধানের জন্য কয়েক দফা মিটিং করেছি। সমাধান না হলে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিয়াদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সুইটি প্রাণনাশের যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা। আমার সমস্যা ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে, যারা ফ্ল্যাট কিনেছেন তাদের সঙ্গে নয়।’
তিনি বলেন, ‘যারা ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা ভুল করেছেন। তারা একটি কাগজও দেখাতে পারবেন না। বায়নার কাগজ ছাড়া তাদের কিছু নেই। তাদের উচিত ছিল খোঁজ-খবর নিয়ে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী কেনা। ডেভেলপার কোম্পানি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এর দায় আমি নেব না।’
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডেভেলপার কোম্পানির মালিক মো: সাইফ থেকে ফ্ল্যাট কিনে বিপাকে কেবিন ক্রু পরিবার।এই দিকে জায়গায় মালিক রিয়াদের প্রতিহিংসার শিকার হন স্বামী!
মামলা সূত্রে জানা যায়, উত্তরার ৬ নং সেক্টরের ৬ কাঠার ওই প্লটটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ পান অবসরে যাওয়া যুগ্ম সচিব দেওয়ান আবুল ফজল চৌধুরী। আবুল ফজলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী নুরুর নাহার, কন্যা রুমানা চৌধুরী, দুই পুত্র নিজাম চৌধুরী ও রিয়াদ আহম্মেদ চৌধুরী ওয়ারিশ অনুযায়ী মালিকানা পান। পরবর্তীতে ২০১০ সালে দি আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার্স লিটেডেট নামের ডেভেলপার কোম্পানিকে ১০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য জমিটি দেওয়া হয়। এই ভবন নির্মাণের জন্য অন্য তিন ওয়ারিশের সম্মতি থাকলেও রিয়াদ জটিলতা তৈরি করেন ও কোর্টে একটি মামলাও করেন। তবে মামলার তোয়াক্কা না করে জোরপূর্বক এই জমিতে তিন বছর সময় নিয়ে ভবন নির্মাণ করেন ডেভেলপার কোম্পানি। পরে মামলার বিষয়টি গোপন করেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে অনেকের কাছে। এখন ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্রের মেয়াদ ও টাকা পরিশোধ শেষ হলেও কাউকে এই কোম্পানি ফ্ল্যাটের কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। ফলে তৈরি হয়েছে জটিলতা, বিপাকে পড়েছেন এই ভবনে ফ্ল্যাট কেনা সাতটি পরিবার।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 4:54 AM |
Sunrise | 6:12 AM |
Zuhr | 11:43 AM |
Asr | 2:51 PM |
Magrib | 5:13 PM |
Isha | 6:31 PM |