নড়াইল জেলার আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করা এবং সবার জন্য আইনের ‘সমান অধিকার’ প্রতিষ্ঠার যে ব্রত নিয়ে পুলিশ সুপার হিসেবে এসেছিলেন জসীম উদ্দীন পিপিএম (বার) তার সমাপ্তি টানার সময় এসে গেলো অবশেষে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর নিয়ম মেনে, সকল আবেগের ঊর্দ্ধে উঠে বিদায় নিতে যাচ্ছেন নড়াইল জেলার সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রজাতন্ত্রের এই কর্মকর্তা।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়েও শুধু নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে যে মানুষটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে এসেছিলেন মানুষের অনেক কাছে, তার বিদায়ে নড়াইলবাসী আবেগতাড়িত। তিনি নিজেও কী নন? কী করে গেলেন, আরও কী করতে পারতেন কিংবা আর কী করার স্বপ্ন ছিলো তার। নড়াইলে আশার পর নড়াইল জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল। অন্যান্য জেলার চাইতে এখানে রাজনৈতিক সহমর্মিতা উল্লেখ করার মতো। তেমন কোন বাঁধা বিঘন নেই। এ জেলার সাধারণ মানুষ, পুলিশ অফিসার ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের কল্যানে যে সব কাজ করলে ভাল হয় তাই করার চেষ্টা করেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুলিশিংয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। পুলিশ যত বেশি মানুষের কাছাকাছি যাবে তত বেশি ভাল হবে। সামাজিক জীব হিসেবে আমিও চেষ্টা করেছি মানুষের কাছাকাছি যেতে, সু-সম্পর্ক গড়ে তুলতে। যার অংশ হিসেবে জেলায় কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করেছি। প্রায় প্রতিটি এলাকায় গিয়ে সরাসরি মানুষের সাথে মিশেছি। সাধারণ মানুষ কোন বাঁধা বিঘ্ন ছাড়াই আমার অফিসে আসতে পেরেছে, সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পেরেছে এবং তাদের সমস্যার সমাধানও পেয়েছে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যখন দেখেন কোন সিদ্ধান্ত ব্যক্তিস্বার্থে নেয়া হয়েছে, তখনই তারা বাড়াবাড়ি করেন। আর যখন তারা দেখেন আইনকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তখন আর সেটা সম্ভব হয় না। আমি চেষ্টা করেছি রাজনৈতিক ইস্যুগুলো আইনকে সামনে রেখে সমাধান করতে। ফলে খুব বেশি ছাড় দিতে হয়েছে বলে আমি মনে করিনা।
পুলিশ একক ভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। তাই সাধারণ মানুষ, জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের সাথে সু-সম্পর্ক রেখেই কাজ করতে হয়। আমি চেষ্টা করেছি সু-সম্পর্ক রেখে আইনের মাধ্যমেই সমাধান খুঁজতে।
যেখানে পাচ্ছি সেখানে যোগদানের পর পরিকল্পনার কথা ভাববো। স্বপ্নতো আছেই। আমি যখন সেখান থেকে অন্য কোথাও বদলি হবো, তখন তারাও যেন আফসোস করে বলেন “ইস, আমাদের পুলিশ সুপার বদলী হয়েছেন!।
“কোনদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে-বসন্ত বাতাসে-অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস” সবশেষে সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন বিদায়ী এই পুলিশ সুপার।