আজ বৃহস্পতিবার | ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৬:২৯
নিজস্ব প্রতিবেদক :-‘বাংলাদেশের জনগণ কারো প্রভুত্ব স্বীকার করবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ ফকির আলমগীরের(প্রয়াত গণসঙ্গীত শিল্পী) একটা চমৎকার গান আছে… ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে নয়’। আমরা রক্তের দাম দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। আমরা করো দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই।”
‘‘ আজকে সেই বোধ নিয়ে রুখে দাঁড়ান… আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিশ্চয়ই সেই বিষয়গুলো তারা দেখবে, দেখেছে অতীতে। আর কোনো দেশ যদি আমাদেরকে মনে করে যে, আমাদের ওপরে প্রভুত্ব করবে… বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করে নাই… মোগল আমলেও করেনি, বৃটিশ আমলেও করেনি, পাকিস্তান আমলেও করেনি, এখনো করবে না।”
তরুণ সমাজকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি বৃদ্ধ মানুষ হয়ে গেছি… হাফিজ(হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম) ভাই আমার চেয়েও বড়। আমরা এখনো লড়ছি, কথা বলছি, লড়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা এখনো বিশ্বাস করি, এই দেশকে পরাধীন করে রাখার ক্ষমতা কারো নেই। আমরা বিশ্বাস করি এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী একটা রেজিম একটা শাসকগোষ্ঠি যারা আজকে জোর করে, কলা-কৌশল করে, বিভিন্ন নাটক করে ক্ষমতা দখল করে আছে তাদেরকে একদিন চলে যেতেই হবে।”
‘‘ সেজন্য বলি, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে… মানুষকে সঙ্গে নিয়ে না নামলে আপনারা জয়ী হতে পারবেন না। সেই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কিছুক্ষন আগে এখান দিয়ে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা গেলেন না… এরকম শ্রমিক ভাইদেরকে নামাতে হবে। এই রকম সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ভাইদেরকে আনতে হবে। সমস্ত জায়গা থেকে মানুষ উঠে আসবে সেইদিন হবে সত্যিকার অর্থেই সফল গণঅভ্যুত্থান, সফল বিস্ফোরণ… বিজয়।”
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ হয়। সমাবেশের ব্যানারে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন’ এরকম কথা লেখাও ছিলো।
নয়া পল্টনের কার্যালয়ের ফুটপাতের একপাশে সড়কে এই সমাবেশ হয় ছোট পরিসরে।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর গ্রেফতারের পর সাড়ে তিন মাস পর মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান বিএনপি মহাসচিব। এরপর গত শনিবার দেশে ফিরে এটি তার প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান।
‘ব্যাংক একীভূত আরেকটা দুর্নীতির কৌশল’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারা(সরকার) বলে যে, দারিদ্র্যের সংখ্যা নাকি কমে এসছে… ১৯%। নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির আওতায় সরকার যে ভাতা দেয়…দুঃস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, দরিদ্র ভাতা সেটা ৩৮% নিয়ে যায়। পত্রিকায় বলছে, ওখানেও(দরিদ্রভাতা) এরা ভাগ বসায়, তাদের জন্য বরাদ্ধের টাকা নিয়ে যায়। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে… টাকার কোনো হিসাব নাই।”
‘‘ ব্যাংকগুলো লোপাট করে দিয়ে এখন ব্যাংক একীভূত হচ্ছে… ওটা আবার আরেকটা দুর্নীতির ব্যবস্থা তৈরি করছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাবলীতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে ছাত্র দলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘‘ এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা ছাত্রীদেরকে শ্লীলতাহানি হয়েছে…. আপনারা কি করেছেন?উত্তর দিতে পারবেন না। একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেন নাই। এই যে মেয়েরা বসে আছে আপনারা প্রতিবাদ করেন নাই। আমি কিছুক্ষন আগে ফজলুর রহমান সাহেবের সাথে কথা বলছিলাম…কোথায় গেলো সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোথায় গেলো ছাত্ররা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন করেছে, ’৬৯ এর আন্দোলন করেছে, ৯০ এর আন্দোলন করেছে কোথায় গেছে তারা?
‘‘ আজকে ছাত্র দলের নেতারা এখানে যারা আছেন এভাবে শুধু শ্লোগান দিলে হবে না, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। কিছুক্ষন আগেই আমাদের পুরনো মুক্তিযোদ্ধা ভালো সংঘটক তিনি বলছিলেন, ইনফেন্ট্রি যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে যুদ্ধ কে করবে? ইনফেন্ট্রিকে শক্তিশালী করতে হবে… যারা একটা পুলিশের হুইসেল শুনলে দৌঁড়াবে না, যারা একটা সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শুনলে পালবে না, যারা রাস্তায় অনঢ় হয়ে প্রাণ দেবে, দাঁড়িয়ে থাকবে এই ধরণের মানুষগুলো তৈরি করতে হবে, সেই সাহস বুকে তৈরি করে দাঁড়াতে হবে।”
মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে বাজি রেখে যুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘‘ সেইভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি জানি আমার বহু ছেলেরা সেইভাবে কষ্ট করছে, তারা কেউ বাড়িতে থাকতে পারে না, তাদের চাকুরি-বাকরি নাই, টাকা-পয়সা নাই, তাদের কোনো ভবিষ্যত নাই। তারা লড়াই করছে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য।”
‘‘ এই গণতন্ত্র ফেরানোর বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে হবে সারাদেশে তরুন সমাজের মধ্যে, সেই সাহস ও বোধ তৈরি করতে হবে যে আমি যা করছি তা আমার দেশের জন্য করছি, আমি যা করছি তা আমার গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য করছি, আমি যা করছি তা আমার দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য করছি।”
‘পাকিস্তানের ইমরান খানের দিকে তাঁকান’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ পাকিস্তানের দিকে তাঁকিয়ে দেখেন। ইমরান খান… আমরা পাকিস্তান নাম বললে সবাই উতকে উঠি, অন্যভাবে চিন্তা করি। সেই ইমরান খান তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে কিভাবে তুরণদেরকে মাঠে নিয়ে আসতে হয়, তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, কিভাবে মহিলাদেরকে মাঠে আনতে হয়। আমাদের চেয়ে কম অত্যাচার তাদের উপরে হয়নি… তারা সেনানিবাস আক্রমণ করেছিলো,তারা মার্কিন সামাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে… পাকিস্থানে এই অবস্থান নিয়ে কেউ কোনো দিন রাজনীতিতে টিকতে পারে নাই।”
‘‘ ইমরান খান জেলে চলে গেছে.. ৩৪ বছর সাজা হয়েছে, তার ২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার হয়েছে… জোর করে দল বদল করা হয়েছে। তারপরেও জেলে বসে যখন তার দলের মার্কা নিয়ে গেছে। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচনে যাও। এই সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কারা…এই তরুণেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আপনারা সবাই ব্যবহার করেন… সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।”
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘ আজ ২৫ মার্চের কালো রাত। আজকে এই দিনে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অস্বীকার করতে পারে… সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ চেষ্টা করেছে পাকিস্তানের সঙ্গে একটা দফা-রফা করার জন্য। যখন ব্যর্থ হয়েছে, যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টেসহ জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে তখন আমাদের তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তারা কেউ দেশে থাকেননি, পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আর মূল নেতাকে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমপর্ণ করে তিনি পাকিস্তান চলে গেছেন।”
‘‘ তারপরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই উজ্জীবন… সমস্ত মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধ করেছিলো বলেই ১৯৯১ সালে আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি।”
অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহানগর দক্ষিন বিএনপির ইশরাক হোসেন, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:18 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:20 PM |
Isha | 6:40 PM |