আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১:০১
ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন:-বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। আনুষ্ঠানিকভাবে এমন চিঠি দেয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চলমান রাজনৈতিক বিরোধ নিয়ে তাদের প্রকাশ্য চূড়ান্ত বার্তাই দিয়ে দেয়া হয়েছে। ১৩ই নভেম্বর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত চিঠিতে নতুন কিছু বলা হয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া এমন চিঠির মধ্যে নতুন বার্তা রয়েছে। বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে এটাই আমেরিকার সর্বশেষ প্রকাশ্য বার্তা মনে করছেন কেউ কেউ। নেপথ্যের অনেক কাজ শুরু হয়ে গেছে। যদিও এসব নিয়ে বিস্তারিত জানার বা জানানোর সুযোগও খুবই সীমিত বলে মনে করা হচ্ছে।
বেশকিছু সময় থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকাশ্য সক্রিয় তৎপরতা আমেরিকার। রাখঢাক করে, কূটনৈতিক চালাচালি করে রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের সময় আগেই পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত প্রভাব বিস্তার করবে, না আমেরিকার প্রাধান্য পাবে- এসব নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
আমরা অনেকটাই এখন একমত, নিজেদের স্বার্থে হলেও নিজেরা রাজনৈতিক বিবাদ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো সম্ভাবনা আমাদের নেই। বাইরের শক্তিগুলোর মধ্যস্ততায়ই নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের জনগণের ভবিষ্যৎ! দেশকে আমরা ঠেলে দিয়েছি এমন বাস্তবতায়!
বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আমেরিকার দৌড়ঝাঁপকে দেশের সরকারপক্ষ বৈরী আচরণ হিসেবেই দেখছে। নেপথ্যে আমেরিকা কী বলছে, কোন চাপ দিচ্ছে? তা এখনও প্রকাশ্য নয়। মার্কিন কূটনীতি সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছে, তারা মনে করেন নেপথ্যের অনেক বিষয় সহজে জানার কোনো উপায় নেই। আমেরিকা সামনে যা বলে , নেপথ্যের কর্মকৌশল দিয়ে তা বাস্তবায়িত করে থাকে।
মার্কিন কূটনীতির মৌলনীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে, দেশের বাইরে আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণ এবং নাগরিকদের রক্ষা করা। গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং অন্যান্য বৈশ্বিক বিষয়ে আমেরিকার স্বার্থের অগ্রগতি সাধন করে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বিশ্ব তৈরি করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।
এ লক্ষ্য অর্জন করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মূল্যবোধ ধারণ করে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকার স্বার্থ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই এখন গুরুত্বের। একই সময়ে বাংলাদেশও তার স্বার্থের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সর্বোচ্চ স্বার্থ আদায় করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কোথাও কোনো মার্কিন নাগরিকের ওপর হামলা হলে বা জীবন বিপন্ন হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হলে আমেরিকা কখনো ছাড় দেয় না।
বাংলাদেশে কাজ করতে গিয়ে একাধিক মার্কিন দূতকে সাম্প্রতিক সময়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা থেকে শুরু করে বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিচরণ আমরা দেখেছি, দেখছি। এসব শুধু কোনো দেশে নিযুক্ত কূটনীতিবিদের রুটিন কাজ নয়।
বাংলাদেশের জনগণের পাশে নিজেদের মূল্যবোধ নিয়ে দাঁড়াতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে অপদস্ত হতে হয়েছে। ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’ বলে দেশের দায়িত্বশীল লোকজনও তাকে হেয় করেছেন। বাংলাদেশের সব জেলা ঘুরে মজিনা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। একটি দেশের সমাজ সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশের এমন চেষ্টা করে মার্কিন একজন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন। এখন অবসরে থাকা ড্যান মজিনা ব্যক্তিগত আলাপকালে কখনো সরকারের প্রতি কোনো উচ্ছ্বাস দেখাতে দেখা যায় না।
পশ্চিমা সৌজন্যের ধারক সাধারণ লোকজনও কাউকে প্রকাশ্যে অপমানমূলক কিছু বলতে অভ্যস্ত নয়। কূটনীতিবিদ হলে এ সৌজন্যতা, অন্যের উপর ক্ষোভ চেপে রাখার চর্চা শৈল্পিক পর্যায়ে থাকে। তারপরও ড্যান মজিনার বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ের কথা বলে থাকেন সভা সমিতিতে। সরকারের প্রসঙ্গ আসলেই চেহারায় হোক, কূটনৈতিক বাঁকা হাসিতে হোক- তিনি বুঝিয়ে দেন তাঁর মনোভাব।
রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের ওপর বাংলাদেশে হামলা হয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার নিজের এবং সহকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সরকার দলের কোনো কোনো নেতা তাকে হুমকি দিয়ে বক্তৃতাও করছেন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত থাকে। বিদেশে অবস্থানরত কূটনীতিবিদদের নিরাপত্তার জন্য হেন বিষয় নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করতে পারে না।
দিনে দিনে দেনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সহ নানা কৌশলকেই কাজে লাগানোর শক্তি রাখে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার চিঠি দিয়েই তারা বসে থাকবে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের রাজনৈতিক পক্ষগুলোর ধারাবাহিক বিরোধের কারণে পরিস্থিতি আজকের পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমেরিকার পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক ও বাণিজ্য বাস্তবতায় আমেরিকা সহ পশ্চিমা শক্তিকে বৈরী করে কোনো পক্ষেরই কি টিকে থাকা সম্ভব ? যদি সম্ভব না হয়, এজন্য কাদের মূল্য দিতে হবে? যারা গোঁ ধরেছেন তারা , না দেশের জনগণ?-সবাইকেই মূল্য দিতে হবে।
ভিসা নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছুটা হলেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা কাজ করেছে বলে ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে। পরের ধাপে কী হতে পারে? আরও নিষেধাজ্ঞা? বাণিজ্য অবরোধ? – এসব প্রকাশ্য কাজ ছাড়াও আমেরিকার হাতেই দেশে দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে।ঘটনা ঘটার অনেক পরে এসব নিয়ে হলিউডে সিনেমা হয় !হায়! সেসব সিনেমা দেখার জন্য আমাদের অনেকেই ততদিন হয়ত বেঁচে থাকবো না !সূত্র:মানবজমিন
নিউ ইয়র্ক। ১৩ নভেম্বর ২০২৩
ibrahim.chowdhury@gmail.com
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |