আজ শনিবার | ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৬শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৪:০০
রোববার সকালে প্রায় এক ঘন্টার মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সরকারের বিরুদ্ধে ‘না’ বলার জন্য‘ জনগনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধন করছে বিএনপি। কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণ। রোববার সকাল ১০টা ৫৫মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির উদ্যোগে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ আজকে রাস্তায় নেমে পড়েছে, আজকে মিছিলে মিছিলে সারা বাংলাদেশ আপ্লুত। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি বিএনপিকে সংগঠিত করে নতুন করে দাঁড় করিয়েছেন… তার আহ্বান, আপনারা যে যেখান থেকে পারেন সরকারের বিরুদ্ধে না বলুন, না বলুন, না বলুন। সরকারের কোনো কিছুতে অংশ গ্রহন করবেন না। এমনকি দোকানপাট শ্রমিক যারা আছেন সবাই দোকান-পাট বন্ধ করে দিন, আপনাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করে দিন, আপনাদের বিয়ে-সাদীর পার্টিগুলো ছোট করে দিন।”
‘‘আজকে মনে রাখতে হবে… আজকে পেঁয়াজের দর ২২০ টাকা হয়েছে, আজকে জিনিসপত্রের দাম আগুন। আমাদের মানুষ না খেয়ে মরছে… এই নেতা-কর্মীরা যারা আজকে পরিবারের সাথে থাকতে পারছে না, যারা আজকে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের কথা চিন্তা করে আপনারা আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।আপনারা দেখবেন সারা অতিশিগগিরই এই জনগন এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাবে।”
সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘ জনগনের প্রতি আহ্বান রইল আপনারা নেমে আসুন। নেমে এসে প্রতিরোধে-প্রতিবাদ গড়ে তুলুন। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। তারা(ক্ষমতাসীনরা) লাঠিয়াল বাহিনী, হেলমেট বাহিনী তৈরি করে জনগনের ওপর অত্যাচার করছে। এটা বেশি দিন চলবে না।”
‘‘ আমি বলব, মনে সাহস রাখুন। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকবো। মিছিলে মিছিলে সারা বাংলাদেশ ভরে দেবো… তুবুও এই সরকারের নির্বাচন আমরা মানব না মানব না।”
টানা এক মাসের বেশি সময় হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বাদ দিয়ে রোববার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মানববন্ধনে দাঁড়ায়। মুহুর্তের মধ্যে মানববন্ধনে হাজারো নেতা-কর্মীর ঢল নামে। ১২টার আগেই নেতারা বক্তব্য দিয়ে মানববন্ধন শেষ করেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিন বিএনপির ব্যানারে নেতা-কর্মীরা ‘মানবাধিকার দিবস সফল হোক, সফল হোক’ ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি’ ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়ের মুক্তি চাই’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, মির্জা আব্বাস ভাইয়ের মুক্তি চাই’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, আমীর খসরু ভাইয়ের মুক্তি চাই’, ‘জেলের তালা ভাংগব, নেতাদের আনব’, ‘এই মুহুর্তে সরকার নির্দলীয় সরকার’ ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে। মানবন্ধবনে কর্মী-সমর্থক বেশি হলেও আত্মগোপনে থাকা দলের নেতারা অংশ নেন।
‘বিচার বিভাগও দলীয়করণ’
২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পন্ড করে দেয়ার পর থেকে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমনপীড়নের চিত্র তুলে ধরে সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘ ওরা শুধু আমাদের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের শুধূ কারারুদ্ধই করেনি, তাদের জামিন পাওয়ার যে ন্যায্য অধিকার সেটা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। আজকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করে বিচারকরা একজনের নির্দেশে চলছে। সেই নির্দেশ হলো দেশ যিনি শাসন করছে যিনি অবৈধভাবে ভোটারবিহীন অবস্থায় বাংলাদেশের সরকারে জোর করে বসে আছে তিনিই সব নির্দেশ করছেন।”
‘‘ আজকে এমন অবস্থা হয়েছে যে, বাবাকে না পেলে ছেলেকে নিয়ে যায়, ছেলেকে না পেলে মাকে নিয়ে যায়। গতকাল মানবন্ধন করেছে মায়ের ডাক। সেখান একজন মহিলা বললো, তার বিরুদ্ধে মার্ডার কেইস দুইটা দেয়া হয়েছে… সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই হলো দেশের অবস্থা, এই হলো বাংলাদেশের মানুষ, এই হলো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি। বাংলাদেশের মানুষের ওপর যত নিপীড়ন হচ্ছে এরকম নিপীড়ন বোধহয় আর কোথাও নাই। মানবাধিকার লঙ্ঘনে এখন বাংলাদেশ এক নম্বর। গত ১৫ বছরের নেতা-কর্মী-খুন-হত্যা করেছে…. গত ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।এভাবে সর্বগ্রাসী ডাইনি দানব বাংলাদেশ পরিচালনা করছে।”
‘বাম-ডান-মধ্যপন্থি সবাই এক হয়েছে’
সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘ আজকে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। এই দিবসে বিএনপি মানববন্ধন ডেকেছে। একটু আগে খবর পেলাম বরিশালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাঁড়াতে দেয়া হয়নি, তাদের লাঠিপেটা করেছে এই সরকারের প্রশাসন।”
‘‘ আমরা বলতে চাই, আমরা আজকে দাঁড়িয়েছি, দাঁড়িয়েছি জনতার ভরে যে জনতা আজকে এক হয়েছে। আপনারা দেখেছেন বাম-ডান-মধ্য সবাই আমরা এক হয়েছি, এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। আজকে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ বিএনপির অফিস বন্ধ রেখে তারা একদলীয় নির্বাচন করছে। যে নির্বাচনে তাদেরই অনুগত নেতাদের স্বতন্ত্র, ডামি প্রার্থী দাঁড় করে নির্বাচন দেখাচ্ছে।”
‘‘ তাই আমরা বলতে চাই প্রশাসনকে আমরা বলতে চাই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, আমরা বলতে চাই পুলিশ প্রশাসনকে আপনাদের বিবেক দিয়ে কাজ করুন। আপনাদেরকে যেভাবে আজকে টাকার লোভ দেখিয়ে, কোটি কোটি টাকা দিয়ে জনগনের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে আপনাদেরকে পেট ভরাচ্ছে এটা চিরদিন থাকবে না।
তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদের বক্তব্যের সমালোচনা করে সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘ আজকে হাছান মাহমুদ বলেছেন, যদি বিএনপি বাড়াবাড়ি করে দাঁতভাঙা জবাব দেবে।”
‘‘ আমরা বলতে চাই, তিনি বলার কে? কারণ তিনি একটা ভোটারবিহীন দিনের ভোট রাতে করে তিনি এমপি হয়ে মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। এদেশ কি তার? এই দেশ বাংলাদেশের মানুষের, এদেশ স্বাধীন করেছে বাংলাদেশের জনগন। কাজেই জনগন ঐক্যবদ্ধ হলে আপনারা কেউ টিকতে পারবেন না।”
বিএনপি রাজধানী ছাড়াও সারাদেশের জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে একযোগে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে আজকে বাংলাদেশে মানবাধিকার ভুলন্ঠিত, মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন কোথাও নেই। এই অবস্থায় সকলকে সোচ্চার হতে হবে, সকলকে অন্যায়-অবিচার-কুশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।”
‘‘ নেতা-কর্মী সকলকে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে সংগ্রাম চলছে সেই সংগ্রামকে আরও শানিত করার জন্য আজকে যেমন রাস্তায় নেমে এসেছেন, ইনশাল্লাহ স্বৈরাচারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আপনারাসহ আমরা রাস্তায় থাকব।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টো কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, তাসসিনা রুশদীর লুনা, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, রেহানা আখতার রানু, মীর নেওয়াজ আলী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সিনিয়র নেতা রুহুল আমিন গাজীর নেতৃত্বে আলাদা মানবন্ধন করে। সেখানে পেশাজীবী নেতারা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ কাওরান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অফিসের সামনে, ১২ দলীয় জোট, গণধিকার পরিষদ(নূর) বিজয়নগরে পানির ট্যাংকের সামনে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টনে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে, এলডিপি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, গণফোরাম-পিপলস পার্টি কদম ফোয়ারার কাছে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে, এলডিপি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, লেবার পার্টি তোপখানা রোডে মেহরাব প্লাজার সামনে, গণঅধিকার পরিষদ(রেজা কিবরিয়া) পুরানা পল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে, এবি পার্টি বিজয় নগরে ৭১ হোটেলের সামনে আলাদা আলাদাভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি করে।
Dhaka, Bangladesh শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:19 AM |
Sunrise | 6:39 AM |
Zuhr | 12:00 PM |
Asr | 3:01 PM |
Magrib | 5:21 PM |
Isha | 6:41 PM |