আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ভোর ৫:০৩
বিডি দিনকাল ডেস্ক:-ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা সিনেটরদের জিম্মি করতে চেয়েছিল। এ জন্য তারা কমান্ডো স্টাইলে সেখানে হামলা চালায়। এ সময় সিনেটররা প্রাণ বাঁচাতে সুড়ঙ্গ পথ ব্যবহার করেন। এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে জনরায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি তাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনটা বলা হচ্ছে বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়ায়।
আগস্টে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যদি নির্বাচিত হন তাহলে আমাদের গণতন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে ট্রাম্প প্রশাসন।
ট্রাম্প জনরায় না মেনে গায়ের জোরে নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়ার চেষ্টা করেন। সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মী, সমর্থকদের মধ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়ে তাদের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দেন। সর্বশেষ তারই পরিণতিতে বুধবার কমপক্ষে ২০০ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছেন তিনি ও তার সমর্থকরা। এমন মন্তব্য করেছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা নেতারা। তিনি মানুষের অধিকারকে পদদলিত করেছেন। নেতাকর্মীদের উস্কে দিয়েছেন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালাতে। সেখানে চারটি প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যানড্রু কুমো এ ঘটনাকে ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের ব্যর্থ অভ্যুত্থান বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ জন্য তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে অযোগ্য, নিষ্ঠুর ও বিভক্তি সৃষ্টিকারী হিসেব আখ্যায়িত করেছেন। সারাবিশ্বে নেতারা ট্রাম্পের এমন কর্মকাণ্ডের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হলো গণতন্ত্রের আঁতুরঘর। সেখানে এভাবে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা মোটেও উচিত নয়।
৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট দলের জো বাইডেন বিজয়ী হওয়ার আগে থেকেই ভিত্তিহীনভাবে ভোটে কারচুপির অভিযোগ করে যাচ্ছিলেন ট্রাম্প। তিনি ও তার নেতাকর্মীরা জনগণের রায় মেনে নেননি। তারা জনরায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করেন। নির্বাচনের রাতে তার সমর্থকরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পেনসিলভ্যানিয়া রাজ্যের একটি ভোটকেন্দ্র দখল করে নেন। তারা সেখানে কর্মকর্তাদের ভোট গণনা বন্ধ করতে বাধ্য করেন। এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যুত্থানের সূচনা। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ব্যাটলগ্রাউন্ড বলে খ্যাত মিশিগান, পেনসিলভ্যানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, নেভাদা সহ অনেক রাজ্যে ভোটে যখন বাইডেন জিতে যাচ্ছিলেন তখনই ট্রাম্প বুঝে যান তিনি আর জিততে পারছেন না। ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে তিনি তখন বেশ পিছিয়ে। কিন্তু দীর্ঘ সময় নিয়ে সেখানে ভোট গণনার পর নিশ্চিত হয় জো বাইডেন জিতেছেন। ফলে চোখ বন্ধ করে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন পর্যন্ত সেই ফল মেনে নেননি। পরাজয় স্বীকার করেননি তিনি। এরই মধ্যে বারবার উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে নিজের সমর্থকদের চাঙ্গা রেখেছেন। নির্বাচনের এক সপ্তাহ পরেও রাজ্য সরকারগুলো নির্বাচনের ফল সার্টিফাই করতে থাকে। জর্জিয়া তিনবার নির্বাচনের ফল সার্টিফাই করে। কারণ ট্রাম্প কোনোভাবেই ফল মানছিলেন না। তিনি ও তার সমর্থকরা বার বার ফল পুনঃগণনার অনুরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে তিনবার সার্টিফাই করা হয় ফল। এরপর একের পর এক আদালত ট্রাম্প সমর্থকদের আইনি চ্যালেঞ্জ প্রত্যাখ্যান করতে থাকেন। দু’বার সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের বিপক্ষে রায় দেন। অনেকে পূর্বাভাস করেছিলেন যে, বছর শেষে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে বিচারক এমি কোনি ব্যারেটকে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে- নির্বাচনে কোনো হেরফের হলে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেবেন। কারণ, এমি কোনি ব্যারেট রিপাবলিকান। তাকে নিয়োগ দেয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে রিপাবলিকান বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এর ফলে অনেকেই মনে করতে থাকেন, জো বাইডেনের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এমি’কে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তার মনে লুকিয়ে থাকা জনরায় না মেনে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ফুটে ওঠে। কিন্তু সেই অভ্যুত্থানেও ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। শেষ পর্যন্ত জর্জিয়াতে সিনেট নির্বাচনে তার ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। তাতে কিভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে তিনি চাপ প্রয়োগ করেন- তা ধরা পড়ে। এখানেও তিনি জনরায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান করেন। যার ফল হিসেবে জর্জিয়ার দুটি সিনেট নির্বাচনে তার দল রিপাবলিকান প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন।
পক্ষান্তরে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ডেমোক্রেটরা। ফলে এখানেও ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। সর্বশেষ বুধবার কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত জো বাইডেনকে অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা ছিল। কিন্তু এদিন ক্যাপিটল হিলের সামনে সমবেত সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বক্তব্য রাখেন। এ বক্তব্যকে উস্কানিমূলক বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এরপরই তার সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কখনো দেখতে পায়নি। তাদের ভয়াবহতায় জিম্মি হয়ে পড়েন সিনেটররা, কংগ্রেস। এ সময় প্রাণভয়ে সিনেটররা সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে পালান। কংগ্রেসের ফ্লোরে তাদেরকে হামাগুঁড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে ছবিতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। তার অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে বাঁচলেন সিনেটররা
বাইরে তখন তা-ব চালাচ্ছেন ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। ভিতরে ক্যাপিটলের সব প্রবেশদ্বার বন্ধ। দরজার দিকে তাক করে বন্দুক উঁচিয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা। যে কোনও সময় দরজা ভেঙে ঢুকে পড়তে পারে উগ্র সমর্থকরা। শেষমেশ গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদে ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হল সিনেটরদের। বুধবার (আমেরিকান সময় অনুযায়ী) এমনই নজিরবিহীন রুদ্ধশ্বাস নাটকীয় পরিস্থিতি দেখল আমেরিকার কংগ্রেস। এ খবর দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ভিতরে চলছে ভরা সভা। ভারতের সংসদ ভবনের মতোই চুল চেরা বিতর্কে মগ্ন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। রয়েছেন সাংবাদিকরাও। ঘটনাচক্রে এই আলোচনার শেষেই ইলেক্টরাল কলেজের ভোটের হিসেবে সরকারিভাবে জো বাইডেন নির্বাচিত হবেন। ট্রাম্পের রিপাবলিকান সিনেটররা এখনও কার্যত পরাজয় মেনে নিতে নারাজ। আলোচনা, বিতর্ক, প্রশ্নোত্তর-এর মধ্যেই চলছে কটাক্ষ, টিকা-টিপ্পনি। তার মধ্যেই বাইরে হই হট্টগোল। কয়েক হাজার জনতার চিৎকার। তাদের গতিমুখ ক্যাপিটল ভবন। ক্যাপিটলের নিরাপত্তারক্ষীরাও তাদের আটকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই গণ্ডগোলের খবর তখন পৌঁছে গিয়েছে ভিতরেও।
সিনেটররাও বাইরের দিকে উঁকিঝুঁকি মারছেন বাইরে ঠিক কী হয়েছে, বোঝার জন্য। আমেরিকার ইতিহাসে এমন ঘটনা কোনও দিন ঘটেনি। ফলে তারাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী হয়েছে। তখনও ততটা ‘সিরিয়াসলি’ নেননি সিনেটররা। কিন্তু বিষয়টা যে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘হামলা’ সেটা স্পষ্ট হয় যখন একের পর এক দরজা সজোরে বন্ধ করে দিচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পর পর ভেঙে পড়ছে দরজা-জানালার কাচ। ট্রাম্পের রিপাবলিকান সিনেটরদের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ- ‘ডাকুন আপনার নেতাকে! ওর জন্যই তো এ সব হচ্ছে।’
কিন্তু বিষয়টা যে ভয়ানক, সেটা সিনেটররা টের পেলেন আরও কিছুটা পরে। ক্যাপিটলের মূল দরজা শুধু বন্ধ করাই নয়, ভিতর থেকে আসবাবপত্র রেখে সাপোর্ট দিয়ে দিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ফ্লোর ডিরেক্টর কেইথ স্টার্ন বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজের নিজের আসনে বসে পড়ুন। শান্ত থাকুন।’ এর মধ্যেই বাইরে কাঁদানে গ্যাসের মতো কিছু একটা ছোড়া হয় হামলাকারীদের আটকানোর জন্য। এবার ঘোষণা, ‘সিটের নীচে রাখা গ্যাস মাস্ক পরে নিন সবাই’। যে কোনও সময় যে কোনও দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে পারে বাইরের আতঙ্ক। গোড়ার দিকে যেটা ছিল কৌতূহলের বিষয়, সেটাই হয়ে দাঁড়াল বিভীষিকা।
শেষ পর্যন্ত আর ঝুঁকি নেননি ক্যাপিটলের নিরাপত্তা অফিসাররা। সিনেটরদের বললেন, সুড়ঙ্গ দিয়ে নিরাপদ কক্ষে পৌঁছে যেতে। সেভাবেই ফাঁকা করা হল ক্যাপিটল। হাউস সার্জেন্টকে কোনও এক নিরাপত্তা অফিসারকে নির্দেশ দিতে শোনা যায়, ‘ক্যাপটলকে আমরা যেন নিরাপদ রাখতে পারি, সেটা নিশ্চিত করুন।’
সব মিলিয়ে, রুদ্ধশ্বাস এক নাটকের সাক্ষী থাকল ক্যাপিটল এবং সিনেটররা।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |