আজ শনিবার | ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |৪ঠা রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১০:২৩
ভারতের সঙ্গে দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক, হতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে’- প্রথম আলোকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করে বলেন, ‘ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা অনেক দিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আবার ভারতও আমাদের কাছ থেকে সুবিধাও পাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক আর অনানুষ্ঠানিক মিলিয়ে ওদের প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে কাজ করছে। এ দেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক পণ্য কিনছি। কাজেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে ভারতের বিরাট স্বার্থ আছে। এটা একটা দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক। ন্যায্যতার ভিত্তিতে হতে হবে এটা। যেকোনো দেশ সব সময় অন্য দেশ থেকে সুবিধা পেতে চাইবে। এটা তো দোষ না। আমি যদি আদায় করে নিতে না পারি, দোষ তো আমারও। এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। জনগণ যেন কোনোভাবেই মনে না করে ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা এমন কিছু করছে, যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। কোনোভাবেই মানুষ যেন এটা না ভাবে।’
নিচে প্রথম আলোর নেওয়া সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: বাংলাদেশের জন্য ২০২৪ সাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর গেল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হলো, অনেক পরিবর্তন হয়ে গেল…
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান: এটা সত্য। এত বড় গণ-অভ্যুত্থান। এত শহীদ, এত আহত, ঐতিহাসিক এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছি। আমরা একটা নতুন স্বপ্ন, নতুন সময়ের পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছি। ২০২৪ সালে আমাদের জন্য একটা নতুন সুযোগ ও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র, জনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী ও আহত সবার প্রতি জাতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
প্রশ্ন: নতুন বছর, ২০২৫ সালে আপনার প্রত্যাশা কী?
জেনারেল ওয়াকার: ২০২৫ সালে আমরা একটা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে যেতে চাই। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি। তাহলেই গণতন্ত্র স্থায়ী হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এখন শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। এই দুটি বিষয় না হলে উন্নয়ন আর সুশাসনও আসবে না। সে জন্য আমাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য একটা জাতীয় সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
প্রশ্ন: সম্প্রতি দেখছি, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ ব্রিফিং করা হচ্ছে। আপনিও কথা বলছেন।
জেনারেল ওয়াকার: আমি বিশ্বাস করি, আপনারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। তাই আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
প্রশ্ন: সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক বা সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সম্পর্ক—এসব বিষয় নিয়ে অতীতে অনেক কথা হয়েছে। অবিশ্বাসের জায়গা থাকলে কিন্তু সমস্যা হয়।
জেনারেল ওয়াকার: আমি যা চিন্তা করছি, সেটা যদি আপনারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তুলে ধরেন, তাহলে তো আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতেই পারি। সাধারণত সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন গণমাধ্যমে কথা বলেন না। এটা অনেক আগের রেওয়াজ। বহুদিন থেকেই এই পরিবেশ গড়ে উঠেছে।
প্রশ্ন: তার মানে আপনি বলছেন এটা অতীত থেকে হয়ে আসছে?
জেনারেল ওয়াকার: হ্যাঁ। এটা অতীত থেকেই হয়ে আসছে। আমরা মিডিয়ায় কথা বলার বিষয়ে দ্বিধান্বিত থাকি। তারপরও এখন দেশ একটা বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের মনে জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে। থাকতে পারে বিভ্রান্তি। আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিস ইনফরমেশন, ডিস-ইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে। সে জন্য আমাদেরও মাঝে মাঝে মিডিয়ার সামনে যেতে হচ্ছে। দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা।
প্রশ্ন: প্রধান উপদেষ্টা সাধারণ নির্বাচনের একটা সময়সীমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন? আপনাদের তো কাজ করতে হবে।
জেনারেল ওয়াকার: দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা দিয়েছেন। সেটা ঠিক সময়। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনের রূপরেখা বাস্তবায়নে সব সহযোগিতা করব।
প্রশ্ন: সেনাবাহিনী সরকারের অংশ। বর্তমান অবস্থায় আপনাদের মধ্যে কোনো উৎকণ্ঠা আছে?
জেনারেল ওয়াকার: আমাদের মাঠে থাকতে হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। আমরা কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারি, তা নিয়ে একটা ধারণা দিই। দিনের শেষে আমার সেনাদেরই তো মাঠে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যেই প্রায় পাঁচ মাস ধরে তাঁরা মাঠে আছেন। যত বেশি আমাদের লোকজন মাঠে থাকবেন, তত বেশি তাঁদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। ডাকাত ধরতে গিয়ে আমার একজন কর্মকর্তা নিহত হলেন। পুলিশ যদি দ্রুত সংগঠিত হয়ে যেত, আমার কোনো উদ্বেগ থাকত না। তারা যদি সুসংগঠিত হয়ে যায়, বেসামরিক প্রশাসন যদি যথাযথ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন শুরু করে দেয়, তাহলে আমরাও আশ্বস্ত হতে পারি।
প্রশ্ন: কিন্তু এখনো তো পুলিশ পুনর্গঠিত হতে পারেনি।
জেনারেল ওয়াকার: সেটা কিছুটা ঠিক। পুলিশ পুনর্গঠিত হওয়ার জন্য কাজ চলমান। আমরা চাইব শিগগিরই সেটা ফলপ্রসূ হবে।
প্রশ্ন: গত ১৫ বছরে প্রশাসন, পুলিশ, বিচার ও ব্যবসাসহ রাষ্ট্রের নানা ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। এটাকে একটা স্বাভাবিক জায়গায় আনতে তো সময় লাগবে।
জেনারেল ওয়াকার: এটার জন্য রাজনৈতিক দল ও সরকার লাগবে। রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি ছাড়া ও রাজনৈতিক সরকার ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: কিন্তু গত পাঁচ দশকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কিছু করেনি, করতে চায়নি। তাদের ব্যর্থতার জন্যই তো বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
জেনারেল ওয়াকার: ঠিক আছে, অতীতে হয়নি। এখন তো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ কাজগুলো করতে পারি।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের প্রতিশ্রুতি অতীতেও দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে তারা কথা রাখেনি…
জেনারেল ওয়াকার: এখন তো আমরা সবাই রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যুক্ত আছি। তারা এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এই সংস্কার সবার জন্যও দরকার। সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি সামনে আসছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা দরকার।
প্রশ্ন: তার মানে রাষ্ট্র পরিচালনায় আপনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, এ ধরনের একটা ধারণার কথা বলতে চাইছেন?
জেনারেল ওয়াকার: আমি অত বিস্তারিত যেতে চাই না। আমি সংবিধান বিশেষজ্ঞও নই। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই বুঝেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।
প্রশ্ন: আপনি সশস্ত্র বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখার কথা বলছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটা ছিল।
জেনারেল ওয়াকার: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনী প্রধান উপদেষ্টার অধীনে ছিল। আমি এই ধারণার কথা বলছি। ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রসঙ্গটি নিয়ে ভাবছি। কীভাবে সেটা হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা বললেই ভালো। কিন্তু এই পরিবর্তন আনতে পারলে শাসনব্যবস্থায় একটা ভারসাম্য আসবে।
প্রশ্ন: সংবিধান সংস্কার বা অন্য কোনো কমিশনের সঙ্গে আপনাদের কোনো আলোচনা হয়েছে?
জেনারেল ওয়াকার: না, তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে একজনের সঙ্গে কিছু আলোচনা হয়েছিল। সেটা বেশ আগে।
প্রশ্ন: বিগত ৫০ বছরে আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনী কখনো নিজেরা ক্ষমতায় এসেছে। কখনো কখনো আন্দোলনের ফলে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বা ক্ষমতা নিয়েছে। এবার আপনাদের প্রতি মানুষ আহ্বান জানিয়েছে। এসব তো বাস্তবতা।
জেনারেল ওয়াকার: আমরা আইনশৃঙ্খলার দেখভাল করছি। কিন্তু আমাদের ১/১১–এর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সেনাসদস্যদের মাঠে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও সংখ্যাটা খুবই কম। শৃঙ্খলাজনিত ঘটনার জন্য আমরা সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শেষে শাস্তিও দিই। এরপরও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমাদের তো এ ধরনের কাজে যুক্ততা কিংবা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য তৈরি করা হয়নি। আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব।
প্রশ্ন: এখন আপনারা পেছনে থাকছেন?
জেনারেল ওয়াকার: পেছনে থাকা মানে আমরা অন্তর্র্বতী সরকারকে সহায়তা করছি। তারা আমাদের কাছ থেকে যে ধরনের সহায়তা চাইছে, সেভাবেই সহায়তা দিচ্ছি এবং দেব। যে দিন অন্তর্র্বতী সরকার বলবে, ‘আপনাদের অনেক ধন্যবাদ, আপনারা আপনাদের কাজটা সম্পন্ন করেছেন, এখন পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব নেবে।’ আমরা তখন সানন্দে সেনানিবাসে ফিরে যাব।
প্রশ্ন: আপনারা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে সব রকম সাহায্য করছেন?
জেনারেল ওয়াকার: আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব। এটাতে যদি আমাদের অসুবিধা হয়, সৈনিকদের যদি সাময়িক অসুবিধাও হয়, তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করে যাব। দেশ ও জাতির স্বার্থেই আমরা এটা করব। এই জাতির জন্য, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা তৈরি আছি।
প্রশ্ন: অনেকে বলেন অতীতেও অনেক লড়াই বা আন্দোলনের পরও সংস্কার বা পরিবর্তন করা যায়নি। আপনিও কি এবারের পরিস্থিতিকে শেষ সুযোগ হিসেবে দেখেন?
জেনারেল ওয়াকার: আমি এটাকে শেষ সুযোগ বলব না। আমি এটাকে সুযোগ হিসেবে বলতে চাই। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগানো উচিত। এটা সবার জন্য ভালো। একটা সুশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্যে সবকিছু যদি ঠিক হয়ে যায়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে অনেকেই তো এই পরিবর্তনের সুফল ভোগ করবেন। রাজনীতিতে বিরোধী দল বিরাট এক সহায়ক শক্তি। সরকার এবং বিরোধী দল একে অন্যের পরিপূরক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এমন প্রক্রিয়া থাকলে একে অন্যের ভুল ধরিয়ে দিতে পারে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে। সবাই তাদের পরিধির মাঝে থেকে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন। এটা তো একটা দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন।
প্রশ্ন: সংস্কারের কথায় ফিরে আসি। আপনি তো সরকার ছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে কথাবার্তা বলছেন। পরিবর্তন রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে কী মনোভাব দেখেন? সংস্কারের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
জেনারেল ওয়াকার: আমি আশাবাদী। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ভালো রাজনীতিবিদ রয়েছেন। হয়তো ভিন্নমতের মানুষও আছেন। আমার অতীত অভিজ্ঞতায় বলে, যখন এমন একটা ক্রান্তিকাল আসে, আমাদের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বসলে তাঁরা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন।
প্রশ্ন: সবশেষে ধরুন, অন্তর্র্বতী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে কী হবে? এমন কোনো শঙ্কা কি দেখেন আপনি?
জেনারেল ওয়াকার: আমি এমন কোনো শঙ্কা দেখি না। এখন সমঝোতা সম্ভব। একসঙ্গে বসে এটা করা সম্ভব। এটা একটা সংস্কৃতির ব্যাপারও বটে। সবার এটা বোঝা উচিত। আমি নৈরাশ্যবাদী নই। সব সময় আমি আশাবাদী।
প্রশ্ন: বর্তমানে শ্রমিক অসন্তোষ, নানা ক্ষেত্রে ধর্মঘট বা বিশৃঙ্খলা—এগুলোকে কীভাবে দেখেন?
জেনারেল ওয়াকার: কিছু কারণ যৌক্তিক আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে উসকানিও আছে।
প্রশ্ন: সেনাবাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আপনারা সেটার কতখানি প্রয়োগ করছেন?
জেনারেল ওয়াকার: আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা তুলনামূলকভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছি সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যতটা হতাশ মনে হচ্ছে কাউকে কাউকে, এতটা হতাশ আমি না। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তো একটা সামগ্রিক ব্যাপার। এখানে পুলিশের ভূমিকা রয়েছে, প্রশাসনের আছে, সরকারের ভূমিকা আছে। সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ জনগণেরও তো ভূমিকা রয়েছে। সবার সামগ্রিক প্রয়াসের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এটা আমাদের সবাইকে সব সময় মনে রাখতে হবে। আমরা একজনের ঘাড়ের ওপর দোষ চাপিয়ে বলি সরকার, বলি পুলিশ বা বলি সেনাবাহিনী দায়ী, এটা করা যাবে না। এখানে তো সবার একটা ভূমিকা আছে।
প্রশ্ন: আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ায় ‘মব জাস্টিস’ হচ্ছে এখনো…। মানুষ আইন তুলে নিচ্ছে নিজের হাতে…
জেনারেল ওয়াকার: এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এটা একধরনের অসুস্থতা। কেউ যদি পিটিয়ে মেরে ফেলাতে, বিচারবহির্ভূত হত্যায় সমাধান দেখেন, এটা ভুল। এটা বন্ধ করতেই হবে।
প্রশ্ন: অতীতে দেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী এমন কিছু করেছে, বিগত সরকারের আমলেও সেনাবাহিনীর একটা অংশ (ডিজিএফআই) এমন কিছু করেছে, যাতে সেনাবাহিনীর দুর্নাম হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে আপনি এসব হতে দেবেন না। অর্থাৎ আগে যে ব্যবস্থা হতো, তা থেকে মুক্তি পেতেই কি আপনাদের বর্তমান অবস্থান?
জেনারেল ওয়াকার: ডিজিএফআই একটি স্বতন্ত্র সংস্থা। সেনাবাহিনী এ রকম কিছুতে যেতে চায় না, জড়িত হতে চায় না। আমরা এমন কিছু করব না, যাতে সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রশ্ন: ভারতের সঙ্গে আমাদের পানি, সীমান্তসহ অনেক ইস্যু আছে। ইদানীং কিছু অমীমাংসিত বিষয়ে কিছু কথাবার্তা শুনছি, দেখছি।
জেনারেল ওয়াকার: ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা অনেক দিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আবার ভারতও আমাদের কাছ থেকে সুবিধাও পাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক আর অনানুষ্ঠানিক মিলিয়ে ওদের প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে কাজ করছে। এ দেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক পণ্য কিনছি। কাজেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে ভারতের বিরাট স্বার্থ আছে। এটা একটা দেওয়া–নেওয়ার সম্পর্ক। ন্যায্যতার ভিত্তিতে হতে হবে এটা। যেকোনো দেশ সব সময় অন্য দেশ থেকে সুবিধা পেতে চাইবে। এটা তো দোষ না। আমি যদি আদায় করে নিতে না পারি, দোষ তো আমারও। এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। জনগণ যেন কোনোভাবেই মনে না করে ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা এমন কিছু করছে, যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। কোনোভাবেই মানুষ যেন এটা না ভাবে।
প্রশ্ন: ভারতের কাছে প্রধান বিষয় হচ্ছে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা। বিগত সরকারের কাছ থেকে এ ক্ষেত্রে তারা সহায়তা পেয়েছে।
জেনারেল ওয়াকার: দেখুন, আমার কথা হচ্ছে আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে আমি এমন কিছু করব না, যেটা তাদের কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী হয়। একই সঙ্গে আমার দিক থেকে প্রত্যাশা থাকবে যে প্রতিবেশীও আমার সঙ্গে এমন কিছু করবে না, যা আমার স্বার্থের পরিপন্থী। আমি যখন তাদের স্বার্থ দেখব, তারাও আমার স্বার্থটা সমান গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে না। স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে না মিয়ানমার সীমান্তেও। সীমান্তে আমাদের লোকজনকে হত্যা করবে না। আমরা ন্যায্য হিস্যার পানি পাব। এতে তো কোনো অসুবিধা নেই। সম্পর্কটা ন্যায্যতার ভিত্তিতে হোক। সেনাপ্রধান বলেছেন, সামরিক বাহিনীর অবশ্যই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টি সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। অতীতে এগুলো হয়েছে। আমরা অতীত থেকে শিখেছি। এটা কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনি।
প্রশ্ন: প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে কীভাবে দেখেন?
জেনারেল ওয়াকার: সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়…আমাদের এই পররাষ্ট্রনীতি চমৎকার। আমাদের ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যেতে হবে। চীন আমাদের উন্নয়নের অংশীদার। বাংলাদেশে তাদের অনেক বিনিয়োগ আছে। কাজেই চীন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের অনেক সমরাস্ত্র আমরা ব্যবহার করছি। বিমানবাহিনী ব্যবহার করছে। নৌবাহিনী ব্যবহার করছে। তাদের সমরাস্ত্র তুলনামূলকভাবে সস্তা।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রও তো ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বড় শক্তি। তাদের সঙ্গে সম্পর্ককে কীভাবে দেখেন?
জেনারেল ওয়াকার: তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমরা এটা বজায় রেখে চলব। বর্তমানে জটিল ও কঠিন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই মুহূর্তে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলো আমরা যেন সীমিত রাখি। সরকারকে বিরক্ত না করি। তাহলে সেটা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্য করবে। ধৈর্য ধারণ করি।
প্রশ্ন: সবকিছুর পরও অনেকেই এখনো বলেন, সেনাবাহিনীর আগ্রহ আছে রাজনীতি বা ক্ষমতা নিয়ে। সাধারণ মানুষের এমন ধারণা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে…
জেনারেল ওয়াকার: সামরিক বাহিনীর অবশ্যই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টি সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। অতীতে এগুলো হয়েছে। আমরা অতীত থেকে শিখেছি। এটা কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনি। এ জন্যই আমার অঙ্গীকার হচ্ছে, সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের মেয়াদকালে আমি রাজনীতিতে নাক গলাব না। আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না। এটাই আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদের বিকল্প রাজনীতিবিদেরাই। তাঁদের বিকল্প সেনাবাহিনী নয়।
প্রশ্ন: বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকজন বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সামনে আসছেন। জিনিসপত্রের দাম না কমায় মানুষের হতাশা আছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশে সাধারণ জনগণের প্রতি কোনো বার্তা কি দিতে চান?
জেনারেল ওয়াকার: বর্তমানে জটিল ও কঠিন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই মুহূর্তে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলো আমরা যেন সীমিত রাখি। সরকারকে বিরক্ত না করি। তাহলে সেটা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্য করবে। ধৈর্য ধারণ করি। ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তাদের জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। এটা মুনাফার সময় নয়। চিরাচরিত প্রথার বাইরে গিয়ে কিছু করাটা জরুরি। কারণ, দেশ তো এক কঠিন পথে চলেছে। এ থেকে উত্তরণ পেতে হলে রাজনৈতিক দলকে আসতে দিন। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে তারা এসব সমস্যার সমাধান করবে। কাজেই আসুন, এ সময় আমরা সবাই মিলে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে সহায়তা করি; যাতে তারা সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচনের দিকে যেতে পারে। আমরা যেন তাদের ওপর বোঝা না চাপাই। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্র্বতী সরকারের সফলতার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি এবং প্রস্তুত থাকব।
আজকের প্রকাশিত সহযোগীদের আরো কিছু খবর-
যুগান্তরের শিরোনাম ‘ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন’। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে মাইনাস করে ছাত্রনেতাদের ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নেতাদের মতে, একটি দলের ইন্ধনে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে ঘোষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে দেশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। নির্বাচনকে বিলম্বিত করে তারা চলমান শাসন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বলেও মনে করেছেন নেতারা। সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি নেতারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বলে জানা গেছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা অরাজকতা তৈরি করবে। জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাত্র নেতাদের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এবং এরপর তার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সাক্ষাতের বিস্তারিত তুলে ধরেন। বৈঠক সূত্র জানায়, রোববার রাতে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মির্জা ফখরুল। সাক্ষাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে ছাত্ররা এককভাবে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দিলে দেশে যে বিশৃঙ্খলা-সংকট তৈরি হবে, সেই শঙ্কার কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান মির্জা ফখরুল। একই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্ল্যাটফর্মের নেতারাও ‘ঘোষণাপত্র নিয়ে’ বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একটিই এজেন্ডা ছিল তা হলো-ছাত্রদের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের নতুন উদ্যোগ। ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় বিএনপি নেতারা এ প্রসঙ্গ নিয়ে নানামুখী অভিমত ব্যক্ত করেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে নেতারা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্ল্যাটফর্মের এই নতুন উদ্যোগের সঙ্গে জনগণ, রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কেউ যুক্ত নন। ছাত্ররা তাদের নিজেদের মতো করে বাংলাদেশের একটি চরিত্র দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। তারা যে সংবিধান বাতিল করে দেওয়ার কথা বলছে, সেই সংবিধানের আলোকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রের একটা কাঠামোগত অবস্থান আছে। বাহাত্তরের সেই সংবিধান বাতিল করে দেওয়া হলে দেশে একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং সেই পরিস্থিতি জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করে দিতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কারা পৃষ্ঠপোষকতা করছে-স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কয়েকজন নেতা সেই প্রশ্নও তোলেন। নেতাদের কেউ ছাত্র আন্দোলনের এসব উদ্যোগের দৃশ্যমান কোনো পৃষ্ঠপোষক খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে একটি ইসলামি দলের ইন্ধন আছে বলে মনে করেন নেতারা।
আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ‘শিশুরা পাচ্ছে না বেশির ভাগ বই’। খবরে বলা হয়, শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে এবার আর ‘বই উৎসব’ করে শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হচ্ছে না। সব শিক্ষার্থী বই পাচ্ছেও না। যারা পাবে, তারাও আজ বছরের প্রথম দিনে সর্বোচ্চ তিনটি বই পেতে পারে। কারণ, ৪০ কোটির বেশি বই দরকার হলেও গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছে মাত্র সাড়ে ৬ কোটি বই। সব উপজেলায় বই পাঠানোও হয়নি। অবশ্য সরকারের বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, অর্থের অপচয় রোধে এবার বই উৎসব হচ্ছে না। প্রথম দিনে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অন্তত তিনটি বই এবং জানুয়ারির মধ্যে সব বই তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তারা। বইয়ের চাহিদা পূরণে প্রথম দিনই সব পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। এনসিটিবি সূত্র বলছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং ক্ষমতার পটপরিবর্তনের কারণে পাঠ্যবই ছাপানোর দরপত্র, পুনঃদরপত্র প্রক্রিয়ায় এবার অনেক দেরি হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল, বইয়ে সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন হয়েছে। এতে দরপত্রপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে অক্টোবরে। কয়েকটি বইয়ের দরপত্রপ্রক্রিয়া এখনো চলছে। অন্যান্য বছর দরপত্রপ্রক্রিয়া জুনে শেষ হয়েছিল। এ ছাড়া এবার মানসম্মত কাগজ ও কালির ব্যাপক সংকট ছিল। সব মিলিয়ে সময়মতো বই ছাপানো শুরু করা যায়নি।
বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম, ‘আস্থা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ চান ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দেশে চলমান গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রূপান্তর ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন। মূল্যস্ফীতি, ঋণের সুদহার বৃদ্ধি এবং বিদেশি বিনিয়োগের ঘাটতির পাশাপাশি উৎপাদন ও জ্বালানি সংকটে দেশের অর্থনীতি চাপে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের আস্থা ও গণতন্ত্রহীন পরিবেশে বিনিয়োগ ও শিল্পের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস ও সম্মানের পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। গণঅভ্যুত্থানের কারণে অনেক ব্যবসায়ী নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার হচ্ছেন। তারা মনে করেন, নতুন বছরে ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতার জন্য স্বচ্ছ নীতিমালা প্রয়োজন। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জনসাধারণের দুরত্ব কমিয়ে চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম, ‘গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের দাবি‘। প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। তারা বিচারিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন এবং শেখ হাসিনাসহ গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানান। সমাবেশে ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সেইসাথে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বর্তমান সরকারকে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার তাগিদ দেন। অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনের হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিভিন্ন ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কষ্ট তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
Dhaka, Bangladesh শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:21 AM |
Sunrise | 6:42 AM |
Zuhr | 12:03 PM |
Asr | 3:05 PM |
Magrib | 5:25 PM |
Isha | 6:46 PM |