আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:৫৭

শিরোনাম :

‘বিগত ১৫ বছরের তথ্য নিয়ে নানা বিভ্রাট রয়েছে, তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে:অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ‘চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে ,সেই কারণে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি’র সমমনা দল ও জোট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছিলেন তার ‘তীব্র প্রতিবাদ’ জানিয়েছে ভারত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ আর নেই(ইন্না লিল্লাহি……রাজিউন) প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ খেতাবে ভূষিত করেছে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে:ড. বদিউল আলম মজুমদার নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত

ভাষা আন্দোলনের তৃতীয় দফা এখনো পূরণ হয়নি

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান-ব্যাংকের ভাষা ইংরেজি করার কোনো দরকার নেই। কারণ সেখানে সবাই বাঙালি গ্রাহকই লেনদেন করে থাকেন। যারা এলসি খুলবেন তাদের জন্য কেবল ইংরেজি থাকলেই চলবে। আর্থিক লেনদেনসহ যাবতীয় বিষয় বাংলা ভাষায় সম্পন্ন হলে প্রতারণা ও জালিয়াতি কমবে এবং সকলে সুবিধা ভোগ করবেন। অনেক কাজের সাথে ভাষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যাংক থেকে নানা কাগজ দেয়া হয়, কিন্তু ইংরেজি হওয়ার কারণ অনেকে বুঝতেই পারেন না কোনটা আসলে কী?  ১৯৪৭ সালে ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে এই উপমহাদেশ ভাগ হয়। আর এর মাধ্যমেই পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র হওয়ার পেছনে বাংলা ভাষাভাষী এই অঞ্চলের মুসলমানদের বড় ভ‚মিকা ছিল। সে সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝে বা না বুঝেই হোক আমাদের নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন এবং পাকিস্তার রাষ্ট্র কায়েম করেছেন। এই পাকিস্তান রাষ্ট্র কায়েম করার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুসহ যারা পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ছিলেন তাদের অনেক নেতাই অনুধাবন করেন, এটি একটি বড় ধরনের ভুল হয়েছে। বাঙালির মাতৃভাষা আক্রান্তই হলো পাকিস্তান সৃষ্টির ভুলের মাশুল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকেই চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর প্রথম আক্রমণ আসে ভাষার ওপর। বাঙালি জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হওয়ার ক্ষেত্রে ভাষার ওপর এই ধাক্কা বিরাট উপাদান হিসেবে কাজ করেছিল। তখন আমাদের সব কিছুর ওপর একের পর এক হামলা আসতে শুরু করলো। পঞ্চাশের দশকের শেষে এবং ষাটের দশকের শুরুতে রবীন্দ্র সংগীতের ওপর হামলা আসে এবং রবীন্দ্র সংগীত গাওয়া যাবে কিনা এ নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়। সে সময় যারা বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করলেন তাদের ভারতের দালাল হিসেবে গালাগালি করা শুরু হয়। অনেকে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নিপীড়ন এবং উৎপাতের শিকার হয়েছেন। পরবর্তী পর্যায়ে ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হলেন অর্থাৎ তাদের বুকের তাজা রক্ত দানের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত হয় ও পরে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। ভাষাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম বড় অর্জন। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের মূলত তিনটি দাবি ছিল। এই তিনটি দাবিতে আন্দোলনকারীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন থেকে মিছিল বের হয়েছিল। সেই মিছিলেই দাবি তিনটি ছিলÑ এক. রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, দুই. রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, ৩. সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু চাই। ভাষা আন্দোলনের ব্যানার-প্ল্যাকার্ডে মূলত এই তিনটি ¯েøাগানই ছিল।
>> ওই তিনটি দাবির মধ্যে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় দাবি রাজবন্দিদের মুক্তির বিষয়টি তো আগেই ফয়সালা হয়েছে। তাদের আমরা ভাষাসৈনিক হিসেবে সম্মান করেছি। ভাষা আন্দোলনের তিনটি দাবির মধ্যে ওই দুটি দাবি সম্পূর্ণরূপে পূরণ হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় দাবিটি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু বা ব্যবহার বাস্তবায়ন হয়নি। ভাষার মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র পাওয়ার পর বাংলা ভাষাকে যেভাবে সর্বস্তরে চালু করার কথা ছিল তা ততটা হয়নি। ভাষা নিয়ে আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে অনেকের যে অভিপ্রায় ছিল, আমরা তার ততটা পূরণও করতে পারিনি। আমাদের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র যেখানে বাংলা ভাষা চালু করার কথা ছিল তা হয়নি। আইন-আদালত, বিশেষ করে উচ্চতর আদালতে বাংলা ভাষার প্রয়োগ হচ্ছে না। অবশ্য দুই-একজন আইনজীবী বাংলায় রায় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মামলার রায়গুলো যাদের ওপর বর্তায় অর্থাৎ বাদী এবং বিবাদী উভয়েই বাঙালি। কিন্তু তারপরও সেখানে বাংলা ভাষার প্রয়োগ নেই। এমন অনেক লোক আছেন, যারা বাংলাও ঠিক মতো বোঝে না, তাদের জন্য রায় লেখা হয় ইংরেজিতে। আদালতে বাংলা ভাষা প্রয়োগ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় দেশে উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার ব্যবহার নেই। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখনই অনেক বেশি বাংলা ভাষা ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু এখন বাংলা ভাষার ব্যবহার কমে আসছে। উচ্চশিক্ষায় ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে বাংলার ব্যবহার একেবারেই নেই। সেখানে একটি পাঠ্যপুস্তকেও বাংলা অক্ষর নেই। এর মূল কারণ পাঠ্যপুস্তকের বড় ধরনের সংকট। উচ্চশিক্ষায় বেশিরভাগই পাঠ্যপুস্তক ইংরেজিতে, সেজন্য এই সমস্যা আরো প্রকট। ব্যবসা-বাণিজ্যের যেসব পাঠ্যপুস্তক রয়েছে সেগুলো এক সময় অনেকে বাংলা করার চেষ্টা করেছিলেন। যেমন ব্যবস্থাপনা এবং হিসাববিজ্ঞানের কিছু বই বাংলায় বের হয়েছিল। ‘বাজারজাতকরণ’ বিষয়ে বাংলায় কোনো বই ছিল না। সত্যিকার অর্থে ১৫ বছর আগে ‘বাজারজাতকরণ’ বিষয়ে আমি বাংলায় একটি বই লিখি। কিন্তু এই ধারাটা পরবর্তী পর্যায়ে একেবারেই থেমে যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বেসরকারি এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরস্পর প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যখন ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা ইংরেজি মাধ্যমে শুরু করে, তখন এটাকে অনুসরণ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে বাংলা আর ব্যবহার না হওয়ায় যারা বাংলায় ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক বই লিখলেন তারাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষার ভাষা হয়ে যায় ইংরেজি। ব্যবসা যেহেতু এখন আন্তর্জাতিক বিষয়, কাজেই কেউ কেউ আবার ইংরেজির পক্ষে কথা বলেন। আমাদের ব্যবসার সাথে আমদানি-রপ্তানি জড়িত, কাজেই ইংরেজি লাগবে। কিন্তু এর বিপরীত ভাষ্যও কিন্তু আছে। যারা ইংরেজিতে পড়াশোনা করে তাদের মাত্র কয়েকজন আমদানি-রপ্তানির সাথে জড়িত। বিদেশে এই আমদানি-রপ্তানির জন্য কেবলমাত্র চিঠিপত্র লিখতে হয়। এ কারণে পুরো কোম্পানিতে ইংরেজিতে চিঠিপত্র লিখতে পারেন এমন একজন লোক থাকলেই তো চলে। বাকিরা যারা অন্যান্য পণ্য বিক্রি করবেন তাদের জন্য ইংরেজি জানার প্রয়োজন নেই। পরিকল্পনার এবং সৃজনশীল কাজের জন্য তো ইংরেজি জানার প্রয়োজন নেই। যেমন গার্মেন্টস সেক্টরে আমদানি করার জন্য ইংরেজি জানা একজন লোক থাকলেই তো চলে। চাইনিজরা এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সারা পৃথিবীর বাজার এখন তাদের দখলে। কিন্তু চীনে ইংরেজি নিষিদ্ধ। আসলে ইংরেজির ব্যবহার আমাদের অনেকটাই দাসত্ব মনোবৃত্তি। ইংরেজির সাথে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। ইন্টারনেটে ইংরেজিতে যোগাযোগের জন্য এক ধরনের পদ্ধতি আছে তা অনুসরণ করলেই হয়। সবার ইংরেজি জানার দরকার নেই। কিন্তু আমরা সবাই ইংরেজির ওপর জোর দিচ্ছি। এর ফলে আমরা কেউ ভালোভাবে ইংরেজি শিখতেই পারছি না। কারণ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বাংলায় পড়াশোনা করে। উচ্চশিক্ষায় এসে হঠাৎ করেই ইংরেজিতে পড়তে হয়। এতে ভাষার কারণে এক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার কারণে বিষয়ের ওপর নজর না দিয়ে ভাষার পেছনে সময় নষ্ট হয়। শিক্ষার্থীরা যদি বাংলায় পড়তে পারত তাহলে তারা আরো বেশি সৃজনশীল হতো। আমি ক্লাসে দেখি তারা বিষয়টি বোঝে কিন্তু যখন তাদের বলতে বলা হয়, ইংরেজিতে বলতে পারে না। অর্থাৎ কোনো পরিকল্পনা বা বিষয় মাতৃভাষা প্রকাশের যে স্বস্তি এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ অনুভব করা যায়, ইংরেজিতে কিন্তু ততটা হয় না।
>> আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া পৃথিবীতে এই চারটি দেশের বাইরে আর কোথাও ইংরেজি নেই। ইংল্যান্ডের নদীর ওই পাড়ে ফ্রান্স। কিন্তু সেখানে কেউ ইংরেজিতে কথা বলে না। জার্মানি, ইতালিতেও কেউ ইংরেজিতে কথা বলে না। ইউরোপে প্রায় সব দেশ একে-অপরের সাথে জড়িত। কিন্তু সেখানেও তারা সব কিছুতেই নিজেদের ভাষা ব্যবহার করে। তবে তারা ভালো ভালো ইংরেজি বইগুলো নিজেদের মাতৃভাষায় অনুবাদ করে নিয়েছে। আর এই কাজ করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বাংলা একাডেমিতে এক সময় পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর জন্য আলাদা বিভাগ ছিল। সে সময় বাংলা একাডেমির লোকজন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মতো লেখকদের পেছনে ঘুরে ঘুরে পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করতেন। আজ থেকে ১৫ বছর আগে বাংলা একাডেমির তাগিদে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ বই আমি যখন লেখি, তখন তাদের লোক প্রতিদিন আমার অফিসে পাণ্ডুলিপির জন্য বসে থাকত। তখন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের বই ছাপানোর জন্য টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়া হতো। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম অর্জন হলো এই বাংলা একাডেমি। কিন্তু তারা অন্যান্য বিষয়ে যেভাবে জোর দিয়েছে, সে তুলনায় একাডেমিক পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে তারা আরো জোরালো ভ‚মিকা রাখতে পারত। এতে প্রত্যেক বছর আমরা একটি বিষয়ে একটি করে বই বের করতে পারতাম। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ১০০ বা ১২০-এর মতো বিষয় পড়ানো হয়। এসব বিষয়ে বছরে একটি করে বই বের হলে গত কয়েক বছরে ১ হাজার ২০০ পাঠ্যপুস্তক বাজারে পাওয়া যেত। একজন একটি করে বই লিখতে সক্ষম এমন লোক বাংলাদেশে আছে। এই কাজটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে রুটিন মোতাবেক করতে হবে। আমরা পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি, কিন্তু পাঠ্যবই তৈরি করতে পারবো নাÑ এটা হয় না। বিদেশে নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের অনেক ভালো শিক্ষক আছেন। তাদের যদি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ মহল থেকে চিঠি দেয়া, সম্মানসূচক প্রাণোদনা এবং স্বীকৃতি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে তাদের কাছ থেকে পাঠ্যবই বের করে আনা কঠিন কোনো কাজ হবে না। বাংলা একাডেমি প্রত্যেক বছর বইমেলায় অনেক বই বের করে। কিন্তু এ বইয়ের অনেকগুলোই আছে, যার কোনো আলো নেই। অনেকগুলোই অপাঠ্য। হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘এইগুলো পড়লে আলোকিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এগুলো আগুনে পুড়ালে হয়তো কিছু আগুন জ্বলবে।’ এগুলো কাগজ এবং কলমের অপচয়।
>> আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ করতে হবে। এখন ইউনিয়ন পর্যন্ত স্বাস্থ্য এবং তথ্যসেবা পৌঁছে গেছে। এই স্বাস্থ্যসেবা এবং ইন্টারনেট সুবিধা যারা পাচ্ছেন, তাদের ভাষা তো বাংলা। রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন, ি চকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্র লিখেন ইংরেজিতে। এগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। চিকিৎসক নিজে বাঙালি তার রোগী দরিদ্র বাঙালি। কাজেই সেখানে ইংরেজি ব্যবহারের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। চিকিৎসক বাংলায় প্যারাসিটামলও লিখতে পারতেন, সকালে একটি এবং বিকেলে একটি এমনটি না লিখে চিকিৎসক লিখেন ইংরেজিতে। তারা লিখেন সাংকেতিক ভাষায় ওয়ান প্লাস ওয়ান। যেটা সাধারণ রোগীদের বোঝার কোনো উপায় নেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট ইংরেজিতে লেখার কোনো প্রয়োজন নেই। দেশের যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা বাঙালি, যাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে তারাও বাঙালি। কাজেই এ ক্ষেত্রেও বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
>> প্রথমত, আমাদের কতকগুলো বিষয় আইনগত বাধ্যবাধকতার ভেতর নিয়ে আসতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। মাঝে মাঝে ইংরেজি বলতে এবং লিখতে পারা মানে বড় কিছু হয়ে যাওয়াÑ এই মনমানসিকতা থেকে বের হয়ে আসা খুবই জরুরি। আর একটি বিষয় হলো বিশ্বায়নের যুগে আমাদের শিল্প-সাহিত্য চর্চা। এই বিষয় এখন সারা বিশ্বে আদান-প্রদান হচ্ছে। এক দেশের সাহিত্য অন্য দেশে অনূদিত হচ্ছে এবং প্রভাব পড়ছে। বিশ্ব শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, স্থাপত্য জানতে হলেও আমাদের বাংলা ভাষার দুয়ার খুলতে হবে। পৃথিবীর সেরা সাহিত্যগুলো কিন্তু ইংরেজি ভাষায় নয়। আমাদের অনুবাদ সাহিত্য আরো বাড়াতে হবে। কালজয়ী বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করতে হবে। আমাদের মনোজগতে ইংরেজি নিয়ে একটি ঔপনিবেশিকতা তৈরি হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসন নেই, কিন্তু তাদের চিহ্ন থেকে আমরা বের হতে পারিনি। আমরা চাচ্ছি সর্বস্তরে বাংলা চালু হোক, বাংলা ভাষা যথাযথ মর্যাদা পাক; কিন্তু এই ঔপনিবেশিক মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে তা সম্ভব হবে না। আমরা খাদ্যদূষণ, ফরমালিন, ভেজাল তেল, দুধে পানি মেশানোসহ ভোগ্যপণ্যের বিষয়ে খুবই সচেতন। কিন্তু আমাদের ভাষা দূষণ হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা কথা বলি না। বর্তমানে এফএম রেড়িওতে ভাষার কী পরিমাণ দূষণ হয়েছে তা বর্ণনাতীত। বাংলা ভাষার ঐতিহ্য হারিয়ে আমরা জগাখিচুড়ির মতো অবস্থায় উপনীত হয়েছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে শব্দ নিয়ে আমরা যে ভাষা তৈরি করছি তা আমাদের আত্মমর্যাদার জন্য অসম্মানজনক। বাংলা ভাষায় কিছু বিদেশি শব্দ রয়েছে যেগুলো আমরা বাংলা হিসেবেই গ্রহণ করেছি।
>> বাংলা অনেক সমৃদ্ধ ভাষা। এর শব্দভাণ্ডার অফুরন্ত। রয়েছে নানা বৈচিত্র্য এবং মাধুর্য। শিক্ষিত সমাজ, শিক্ষকদের এবং গণমাধ্যমের জন্য একটি পরিমিত বাংলা ভাষা দরকার। শিক্ষকরা যদি নিজেই ভালো বাংলা না বলতে পারেন তাহলে শিক্ষার্থীদের শেখার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের গ্রামে ও শহরে মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলা পড়ানোর মতো ভালো কোনো শিক্ষক নেই। এটি একটি বড় সংকট। এক সময়ে স্কুলে পণ্ডিত মশাইরা ছিলেন, যারা বাংলা পড়াতেন। শব্দের উৎপত্তি, বাংলা ব্যাকরণে তাদের ভালো দখল ছিল। রাজনৈতিক নানা কারণে সেই পণ্ডিত মশাইরা এখন দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এসব শিক্ষক অত্যন্ত অধ্যবসায়ী ছিলেন। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির ওপর জোর দিয়েছি, কিন্তু ভাষার দিকে খেয়াল নেই। এতে আমরা না পারছি ভালো বাংলা বা ইংরেজি শিখতে এবং বলতে। অনেক কাজের সাথে ভাষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যাংক থেকে নানা কাগজ দেয়া হয়, কিন্তু ইংরেজি হওয়ার কারণ অনেকে বুঝতেই পারেন না কোনটা আসলে কী? শেয়ারবাজারের যাবতীয় কার্যক্রম ইংরেজিতে। কিন্তু সেখানে তো তেমন কোনো বিদেশি লোকজন জড়িত নয়। আর যদি থাকেও তাহলে তাদের নিজস্ব লোক থাকার দরকার। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ থেকে বলে দেয়া উচিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক প্রতিবেদন বাংলায় হবে। ইংরেজিতে হওয়ার কোনো কারণ নেই। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানকে বাংলা ভাষা সর্বস্তরে প্রয়োগের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আদালতে বাংলার ব্যবহার করতেই হবে। উচ্চশিক্ষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য বাংলা একাডেমির আলাদা একটি সেল গঠন করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব-নিকাশ, বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরিসহ সব কর্যক্রম বাংলায় করতে হবে। ভাষা আন্দোলনের দাবি ছিল সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা। কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি। কাজেই এখন জাতীয় দায়িত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতেই হবে। যে জাতি মাতৃভাষাকে গ্রহণ করে না, সে জাতি এগিয়ে গেছে এ রকম কোনো নজির বিশ্বের ইতিহাসে নেই। চীন, কোরিয়া, জাপানসহ অন্যান্য জাতি নিজেদের মাতৃভাষাকে ব্যবহার করেই উন্নত হয়েছে। অন্যের কাছ থেকে ধার করা ভাষা ব্যবহার করে তারা উন্নত হয়নি।
>> লেখকঃ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।     

Please follow and like us:
error20
fb-share-icon
fb-share-icon20

লেখকের কলাম

আরও পড়ুন

গত ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ

  • আর্কাইভ

    আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসররা দূর্নীতি করে সেকেন্ড হোম বানিয়ে পালিয়ে আছে : আমিনুল হক

    ‘বিগত ১৫ বছরের তথ্য নিয়ে নানা বিভ্রাট রয়েছে, তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে:অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

    ‘চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে ,সেই কারণে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী

    “প্রথম বাংলাদেশ-আমার শেষ বাংলাদেশ”

    আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় বিএনপি’র সমমনা দল ও জোট

    কুষ্টিয়ায় র‌্যাবের অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ১ জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার

    কুষ্টিয়ায় চেয়ারম্যান পুত্রের উপর জাসদ গণবাহিনীর হামলা

    আগামীকাল উত্তরা পর্ব থানা বিএনপির কর্মিসভা ও ৩১ দফার কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে:প্রধান অতিথি থাকছেন আহ্বায়ক আমিনুল

    তারেক রহমানের নির্দেশনায় গাবতলী উপজেলার পদ্মপাড়া গ্রামে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্র বিতরণ করবে “কৃষিবিদবৃন্দ”

    ইতালিতে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করলো কিশোরগঞ্জের সায়ক মিয়া

    টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেইলি ব্রিজ ভেঙে পাথর বোঝাই ট্রাক তুরাগ নদীতে

    “যুবলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনের সহযোগী সন্ত্রাসী পিস্তল জাহিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট”

    অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ নারী দল

    প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন

    উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছিলেন তার ‘তীব্র প্রতিবাদ’ জানিয়েছে ভারত

    “পতিত” আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসন রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে : আমিনুল হক

    চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান— রাজধানীর মোহাম্মদপুরে শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে তারেক রহমান

    উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ’র মৃত্যুতেবিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান-এর শোকবার্তা

    বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ আর নেই(ইন্না লিল্লাহি……রাজিউন)

    প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ খেতাবে ভূষিত করেছে

    আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে এবার শত শত কোটি ডলারের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার

    পূর্বাচলে পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক শিক্ষার্থী নিহত ,আহত আরও দুই শিক্ষার্থী

    ফিনল্যান্ড বিএনপির আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

    আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

    আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে:ড. বদিউল আলম মজুমদার

    নতুন করে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত

    ফরিদগঞ্জে চাঁদপুর খবর’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

    আজকের যুদ্ধ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার: তারেক রহমান

    দেশ ও জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে গতির ভূমিকা অপরিহার্য : বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমান

    যুক্তরাজ্যের লেবার মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৪ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

    • Dhaka, Bangladesh
      রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
      SalatTime
      Fajr5:16 AM
      Sunrise6:37 AM
      Zuhr11:57 AM
      Asr2:57 PM
      Magrib5:17 PM
      Isha6:38 PM
  • সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুল হাসান বাবলু
    ই-মেইলঃ dk.kamrul@gmail.com
    copyright @ বাংলাদেশ দিনকাল / বিডি দিনকাল ( www.bddinkal.com )
    বিডি দিনকাল মাল্টি মিডিয়া (প্রা:) লিমিটেড প্রতিষ্ঠান।