সুজন মেহেদী হাসান:- সাংবাদিকতাকে বলা হয় “সেল্ফ-রেগুলেটেড’ পেশা। এর অর্থ হচ্ছে সাংবাদিকরাই সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করবে– এই ধারণা এসেছিলো আমেরিকার ফাউন্ডার ফাদারদের কাছ থেকে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো তাদের নীতিমালা ঠিক করে ও পালন করে। যেমন এসপিজে-বা সোসাইটি ফর প্রফেশনাল জার্নালিস্ট। এসপিজে নীতিমালাকে বলা হয় আমেরিকার সাংবাদিকতার বাইবেল। এখানে যে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে গেলে আপনি এই নীতিমালা জানেন কিনা তার পরীক্ষা দিতে হয়, মানবেন কি-না তার গ্যারান্টি দিতে হয়। এরমানে এই না যে আমেরিকার সব সাংবাদিক খুব নীতিবান। না মানতে পারলে সাংবাদিকতা থেকে সরে দাড়াতে হয় বা বড় প্রায়শ্চিত্ব করতে হয়।(আমার কথা বিশ্বাস না হলে জ্যানেট কুক, জেসন ব্লেয়ার, জ্যাক কেলি এই নাম গুলো লিখে গুগল করে দেখে নিন।) ভুল তথ্য দেয়ার কারণে প্রতিবছর অনেক সাংবাদিক এদেশে চাকরি হারায়।
আপনি যদি স্থানীয় প্রেসক্লাবের সদস্য হন, আপনাকে একটা নীতিমালা দেয়া হয়। কোন কারণে আপনি না মানতে না পারলে আপনাকে পদ হারাতে হবে।
যাই হোক, মূল কথায় ফিরে আসি। কথা বলছিলাম সেল্ফ রেগুলেশন নিয়ে। নরম্যাটিভ ধারণা হচ্ছে– সাংবাদিকতা হবে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগনের পক্ষে, সত্যের পক্ষে। (আমার আমেরিকান শিক্ষক বলেছেন, আমেরিকান সাংবাদিকরা যদি দেশপ্রেমিক হওয়ার চেষ্টা না করতেন, ইরাক আগ্রাসন হতো না, সাংবাদিকদের কাজ দেশের পক্ষে সাফাই গাওয়া না) সাংবাদিক নিজে ঠিক করবে তার আইন তারপর সেই আইন মেনে চলবে, অন্য কেউ তাকে বাধ্য করবে না। কারণ কোন কারণে সাংবাদিকতার মধ্যে ভয় ঢুকে গেলে দেশ ফ্যাসিবাদে রূপ নেয়। জার্মানি, ইত্যালিতে এমনটাই হয়েছিলো বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে। মহাত্মা গান্ধী স্বাধীন সাংবাদিকতার এমনকি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেতেও রাজি ছিলেন। আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন বলতেন, সাংবাদিকতার শত খারাপ উপসর্গ থাকলেও আমি স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে সম্ভব সব পদক্ষেপ নেব।
সাংবাদিকতায় কোন তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন কি পারবেন না, কোন ছবি ছাপাতে পারবেন কি পারবেন না–এ নিয়ে কোন নিয়ম নেই। কারণ সাংবাদিকতার কাছে সবার আগে তার সংবাদমূল্য। আগেই বলেছি এক্ষেত্রে কাজ করবে সেল্ফ রেগুলেশন। কারণ এখনো তর্ক হয় আয়নাল কুর্দির মৃতদেহ, সোমালিয়ায় শকুনের সামনে শিশুর মৃত্যুর ছবি, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় পলায়নরত নগ্ন মেয়েটির ছবি প্রকাশ ঠিক হয়েছিলো কি-না তা নিয়ে। এসপিজে কোড-এ দ্বিতীয় অধ্যায়ের শিরোনাম -মিনিমাইজ হার্ম অর্থাৎ সাংবাদিকতার কাজ হলো ক্ষতি কমানো। আপনি কার ক্ষতি কমাবেন? খুনি’র, ধর্ষণকারীর, মালিকের, বিজ্ঞাপণদাতার, প্রভাবশালী রাজনীতিবীদের, সরকারি প্রতিষ্ঠানের? নাকি ভিকটিমের? সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম কর্মীরা ভালো করেই জানেন ভিকটিম কে? বুঝতে না পারলে অন্যদের সাথে আলোচনা করে নিতে কোন দোষ নেই।
( ডিসক্লেইমার: আমি সাংবাদিকতার ওপর লেখাপড়া ও গবেষণা করি, তাই এই আত্মসমালোচনা করলাম)