- প্রচ্ছদ
-
- প্রধান খবর
- ভোটে নয়, রাজপথেই হবে ‘সরকার পতন’: মেজর হাফিজ
ভোটে নয়, রাজপথেই হবে ‘সরকার পতন’: মেজর হাফিজ
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ
বিডি দিনকাল ডেস্ক :-ভোটে নয়, রাজপথেই ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ভোটারবিহীন জালিম সরকারের পতন ঘটাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জ্বল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য এবং গৃহবন্দি থেকে নিঃশর্ত মুক্তির করণীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মেজর হাফিজ, ‘যতদিন এই সরকার ক্ষমতায় আছে ততদিন ভোট কেন্দ্রে সাধারণ নাগরিক যেতে পারবে না। জনগণের ভোটের মাধ্যমে যেহেতু সরকার পরিবর্তনের আর সুযোগ নেই, তাই একমাত্র উপায় গণঅভ্যুত্থান।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ যদি রাস্তায় নেমে আসে ওই যে আমি বলেছি, দুই লাখ লোক দু’দিন রাস্তায় থাকেন পালিয়ে যাবে তারা (আওয়ামী লীগ সরকার)। সেই সাহস সঞ্চয় করে আসুন আমরা আগামী দিনে এই সরকারকে বিতাড়িত করতে রাজপথে আবার নেমে আসি।’
চলমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় নির্বাচনে দলের অংশ গ্রহনে নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘‘ কেনো আমরা এই ধরনের নির্বাচনে যাই? যখন নির্বাচনে যাওয়া উচিত না তখন যাই, যখন যাওয়া উচিত তখন যাই না। যে দিন সংসদে যাওয়া উচিত না সেই সংসদে গিয়ে আমরা বসে থাকি। যার জন্য আজকে বিএনপিকে চার‘শ ভোট দেয়। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ওদের প্রার্থী পেয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ভোট আর আমাদের প্রার্থী পেয়েছে ৪‘শ ভোট।”
‘‘ আরে বিএনপির এজেন্টই তো হাজারেরও বেশি। আমাদের কোনো এজেন্ট ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেন না, কোনো ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে না এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে না-এই হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র।”
তিনি বলেন, ‘‘ যদি আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শের অনুসারী হয়ে থাকি তাহলে আমাদের দলেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে।জিয়াউর রহমানের সত হতে হবে, তার মতো সাহসী হতে হবে এবং দেশের স্বার্থে কখনো কোনো ধরনের আপোষ করা যায় না।”
‘‘বেগম খালেদা জিয়া আপোষ করেননি। কিন্তু আমরা অনেকে আপস করে বসে আছি। আজকে দূঃখের বিষয় খালেদা জিয়ার মতো নেত্রী তিনি বছরের পর বছর জেলে কাটালেন আমরা কী করতে পেরেছি?।”
‘উগ্রবাদীদের উত্থানে উদ্বেগ’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ সবচাইতে বড় অশনিসংকেত আমি দেখতে পারছি- বিএনপি তো এখন ডাক দিলে রাস্তায় নামাতে পারে না। আমাদের এতো শক্তিশালী ছাত্র দল ছিলো তাদেরকে রাস্তায় নামাতে পারে না। কেনো তাদের নামাতে পারেনা আমি জানি না। কারণ আমি এই দলের এতো বিরাট নেতাও না। কিন্তু অন্যদিকে যে,..। তোমারে বধিবে সে, গকুলে বাড়িছে সে। ইসলামী মৌলবাদীদের মিছিল দেখেন, তাদের সংখ্যা দেখেন রাজপথে।”
‘‘যদি আমরা ব্যর্থ হই। এই সরকার তো যাবে, আওয়ামী জাহিলাতের অবসান হবেই।এই ধরনের একটা নষ্ট পঁচা সরকারকে বাংলাদেশের মানুষ বেশিদিন সহ্য করবেনা।কিন্তু তার পরিবর্তন কীভাবে আসবে? কারা এদেরকে সরাবে-এটাই দেখার বিষয়। আমরা যেটা দেখতে পারবো, এটা বেশি দূরে নয়। তবে এই রাষ্ট্র যদি উদার রাজনৈতিক ধারা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবার মোল্লাদের খপ্পরে পড়ে এই জন্য শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবেন। আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি চাই না। আমরা চাই, সরকার পরিবর্তন হোক ভোটের মাধ্যমে।”
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘দুঃখ লাগে এই সামরিক বাহিনী আমরা সৃষ্টি করেছি। কত সন্মানের পাত্র ছিলো তারা। নির্বাচনের সময়ে সেনা বাহিনী যেখানে যেতো দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যেতো। আর এ্খন। গত নির্বাচনের আগের রাত্রে সব ভোট দিয়ে ফেললো আর সেনা প্রধান বললেন, এতো ভালো ভোট আমি জীবনে দেখিনি।”
‘‘সুতরাং আমাদের যে শেষ ভরসার স্থল সেটিও চিন্তাভাবনার বিষয় তাদের অবস্থান কী? অত্যন্ত দূঃখ লাগে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাক. এই সেনাবাহিনীর জন্য কষ্ট লাগে- আমরা এই সেনা বাহিনী সৃষ্টি করেছি একাত্তর সালে। ২৫ জন সেনা কর্মকর্তারা পাকিস্তান আর্মিতে আমরা যারা ছিলাম আমরা বিদ্রোহ করে মুক্তিবাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনা বাহিনী গড়ে তুলেছি। গত ৫/৭ বছরে এরা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখনো সাধারণ সৈনিকেরা ভালো আছে, জুনিয়র অফিসার-মিড লেভেল অফিসাররা ভালো আছে। শীর্ষ পর্যায় কয়েকজন নষ্ট হয়ে গিয়ে্ছে। আমরা সেনাবাহিনীকে রাজনীতি মুক্ত চাই। সেনাবাহিনী যেন বাংলাদেশের কোনো দলের সেনাবাহিনী নয়, জনগনের সেনাবাহিনী হয়-এটাই আমরা আশা করি।”
‘অটো প্রমোশন’ প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সারা বিশ্বের মানুষ কোবিডে আক্রান্ত, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ লাখ লোক মারা গেছে, এককোটির উপরে লোক আক্রান্ত, যুক্তরাজ্যের কত লোক আক্রান্ত। কোনো দেশে পরীক্ষা বন্ধ হয় নাই, সব দেশে পরীক্ষা হয়েছে। এই এক অভাগা বাংলাদেশ। বিনা পরীক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দিয়ে দিলো। মানে এমনই মেধা শূণ্যতা এসেছে আমাদেরকে গ্রাস করেছে, এমনই অপদার্থের দেশ বাংলাদেশ-একটা লোক মাথা খাটিয়ে বললো না, একটা লোককে জিজ্ঞাসাও হয়ত করে নাই যে, ভাই কিভাবে আমরা পরীক্ষাটা নিতে পারি?’
‘‘সারা পৃথিবীতে পরীক্ষা চলছে, যাদের লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে তারা পরীক্ষা নিতে পারছে। আর আমাদের সরকারি হিসেবে ৬ হাজার লোক মারা গেছে- আমরা কেনো পরীক্ষা নিতে পারছি না। আমাদের জাতিকে মূর্থের জাতিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কি শিক্ষা ব্যবস্থা এদে্শে এখন আছে। পরিকল্পিভাবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। এক অদ্ভুত উটের পীঠে চলছে বাংলাদেশ। মেধাশূণ্য করতে তারা (সরকার) এই অটোপ্রমোশন দিলেন।”
‘মেধাবী লোক সরকারের শত্রু’ উল্লেখ করে হাফিজ বলেন, ‘‘মেধাবী লোক হচ্ছে এদের শত্রু। ড. মুহাম্মদ ইউনুফ(নোবেল বিজয়ী)কে সারা বিশ্ব কত সন্মান করে। পৃথিবীর যেখানে যাবেন রাষ্ট্রপতি বাড়ির বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাবেন।আমাদের দেশে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়, তাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়, তাকে সুদখোর বলা হয়।”
‘‘এভাবে তো তারা দেশ থেকে মেধাবী ব্যক্তিদেরকে বিতাড়িত করে দিয়ে মূর্থের রাজত্ব তারা কায়েক করেছে, আরো করবে ভবিষ্যতে। গোষ্ঠি প্রীতি, খালি বংশের সুনাম শুনবেন, কার কী কী কৃতিত্ব জানি না।আমরা দুঃখ লাগে এই দেশটা আমরা সৃষ্টি করেছি, বাংলাদেশের মানুষ ইস্পাতকঠিন ঐক্যের মাধ্যমে এই দেশটাকে স্বাধীন করেছে, একাত্তরের যুদ্ধ ছিলো জনতার যুদ্ধ, কত ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে।আর আজকে এর ফল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটাকে তারা নষ্ট করেছে।”
৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা বিপ্লবে কর্ণেল তাহের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলো উল্লেখ করে জিয়াউর রহমান সাহসী ভুমিকার কথা তুলে ধরেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
সংগঠনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন,প্রফেসর শাহ আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা একেএম আবুল কালাম আজাদ ও কৃষকদল নেতা কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন বলেন, আওয়ামীলীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। অনেকে মনে করেন বিএনপি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে, এটা সঠিক নয়। বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।দিন দিন আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কমছে আর বিএনপির বাড়ছে। দেশের নব্বই ভাগ মানুষ বিএনপির সাথে আছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একবার ক্ষমতাচ্যূত হলে আর জীবনে আর ক্ষমতার মুখ দেখবে না।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন,পুরনো ব্যবস্থাকে দুমড়ে মুছড়ে নতুন রাজনৈতিক সমাজ গড়ার উদ্যোগই হল বিপ্লব।সাত নভেম্বর তেমনি একটি বিপ্লব। ৭নভেম্বরের পরের বাংলাদেশ তার আগের বাংলাদেশ থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। এ স্বাতন্ত্র্য সুন্দর ও মজবুত হয় অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে। সুন্দর হয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও। ৭ নভেম্বরের আগের বাংলাদেশে বিদ্যমান অগণতান্ত্রিক একদলীয় বাকশালের ঘন কুয়াশা ৭ নভেম্বরের পরের বাংলাদেশে কেটে গেছে। বহদলীয় গণতন্ত্রের অনুসারী দলগুলো ক্রমেই বিকশিত হতে শুরু করেছে। সংবাদপত্রের মুখে নতুনভাবে কথা ফুটেছে। আগের বন্ধ চোখে দৃষ্টি ফিরেছে। কান খাড়া হয়েছে। নির্বাহী কর্তৃত্বের নিয়ন্ত্রণ থেকে সরে ক্রমেই বিচার বিভাগ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের পর থেকেই রুশ-ভারতের অন্ধকার কক্ষপথ থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি মুক্তিলাভ করে বিশ্বময় বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ লাভ করে।৭ নভেম্বরের আগে যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছিল নিঃসঙ্গ, বন্ধুবিহীন, একাকী সেই বাংলাদেশ বিশ্বময় বহুসংখ্যক সুহৃদ ও শুভানুধ্যায়ীর গতিশীল হতে থাকে। ভারতীয় আগ্রাসন থেকে মুক্তি পায়।
সমাজতন্ত্রের নামে দেশে যে অপচয়প্রবণ দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো বিদ্যমান ছিল তার অবসান ঘটতে থাকে। ব্যক্তি উদ্যোগ এবং সৃজনশীল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। হেনরি কিসিঞ্জারের সেই নির্মম অভিধা- ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র শতছিদ্র একে একে বন্দ হতে থাকে।৭ নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্যের আর একটি দিক হলো সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
Please follow and like us:
20 20