আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:২৫
ডেস্ক :- মওদুদ আহমদ। আইনজীবী, লেখক, রাজনীতিবিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ। সবাই তাকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নামেই চেনেন। আইনজীবী হিসেবে শতভাগ সফল এই মানুষটি রাজনীতিতেও অনেক অবদান রেখে গেছেন। বই লিখেছেন অত্যন্ত নির্মোহভাবে। দল তার গতিরোধ করেনি। যা সত্য তাই লিখে গেছেন। এই কারণে তার বই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
ঘরের বাইরে থেকে অব্যাহতভাবে যন্ত্রণাকাতর আর্তনাদ ভেসে আসছিল। অমি মনে মনে এই অফিসারদের পদমর্যাদা বা বয়স অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম। আমরা যাদের নিয়ে এত গর্ব করি, আসলেই কি এরা সেই সেনাবাহিনীর অফিসার?
এদের বয়স কত? তারা কি আমাদের বাংলাদেশেরই নাগরিক, যাদেরকে সুসন্তান দাবি করে প্রতিমুহূতে আমরা গর্ব অনুভব করি- এরা কি তারা। বাবা-মা কিংবা বয়স্কদের সঙ্গে এভাবে শ্রদ্ধাহীনভাবে আচরণ করার জন্য কি তাদের ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল। নিজের দেশের জনগণ, নিজেদের ভাইবোনদের সঙ্গে এমন নির্দয় আচরণের জন্যই কি তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল। যাদের পেছনে আমরা প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার কষ্টার্জিত সম্পদ ব্যয় করে আসছি, মিলিটারি একাডেমির সেই প্রশিক্ষকেরা কি তাদের মন থেকে মানবিক মূল্যবোধ দূর করার জন্যই সারা বছর ট্রেনিং দিয়ে আসছে। পাঠ্য বইয়ে আমরা পড়েছি যে, প্রত্যেক সামরিক বাহিনীরই আবশ্যিকভাবে একটি বহিঃশত্রু থাকতে হয় এবং কোন শক্ত লক্ষ্যবস্তু না থাকলে তারা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ট্রেনিংই নিতে পারে না। তারা তখন নিজেরাই হয়ে পড়ে অস্তিত্বহীন। এখন তারা কাদের শত্রু বিবেচনা করছে? কী ধরনের পরিবার থেকে তারা এসেছে। চাষী পরিবার? সরকারি কিংবা সামরিক অফিসারদের পরিবার? রাজনীতিবিদদের ওপর তাদের এই বিষোদগারের কারণ কি? কোন ধরনের জেনারেলরা তাদের এহেন জঘন্য ধরনের আচরণ করতে নির্দেশ দিচ্ছে?
এ ধরনের প্রশ্ন যখন আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল সে সময় লোহার রড ও শিকলের একটা ঘড়ঘড় শব্দে আমি বাস্তব জগতে ফিরে এলাম। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক সেনারা যেভাবে হাজার হাজার নিরীহ যুবককে মুক্তিযোদ্ধা মনে করে সামনে পেছনে আচামোড়া করে দড়ি দিয়ে বেঁধে হত্যার জন্য অজানা গন্তব্যের দিকে নিয়ে যেত। আমি মনে করেছিলাম যে, ঠিক সেভাবেই এখন আমাকে লোহার শিকল ও শিক দিয়ে বেঁধে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হবে। এখন এরা আমার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করা হলো না। ‘আসলে আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্যই এই শব্দ করা হচ্ছে’, অবলীলাক্রমে অফিসারদের একজন এই কথাটা আমাকে জানিয়ে দিলো। ‘আমার সঙ্গে আপনারা কেন এরকম করছেন?’- এ কথা বলার সাথে সাথে তারা সবাই মিলে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে আরেকদফা সেই পুরনো বিষোদগার করলো। এরপর প্রায় একই সঙ্গে সবাই উঠে দাঁড়ালো তাদের চেয়ার থেকে। বললো, তারা আবার ফিরে আসবে।
তখন দু’পাশ থেকে দুজন লোক আমাকে ধরে ছোট্ট একটা ঘরে এনে চোখ খুলে দিয়ে লোহার দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিলো। সকাল থেকে শুরু করে একাধিক্রমে আট ঘণ্টা পরে সেই আলোবিহীন অন্ধকার ঘরে এসে এক প্রচণ্ড একাকীত্বের সম্মুখীন হলাম। দরজা ও জানালায় টিনের পাত লাগানো। ভেন্টিলেশনের বালাই নেই। অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে ঘর। কোন চাদর ও বালিশ ছাড়া ছোট একটা কাঠের চৌকি রয়েছে। ঘরের এক কোণে প্রশ্রাব করার জন্য লম্বা ধরনের একটি মগ। আমি মনে মনে নিশ্চিত ছিলাম যে, বাইরের বিশ্বচরাচর যখন সূর্যালোকে উদ্ভাসিত তখন আমি এক গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছি, নিজেকে মনে হচ্ছিল একজন শ্রেণীবিহীন মানুষ। অবরুদ্ধ। পরিত্যক্ত। কিন্তু আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো কেন? কেন নিয়ে আসা হলো আমাকে এখানে। বারবার এই প্রশ্ন আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। বারবার ভেবেও আমি এর কোন সদুত্তর বের করতে পারছিলাম না। দেশের পত্রিকাগুলোতে ছাপা দুর্নীতিবাজদের আমার নাম ছিল না এবং দুর্নীতিবাজ বলে আমার সেরকম কোনো বদনামও ছিল না। কাজেই মনে হলো, কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণেই আমাকে আটক করা হয়েছে। শ্রেণী হিসাবে রাজনীতিবিদদের প্রতি সামরিক বাহিনীর সুতীব্র ঘৃণার আমি হলাম একজন বিশেষায়িত ভিকটিম।
(চলবে…) (সূত্র মানবজমিন _)
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |