আজ মঙ্গলবার | ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | ভোর ৫:০৬
হানিছ সরকার উজ,সৌদি আরব জেদ্দাঃ সৌদি আরবের মদিনাস্থ দোবাই ভিত্তিক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী বিইয়াতে কর্মরত ১৭০০ জন বাংলাদেশী শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। গতকাল বুধবার খবরটি নিশ্চিত করেছেন জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল এর শ্রম কাউন্সিলর কাজী ইমদাদুল হক। ঐ কোম্পানিতে ২২২৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, গত তিন বছর আগে দাল্লা কোম্পানিতে কাজ না থাকায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক বিইয়া ও মাজাল্লা কোম্পানিতে কাপালা বা ট্রান্সফার হয়। তার মধ্যে বিইয়া কোম্পানিতে ২২২৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক কাপালা হয়ে কাজ শুরু করেন। কাফালা পরিবর্তনের সময় শ্রমিকদের সাথে অসন্তোষ ছিল কোম্পানির আমরা জানতে পারি। সেই সময় আমাদের কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা গিয়ে কোম্পানির সাথে কথা বলে এবং শ্রমিকদের কাজে ফিরে যেতে সহযোগিতা করেন।
কাউন্সিলর আজী ইমদাদুল হক আরো জানান, গত ১৪ই জুন মঙ্গলবার সকালে আমরা যখন ঘটনা জানতে পারি তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ঐ কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করি এবং একাধিকবার আমরা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করি এবং আমি ও প্রথম সচিব আরিফ এবং আমার টিম এই কোম্পানিতে যাই এবং কোম্পানি ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলি।
কোম্পানীর কর্মকর্তারা আমাদের জানান আপনাদের বাংলাদেশী শ্রমিক ঘন ঘন আন্দোলন করে আমাদের কোম্পানির অনেক টাকা ক্ষতি করেছে, তখনও কোম্পানির প্রতিনিধিরা আমাদের শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেবে এই কথা আমাদের বলেনি। আরিফ সাহেব যখন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া কথা আমরা কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করি, তখন তারা আমাদের জানান, আপনাদের শ্রমিকদের আমাদের কোম্পানির স্বার্থে রাখা সম্ভব নয় কারণ আমাদের দুবাই হেড অফিসের সিদ্ধান্ত। আমরা বারবার যোগাযোগ করলে কোম্পানির লোক মোবাইল বন্ধ করে দেয়। কথাটি তাৎক্ষণিক আমাদের মান্যবর কনসাল জেনারেল, মান্যবর রাষ্ট্রদূত মহোদয় ও মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে অবগত করি এবং রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের নির্দেশে আমরা মদিনা সফর করি।
মদিনায় যাওয়ার পর কোম্পানির প্রতিনিধির সাথে আমরা বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করি কিন্তু তারা আমাদের সাথে সাক্ষাত করছে না। কোম্পানির লোক যোগাযোগ না করায় আমরা মদিনা লেবার অফিসের সাথে যোগাযোগ করি, আমরা বুধবার সকালে শ্রম ডিজি ড. সালেহ রাব্বি আল সোহাইমী এবং ইঞ্জি. আবদুল্লাহ গাজী আলসায়েদী, ডিজি মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রনালয় সাথে আমরা সাক্ষাৎ করি, আমরা ডিজিকে শ্রমিকদের এক্সিট না দিতে অনুরোধ করি। তারা আমাদের জানাল যে একটা কোম্পানি যদি না চাই তারা শ্রমিক রাখবে না তাদের সেই অধিকার আছে, আমাদের কাজ হলো শ্রমিকদের সাথে কোন অন্যায় হচ্ছে কিনা, শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করছে কিনা। এই কোম্পানি আমাদের সম্পূর্ণ বিষয়ে অবগত করেছে এবং তারা শ্রমিকদের সাথে কোন অন্যায় করছে না।
আমরা যখন শ্রম অফিস ও পুলিশ নিয়ে ঐ কোম্পানি যায়, কোম্পানির লোকজন কোম্পানির সমস্ত কারেন্ট লাইন অফ করে দে এবং এক জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেয়। যেটা সৌদি আরবের আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
কাজী ইমদাদুল হক জানান, কোম্পানির কাছে আমরা অনুরোধ করছি যেন মামলা না দেয় এবং শ্রমিকদের দেশে না পাঠাতে, কোম্পানীর কর্মকর্তারা আমাদের অনুরোধে যারা আন্দোলন সংগ্রামের সাথে যুক্ত ছিল না তাদের মধ্য থেকে ৫০০ জনের মতো রাখার কথা জানান এবং বাকি শ্রমিকদের তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে এক্সিট দেন এবং পর্যায়ক্রমে তাদের দেশে পাঠানোর কথা জানান।
এদিকে বিইয়া কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের সুপারভাইজার আকরাম এর সাথে টেলিফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন বছর আগে দাল্লা কোম্পানি থেকে আমরা যারা বিইয়া কোম্পানিতে কাফালা বা ট্রান্সফার হয় সেই সময় কোম্পানির লোকজন আমাদের তিন মাস গড়িমসি করে শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরণ করে, আমাদের একামা বেতন ও সমস্যা নিয়ে কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা এটাকে আন্দোলন বলে চালিয়ে দেয়।
কোম্পানির ভিতরে মারামারি ও কর্মবিরতির কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা এক সাথে থাকতে গেলে টুকটাক ঝগড়া ঝাটি হয় আবার আমরা মিলে মিশে কাজ করি কিন্তু আমাদের সাথে যখন কোম্পানির লোকজন খারাপ ব্যবহার করে, কাজ না দিয়ে বেতন না দিয়ে কথায় কথায় দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় এই নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করি।
সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী আন্দোলন সংগ্রাম নিষেধ তারপর কেন তারা আন্দোলন করল জানতে চাইলে তারা আন্দোলনের কথা অস্বীকার করে বলেন আমরা আন্দোলন করিনি আমাদের অধিকার আদায়ের কথা বলি এক সাথে তাই তারা এইটাকে আন্দোলন বলে।
কতজন শ্রমিক দেশে পাঠিয়ে দেওয়া কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৭০০ শত শ্রমিকদের ফাইনাল এক্সিট দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে এবং কিছু লোকদের রেখে দিচ্ছে।
বুধবার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধ করে সাথে সাথে ফাইনাল এক্সিট দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আকরাম এর কাছে কোম্পানির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল জেদ্দা শ্রম অফিসে বিইয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের এর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানীতে ট্রান্সফার বা কাফালা হবার সময় তিন মাস বেতন ভাতা ও কাজ না দেওয়ার কথা জানালে কনস্যুলেট কর্মকর্তারা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে সমাধানে চেষ্টা চালান। এক বছর ধরে আমাদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করেছে।
বেতন পরিশোধ করার পরেও কেন এক সাপ্তাহ ধরে কর্মবিরতির জানতে চাইলে আকরাম জানান, গত তিন মাস ধরে প্রায় মানুষের আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, ইন্ডিয়ান শ্রমিকদের কাজ দিচ্ছে, বাংলাদেশী শ্রমিকদের বসিয়ে রাখছেন, কিছু বলতে গেলে কথায় কথায় ফাইনাল এক্সিট এর হুমকি দিচ্ছে যার দরুন আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি কিন্তু কোন আন্দোলন করিনি।
সৌদি আরবের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কর্মরত শ্রমিকদের কাজ করার এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনসুলেট কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |