আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৩:০৪
যশোর : যশোরের মণিরামপুরে ৫৪৯ বস্তা সরকারি ত্রাণের চাল কালোবাজারি মামলার আসামি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক উত্তম কুমার চক্রবর্তী বাচ্চুকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
রোববার যশোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিন আবেদন করেন। বিচারক ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রিস আলী।
বাচ্চুর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট কিংবা কারাগারে পাঠানো হলেও স্বপদে বহাল আছেন আসামি উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিষয়টি নজিরবিহীন হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
গত ৬ অক্টোবর আদালত উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও তার মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন। এর আগে ১ অক্টোবর ছয়জনের নামে আদালতে চার্জশিট দেয় ডিবি পুলিশ।
আসামি উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের এমপি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ভাগনে।
এ প্রসঙ্গে রোববার বিকালে স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত বলেন, আজ মেসেজ পেয়েছি, তাকে (বাচ্চু) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে এ সংক্রান্ত অফিসিয়াল তথ্য আসেনি। তথ্য পেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করবে।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে রাজি হননি মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ জাকির হাসান। জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মামলার চার্জশিটের ওপর শুনানি শেষে জেলা ও দায়রা জজ এবং সিনিয়র স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক এক আদেশে উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে তার মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন। রোববার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২০২০ সালের ১ অক্টোবর সরকারি ত্রাণের চাল কালোবাজারির মামলায় ছয়জনের নামে চার্জশিট দেয় ডিবি পুলিশ। অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- মণিরামপুরের হাকোবা গ্রামের মৃত সুনীল চক্রবর্তীর ছেলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম কুমার চক্রবর্তী বাচ্চু, জুড়ানপুর গ্রামের একুব্বর মোড়লের ছেলে মো. কুদ্দুস, রবিন দাসের ছেলে জগদীশ দাস, তাহেরপুর গ্রামের মৃত সোলাইমান মোড়লের ছেলে শহিদুল ইসলাম, বিজয়রামপুর গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে চালকল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও খুলনা দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা গ্রামের রতন হাওলাদারের ছেলে ট্রাকচালক ফরিদ হাওলাদার। চার্জশিটে অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম কুমার চক্রবর্তী বাচ্চুকে চার্জশিটে পলাতক দেখানো হয়।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলাটি সার্বিক তদন্ত, সার্বিক তথ্য প্রমাণ, ঘটনার ধারাবাহিকতায় আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় উত্তম কুমার চক্রবর্তী বাচ্চু (৪৬) ত্রাণের সরকারি চাল অসৎ উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করে মজুদ রেখে অধিক মুনাফার আশায় আসামি জগদীশ দাস (৪২) ও মো. শহিদুল ইসলামের (৪০) সহায়তায় আসামি আবদুল্লাহ আল মামুনের (৩০) কাছে বিক্রি করে নগদ চার লাখ টাকা ও পরবর্তীতে ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
আসামি আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. ফরিদ হাওলাদার (৩৫) ও মো. কুদ্দুস (৩৮) অসৎ পন্থা অবলম্বন করে ত্রাণের সরকারি চাল ক্রয়-বিক্রয়ে সার্বিক সহযোগিতা করায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টের ২৫ (১)/২৫-ডি ধারায় প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আসামি উত্তম চক্রবর্তী পলাতক থাকায় মামলার জব্দকৃত সরকারি চাল কোথা থেকে কীভাবে আনা হয়েছে, তা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মণিরামপুর থানার খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের জড়িত থাকার কথা বলা হলেও সেই সম্পর্কে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
২০২০ সালের ২৭ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিতে আসামি জগদীশ দাস জানান, গত ৩০ মার্চ উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ১৬ টন সরকারি চাল ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন ভাই ভাই রাইস মিলের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে। চাল বিক্রির স্থান শহিদুল ইসলাম দেখিয়ে দেন। এরপর ৩ এপ্রিল খুলনার মানিকতলা খাদ্যগুদাম থেকে ৫৫৫ বস্তা চাল ট্রাকে লোড করে মনিরামপুরের উদ্দেশে রওনা হন চালক ফরিদ হাওলাদার। তিনি ৪ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে মনিরামপুর খাদ্যগুদামে পৌঁছান।
ওই দিন দুপুরে মণিরামপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ট্রাকচালক ফরিদ হাওলাদারকে ওই চাল বিজয়রামপুরে অবস্থিত আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাই ভাই রাইস মিলে আনলোড করার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনা মোতাবেক রাইস মিলে চাল আনলোড করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
২০২০ সালের ৪ এপ্রিল মণিরামপুর থানার এসআই তপন কুমার সিংহ গোপন সংবাদ পেয়ে মণিরামপুর উপজেলার বিজয়রামপুরের ভাই ভাই রাইস মিলে গিয়ে দেখেন সরকারি চাল ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছে। তিনি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জনিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মিল মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ট্রাকচালক ফরিদ হাওলাদারকে আটক করেন। এই চাল কাবিখার বলে আটক দুজন জিজ্ঞাসাবাদে জানান।
এ চালের কোনো বৈধ কাগজপত্র তাদের কাছে ছিল না। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী, ওসি রফিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্লাহ বায়েজিতসহ সরকারি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এরপর ওই ট্রাক থেকে ৫৪৯ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে এসআই তপন কুমার সিংহ কালোবাজারির মাধ্যমে চাল মজুদের অভিযোগে আটক দুজনসহ অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে মণিরামপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ পরে ডিবি পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। মামলার তদন্ত শেষে আটক আসামিদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির তথ্যে যাচাই-বাছাই করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই ছয়জনকে অভিযুক্ত করে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন কর্মকর্তা। চার্জশিটে অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান বাচ্চুকে পলাতক দেখানো হয়। আর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে চার্জশিট থেকে।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |