আজ বুধবার | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৮:২৮
মনির হোসেন জীবন- যৌতুুকের দাবিতে স্ত্রী আলো বেগমকে হত্যার দায়ে ১৬ বছর যাবৎ পলাতক মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোঃ উজ্জল প্রামাণিক (৪০)কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতারকৃত উজ্জ্বল বগুড়া জেলার সদর থানার কৈচড় দক্ষিন পাড়া গ্রামের মৃতঃ আবুল হোসেন প্রামাণিকের পুত্র বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার মধ্য রাতে র্যাব-৩ এর একটি দল গোপনে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।
রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টার আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক)
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে র্যাব-৩ এর একটি দল বগুড়া জেলার বগুড়া সদর থানার কৈচড় দক্ষিন পাড়া গ্রামে ১৬ বছর পূর্বে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী আলো বেগমকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ উজ্জল প্রামানিক (৪০)কে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে আটক করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০০৬ সালের জুন মাসে ভিকটিম আলো বেগম এর সাথে পারিবারিক ভাবে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পূর্বে উজ্জল এবং তার পরিবার যৌতুক দাবি করলে বিবাহের দিন ভিকটিম আলো বেগম এর পিতা আকবর আলী শেখ, উজ্জল এবং তার পরিবারকে নগদ ৩০ হাজার টাকা যৌতুক হিসেবে প্রদান করে। বিবাহের এক মাস পর আসামী উজ্জল প্রামাণিক ভিকটিম আলো বেগম এর বাবার কাছে বিদেশ যাওয়ার জন্য যৌতুক হিসেবে আরো ৫০ হাজার টাকা দাবি করে এবং পূর্বে প্রদানকৃত যৌতুক বাবদ নগদ ৩০ হাজার টাকা তার মা, ভাই এবং ভগ্নিপতী আত্মসাৎ করে বলে জানায়। পরবর্তীতে বিষয়টি মীমাংসার জন্য উজ্জল এর নিজ বাড়িতে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সালিশ বসে। ওই সালিশে উজ্জল প্রামাণিক এর পরিবারের সকলে ভিকটিম আলো বেগম এর পিতাকে যৌতুক বাবদ আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে। ভিকটিম আলো বেগম এর পিতা উজ্জল প্রামাণিক ও তার পরিবারের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উজ্জল প্রামাণিক এবং তার পরিবার ভিকটিম আলো বেগমকে তালাক দিবে বলে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পারিবারিক সালিশে যৌতুক এর বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যাওয়ায় এঘটনার পর উজ্জল এবং তার পরিবার ভিকটিম আলো বেগমকে বিভিন্ন ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, এঘটনার এক পর্যায়ে বিগত ১ আগস্ট ২০০৬ তারিখে উজ্জ্বলের ভগ্নিপতী নাজমুল হোসেন লাবু ভিকটিম আলো বেগম এর পরিবারকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায়, ভিকটিম আলো বেগম গুরুতর অসুস্থ। পরে খবর পেয়ে ভিকটিম এর পরিবারের লোকজন উজ্জল এর বাড়িতে গিয়ে ঘরের মেঝেতে ভিকটিম আলো বেগম এর লাশ দেখতে পায়। পরবর্তীতে ভিকটিম এর দুলাভাই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বুলু বাদী হয়ে মোঃ উজ্জল প্রামাণিককে প্রধান আসামী করে, তার মা আলেয়া বেওয়া, ভাই হিরা প্রামাণিক, বোন মোছাঃ লাভলী বেগম এবং ভগ্নিপতী নাজমুল হোসেন লাবুর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারপিট করতঃ গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার অপরাধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, দায়েরকৃত মামলায় উজ্জল প্রামাণিক এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বিজ্ঞ আদালত গত ২৪ জুলাই ২০২২, তারিখে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (১) এর মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। এছাড়াও এই মামলার অভিযুক্ত অন্যান্য ৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
র্যাব বলছে, হত্যাকান্ডের পর আসামী উজ্জল প্রামাণিক তার মা আলেয়া বেওয়াকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় এসে তার আসল পরিচয় গোপন রেখে পলাতক জীবনযাপন শুরু করে। এরপর স্থানীয় একটি ফার্নিচারের দোকানে দৈনিক ৬শ টাকা মজুরীতে সে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। পালিয়ে আসার ছয় মাস পর মোছাঃ নাছিমা খাতুনকে বিবাহ করে ওই এলাকায় ২য় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করে আসছিল। তাদের ১০ বছর এবং ৩ বছর বয়সী ২ টি পুত্র সন্তান রয়েছে। উজ্জ্বলের স্ত্রী নাছিমা খাতুন একটি গার্মেন্টস্ কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। এরপর উজ্জল পালিয়ে আসার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বগুড়ায় নিজ বাড়ি এবং তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে গাজীপুরে আত্মগোপনে ছিল। কিছুদিন পূর্বে উজ্জ্বল তার জনৈক আত্মীয়ের মাধ্যমে সে জানতে পারে, হত্যা মামলার আসামী হিসেবে তার মৃত্যুদন্ড রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে সে আশুলিয়ায় স্বপরিবারে একটি ভাড়াকৃত বাসায় আত্মগোপন করে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি দল
আশুলিয়া এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সে প্রায় ১৬ বছর যাবৎ পলাতক জীবনযাপন করে আসছিল।
আজ দুপুর সোয়া ২ টায় র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার ফারজানা হক জানান, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্হা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাকে বগুড়ার আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:19 PM |
Isha | 6:40 PM |