আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:১৩
মনির হোসেন জীবন : রাজধানীর কদমতলী ও শনির আখড়া এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাত দলের সর্দার আবুলসহ ১১ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ।
এসময় তাদের নিকট থেকে দেশীয় অস্ত্র এবং ডাকাতির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্বারমূলে জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব বলছে, আটককৃতরা রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মহাসড়ক ও এলাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। এদের প্রত্যেকের নামেই মামলা রয়েছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার রাতে এবং গতকাল সোমবার রাত দেড়টার দিকে র্যাব-৩ এর একটি চৌকশ দল রাজধানীর কদমতলী থানার মুক্তি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সাকিব টি-স্টলের সামনে এবং শনির আখড়া এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার আজ দুপুর পৌনে ১২ টায় রাজধানীর টিকাটুলিস্হ র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে অনুষ্টিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেঃ কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
এসময় র্যাব-৩ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) মোঃ আরিফুর রহমানসহ অন্যান্য র্যাব সদস্যরা উপস্হিত ছিলেন।
লেঃ কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান,দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের নেতা মোঃ আবুল হোসেন (৩৫), মোঃ রহমত আলী (২৮), মোঃ জসিম মিয়া (৩৩), মোঃ নয়ন মিয়া (২৪), মোঃ ইব্রাহীম (২৬),মোঃ ইদ্রিস (২৩), মাসুদ রানা (২৬), মোঃ কফিল উদ্দিন (৩২),হাসান আলী (২৩), মোঃ জুয়েল (৩৫) ও মোঃ আলমাস (২৭)।
ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী ও হবিগঞ্জ জেলায় তাদের বাড়ি বলে জানা গেছে।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকালে তাদের নিকট থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ টি পিকআপ, ১ টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ৪ টি গামছা, ৩ টি রশি, ৫ টি মোবাইল ফোন, ১ টি হাত ঘড়ি এবং নগদ ৭৩১০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ কুমিল্লার লালমাই থেকে ছিনতাইকৃত ১২৫ ড্রাম অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার বোঝাইসহ ১ টি পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আরও ১ টি বলেরো পিকআপ, ১ টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ৩ টি লোহার রড, ৩ টি স্ক্রু ডাইভার, ১ টি টেপ, ৪ টি মোবাইল, ১টি চোরাই পিকআপ ও ২ টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন,গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে গতিরোধ করে মালামালসহ পন্যবাহী পিকআপ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার ভিকটিম শাহেদুল হক রাজধানীর কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় ভাড়া থাকেন এবং একটি পিকআপ ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ঘটনার দিন তিনি রাজধানীর কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার কোম্পানীর হেড অফিস থেকে ১২৫ টি (২০০০ কেজি) অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার নিয়ে নোয়াখালী জেলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে রাত সাড়ে তিনটার দিকে কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার কুমিল্লা টু নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের শানিচৌ নামক স্থানে একদল ডাকাত একটি সাদা বলেরো পিকআপ যোগে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। ডাকাত দল ভিকটিমকে তার পিকআপ থেকে টেনে-হিচড়ে নামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে মারপিট করতে থাকে। তারা ভিকটিম শাহেদুলকে চাপাতি, সুইচ-গিয়ারসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদর্শন করে এবং তার হাত-পা রশি দিয়ে ও মুখ টেপ দিয়ে বেধে মালামালসহ তার পিকআপটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসী এসে আহত ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং নিকটস্থ থানায় সংবাদ দেয়। ওই ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় ঘটনার দিন অজ্ঞাত ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি দস্যুতা মামলা করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দুর্ধর্ষ এই ডাকাত দলটির সকল সদস্যই বর্তমানে রাজধানী, ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। গ্রেফতারকৃত আবুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তারা বেশকয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতি, বাসে ডাকাতি, ঘরবাড়ি ও দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত আরও জানায়, তারা মহাসড়কে নির্জন কোন স্থানে এসে টার্গেটকৃত গাড়িটিকে ওভারটেক করে গতিরোধপূর্বক গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ সকলকে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, স্টীলের পাইপ ইত্যাদি দ্বারা মারপিট করে ও প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি এবং মালামাল নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ডাকাতি করা মালামাল এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। একই ভাবে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের গাড়িকেও টার্গেট করে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। যখন মহাসড়কে ডাকাতি করা সম্ভব না হয় তখন বাড়িঘর এবং দোকানপাটে তারা ডাকাতি করে থাকে। তাদের দেয়া সবশেষ তথ্যমতে রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকায় একটি পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১টি চোরাই পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ও সরঞ্জামাদিসহ র্যাব-৩ এর হাতে আটক হয়।
লেঃ কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গ্রেফতারকৃত আবুল হোসেন পেশায় একজন ট্রাকচালক। তার এই পেশার আড়ালে সে সরাসরি ওই ডাকাত দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। গ্রেফতারকৃত জসিম এবং জুয়েল পেশায় মিনি ট্রাক চালক। জসিমের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় এবং পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক ২ টি মামলা রয়েছে। জুয়েলের নামে ১ টি দস্যুতা মামলা রয়েছে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত ইদ্রিস চোরাই গাড়ি ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত। এছাড়া সে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করতো। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানায় ১ টি ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ২৩ দিন কারাভোগ করে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে জামিনে বের হয়ে পুনঃরায় সে ডাকাতি কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়াও ইদ্রিস ১ টি চুরির মামলায় অভিযুক্ত আসামী।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত রহমত পেশায় একজন ড্রাইভার। তার বিরুদ্ধে নওগাঁর ধামইরহাট থানায় ১ টি মাদক মামলা এবং গাজীপুর কাপাশিয়া থানায় ১ টি চুরির মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আলমাস পেশায় মুদি ব্যবসায়ী এবং ডাকাতি করা মালামাল তার কাছে বিক্রয় করতো।
র্যাব সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত ইব্রাহীম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী এবং নয়ন ১টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করে। পেশার আড়ালে তারা ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। নয়নের বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় ১টি মাদক মামলা রয়েছে। এছাড়া হাসান পেশায় একজন ড্রাইভার এবং কফিল উদ্দিন বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করে থাকে। হাসান পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানায় ১ টি চুরির মামলায় ২ মাস কারাভোগ করে। এছাড়াও কফিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৪ টি মাদক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |