আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:১৬
মনির হোসেন জীবন- রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার (মাসুমা খাতুন)কে অপহরণের পর নির্মম নির্যাতনের ঘটনা এবং মামলার প্রধান আসামি মাসুমসহ জড়িত ৩ জনকে ঢাকার সবুজবাগ ও গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানিয়েছে, যুগ্ম কমিশনারকে অপহরণের ঘটনার পেছনে তার সাবেক স্বামীর হাত রয়েছে। আর অপহরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেন ওই যুগ্ন কমিশনারের সাবেক গাড়িচালক মাসুদ। অপহরণের ঘটনায় ডিএমপির রমনা থানায় মামলা হলে শুক্রবার দিনগত রাতে রাজধানীর সবুজবাগ ও গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামী মাসুদসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, অপহরণ মামলার প্রধান আসামি মোঃ মাসুম ওরফে মাসুদ (৪২), মোঃ আব্দুল জলিল ওরফে ওরফে পনু (৪৮) ও মোঃ হাফিজ ওরফে শাহনি (৪৮)। এদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ,পাথরঘাটা- বরগুনা ও ঢাকার সবুজবাগ বলে জানা গেছে।
এসময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধারমূলে জব্দ করেছে এলিট ফোর্স র্যাব।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্হ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইনও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক (মূখপাত্র) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।এসময় র্যাব সদরদপ্তরের কর্মকর্তা সহ অন্যান্য র্যাব সদস্যরা উপস্হিত ছিলেন।
তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১ ও র্যাব-৩ এর সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ দল রাজধানীর সবুজবাগ ও গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি মোঃ মাসুম ওরফে মাসুদ, আব্দুল জলিল ওরফে পনু ও মোঃ হাফিজ ওরফে শাহনি আটক করতে সক্ষম হয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নামের নারী যুগ্ম কর কমিশনারকে অপহরণের জন্য ৭০ হাজার টাকায় চাকরিচ্যুত গাড়ি চালককে ঠিক করেছিলেন ভুক্তভোগীর সাবেক স্বামী হারুন অর রশিদ। একজন অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডমিন ক্যাডার তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ২০২৩ তারিখ রাত আনুমানিক সোয়া ৮ টার দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র একজন নারী যুগ্ন কর কমিশনার রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী (মগবাজার) এলাকা থেকে কতিপয় দুর্বৃত্ত তাকে অপহরন করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অপহরণের ঘটনার ১৮ ঘন্টা পর শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ২০২৩ তারিখ রাজধানীর মাদারটেক এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন অপহূত ভিকটিমকে (তাকে) উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভিকটিম তার সাবেক গাড়ি চালক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
র্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)’র একজন নারী যুগ্নকর কমিশনারকে অপহরণ এবং নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত মাসুদ পূর্বে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিল। গত ১ আগস্ট ২০২৩ তারিখ ব্যক্তিগত শৃঙ্খলাজনিত কারণে ভুক্তভোগী তাকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেন। ফলে গ্রেফতারকৃত মাসুদের মধ্যে ভুক্তভোগীর প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রশের সৃষ্টি হয়।
গ্রেফতারকৃত মাসুদ র্যাবকে জানায়, তাকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়ায় ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী হারুন অর রশিদ তার সাথে যোগাযোগ করে এবং ভুক্তভোগীকে উচিত শিক্ষা দিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রেফতারকৃত মাসুদকে বিপুল পরিমান অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়।
ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে প্রধান আসামী মাসুদ জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী হারুন অর রশিদ তাকে অগ্রীম ৭০ হাজার টাকা প্রদান করে এবং এই কাজের পরে তাকে আর ড্রাইভিং করতে হবে না এবং উন্নত জীবন যাপন করার সকল ব্যবস্থা করে দিবে বলে আশ্বাস দেয়। পরবর্তীতে গত ১৫ আগস্ট ২০২৩ তারিখ রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় গ্রেফতারকৃত মাসুদ তার সহযোগী হাফিজ, পনু, রাজু, সাব্বির, সাইফুল ও শান্তকে পরিকল্পনার কথা জানায় ও সবাইকে প্রদানকৃত টাকা বণ্টন করে দেয়। তারা রাজধানীর বেইলী রোড এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়ি চালকের সাথে গ্রেফতারকৃত হাফিজের সুসম্পর্ক থাকায় ভুক্তভোগীর অবস্থান গাড়ি চালক থেকে জেনে গ্রেফতারকৃত মাসুদকে জানায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ২০২৩ তারিখ রাত সাড়ে ৮ টার দিকে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা (তারা) রাজধানীর বেইলী রোড এলাকায় অবস্থান নেয়। ভুক্তভোগী রাত সোয়া ৮ টার দিকে রাজধানীর মগবাজার থেকে নিজ গাড়িযোগে বেইলী রোড এলাকায় পৌছালে তারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মোটরসাইকেল ও একটি রিক্সা দিয়ে ভুক্তভোগীর গাড়ির গতিরোধ করে। এসময় ভুক্তভোগীর ড্রাইভার মোটরসাইকেল ও রিক্সা সড়ানোর জন্য নামলে তাকে মারধর করে এবং গ্রেফতারকৃত মাসুদ গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এসময় গ্রেফতারকৃত পনুসহ অন্যান্য সহযোগীরা গাড়িতে উঠে বসে ভুক্তভোগীকে জোড়পূর্বক অপহরণ করে হাতিরঝিলের উদ্দেশ্যে গমন করে। এরপর অপহরণের বিষয়টি ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীকে জানায়। তখন ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী তাদের হাতিরঝিলে একটি বাসার ঠিকানা বলে দেয় এবং ভুক্তভোগীকে সেখানে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা ওই বাসার মেইন গেইট বন্ধ পাওয়ায় ভুক্তভোগীকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে ঘুরে সময়ক্ষেপন করতে থাকে। পরবর্তীতে আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে কাঁচপুর এলাকায় গ্রেফতারকৃত মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে এবং তার কাছে থাকা নগদ দেড় লক্ষ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বলে ভুক্তভোগী অভিযোগ করে।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, এঘটনার পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখ সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাজধানীর মাদারটেক এলাকায় গমন করে এবং জুমার নামায পর্যন্ত অবস্থান করে। এ সময় গ্রেফতারকৃত মাসুদ ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের জুমার নামাযের পর সেখানে নিয়ে যেতে বলেন। পরবর্তীতে দুপুরে খাবার সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যায় এবং পনু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ি বাহিরে পাহাড়ায় থাকে। এসময় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত মাসুদ, পনু ও শান্ত কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নেয় এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। তখন তার একটি পা ভাঙা, চোখে ও মাথায় মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি এখন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইনও গণমাধ্যম শাখার প্রধান জানান, গ্রেফতারকৃত মাসুদ বিগত ২৫ বছর যাবৎ পেশায় একজন গাড়ি চালক। সে ইতিপূর্বে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরণের ভারী যানবাহন চালাতো। পরবর্তীতে বাস চালানোর সময় একটি সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক জনের নিহতের ঘটনায় তার নামে মামলা হলে তার ভারীযান চালানোর লাইসেন্সটি বাতিল হয়। এছাড়াও সে গাড়ি চুরিসহ এলাকায় বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল বলে জানা যায়।
খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃত পনু পেশায় একজন সিএনজি চালক। একই এলাকায় বসবাস করার কারণে গ্রেফতারকৃত মাসুদের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। ওই অপহরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মাসুদ তাকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা অগ্রীম প্রদান করে।
এছাড়া গ্রেফতারকৃত হাফিজ দূরপাল্লার বাস চালাতো। ২০২২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সিলেট যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে তার চাকুরী চলে যায়। অপহরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মাসুদ তাকে ৫ হাজার টাকা অগ্রীম প্রদান করে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মাসুদ জানিয়েছেন, তার পূর্বের ক্ষোভ ছিল এবং মাসুমার আগের স্বামীর প্রলোভনে পড়ে এই অপহরণে ঘটনা ঘটায় তারা।
তিনি আরো জানান, তাদের দেওয়া এসব তথ্য ভুক্তভোগীর করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জানানো হবে। আসামিদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |