গার্মেন্টস কর্মী রাজু। শক্তপোক্ত যুবক, তবে চেহারাটা নিরীহ ধরনের।
ঈদের ছুটিতে দেশের বাড়ি যাচ্ছে রাজু।
ট্রেন থেকে নেমে বাড়ির পথ ধরে হাটছে সে। রাত গভীর। হঠাৎ পথরোধ করে সামনে দাঁড়ালো এক ছিনতাইকারী। লম্বাটে চেহারা, বেশ কঁড়া লম্বা গোঁফ, হাতে রিভলভার।
নির্জন পথ। চারদিক দেখলো রাজু। কোনো বাড়িঘর নেই আশেপাশে। নেই কোনো লোকজনও। ভয় পেয়ে গেল সে। অস্ত্রের বিরুদ্ধে খালি হাতে লড়তে যাওয়া বোকামি। বাধা দিলে লোকটা তাকে মেরেও ফেলতে পারে।
রাজুর দিকে রিভলভার উঁচিয়ে ধরে ছিনতাইকারী বললো, ‘ট্যাকা-পয়সা যা আছে এক্ষুনি সব দিয়া দাও কোহ্যাদিনু।’
প্রতিবাদের কোনও ভাষা পেলোনা রাজু। পকেট থেকে সমস্ত টাকা বের করে বললো, ‘এই লাও, হামার মাসের মজুরি আর বোনাসের সবই তুমাখে দিয়া দিনু জী।’
হাত বাড়িয়ে টাকাগুলো নিয়ে পকেটে রাখলো ছিনতাইকারী।
ধীর কন্ঠে রাজু বললো, ‘সবই তো তুমাখে দিয়া দিয়াছি জী ভাই। এবার হামার একখান উপকার করো।’
‘কী উপকার কোইরতে হোবে কহো?’ জানতে চাইল ছিনতাইকারী।
মাথার ক্যাপটা দেখিয়ে রাজু বলে, ‘গুলি কইরা হামার মাথার ক্যাপটা একটু ফুটা কইরা দাও। নাহিলে হামার বউহু বিশ্বাস কোইরবে না যে, হামি ছিনতাইয়ের শিকার হ’য়্যাছি।’
ছিনতাইকারী রাজি হলো। গুলি মেরে একটা ফুটো করে দিল রাজুর ক্যাপটাতে।
‘আরো একখান উপকার করো জী, ভাই।’
‘ফের কী কইরবো কহো?’
‘ক্যাপটাতে খালি একখান গুলি দেইখা মনে হইবে, ছিনতাইকারীদের সোতে না লইড়হ্যাই হামি পালিয়া আইসাছি। এ্যাতে বউহু হামাখে কাপুরুষ মনে কোইরবে।’
‘তাহিলে কী কইরতে হোবে বুলো?’
গায়ের জামা খুলে একটা গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিল রাজু। বললো, ‘গুলি কইরা এ্যাটাতেও কিছু ফুটা কইরা দাও।’
রাজুর শার্টে গুলি ছুড়লো ছিনতাইকারী। গুলির পর গুলি। তারপর একসময় থেমে গেলো। বললো, ‘লাও, তুমার কাজ হোয়্যাগেছে?’
‘আরও গুলি করো না জী! এ সামান্য কয়েকটা ফুটাতে হোবেনা।’
এদিক ওদিক মাথা ঝাঁকিয়ে ছিনতাইকারী বললো, ‘আর কুনু ফুটা কোইরতে পারবো না। হামার পিসতুলে আর গুলি নাই। ব্যাবাক গুলি শেষ হোয়্যাগেছে।’
রাজু এবার লাফিয়ে ওঠে বললো, ‘হামি তো এটাই চাহাছিনু রে হারামজাদা’ ছিনতাইকারীকে জাপটে ধরলো সে। চোখ রাঙিয়ে বললো, ‘এখুন হামার সব টাকা হামাখে ঘুরিয়া দে, বদমাইশ! হামার টাকার সোতে ক্ষতিপূরণও দে ক্যাপ আর গায়ের জামা ফুটা করার জইন্যে। নাহিলে কিন্তু এমুন মাইর দিবো যে, চোইদ্দো গুষ্টির নাম ভুইল্যা যাবি!’
ছিনতাইকারী তাড়াতাড়ি সব টাকা পয়সা ফেরত দিয়ে নিজেকে কোনও রকম ছাড়িয়ে নিলো। তারপর জান বাঁচাতে দিল জোরে এক দৌড়!