আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১২:৩৫
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদ এক না। মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে অর্থ আদায়ে সহযোগিতা করেছেন আরও অনেকে। এমনকি এই লাগামহীন দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদও। শেষ পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে তার নাম।
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের সঙ্গে ফেঁসে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে করোনা সনদ দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে কমিশন। অভিযোগপত্রে স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আজাদ এবং রিজেন্টের সাহেদ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক শফিউর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে। গতকাল দুদক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার নামে ও চিকিৎসায় খরচ বাবদ মোট তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ২৩শে সেপ্টেম্বর পাঁচজনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।
ওই মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের নাম ছিল না। কিন্তু মামলা দায়েরের পর তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ পায়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে তিন হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করিয়েছেন। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম।
মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে একাধিকবার আবুল কালাম আজাদকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দীর্ঘ তদন্তে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিটি অবৈধ বলে প্রমাণিত হয়। এ অবৈধ চুক্তির ওপর ভর করেই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫শ’ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। তারা অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করে। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে ৩ হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করতো অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগী প্রতি ৩ হাজার ৫শ’ টাকা হিসেবে মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫শ’ টাকা গ্রহণ করে। এ ছাড়াও চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের খাবার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে ধরে তা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
প্রতারণা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করেছেন। সূত্রমতে, তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে কমিশন কর্তৃক চার্জশিট দাখিলের প্রস্তাব অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক জানান, শিগগিরই এই মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।
সময়টা গত বছরের মার্চ মাস। বাড়ছিলো করোনার সংক্রমণ। এরমধ্যেই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছিলো রিজেন্ট হাসপাতাল। সরকারের কাছে বিল দেয়ার পর রোগীর কাছ থেকেও অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে রিজেন্টের বিরুদ্ধে। গত বছরের ৭ ও ৮ই জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাব। বন্ধ করে দেয়া হয় রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা। অভিযানের পর প্রকাশ পায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রভাব খাটিয়ে, অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় মেয়াদহীন লাইসেন্স নিয়েই সরকারের চুক্তিবদ্ধ হয় হাসপাতালটি। চুক্তি হওয়ার বহু আগে ২০১৭ সালেই হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওই সময়ে সমালোচনার মুখে ডেডিকেটেড কোভিড হিসেবে হাসপাতালটির অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তখন দাবি করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে ওই চুক্তি করা হয়েছিল। পরে অধিদপ্তরের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় মন্ত্রণালয়। জবাবে আরেক চিঠিতে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ দাবি করেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিব আসাদুল ইসলামের ‘নির্দেশে’ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। এ বিষয়ে তদন্তে নামে দুদক। স্বাস্থ্যের ডিজি ডা. আবুল কালাম আজাদকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তে প্রকাশ পেতে থাকে তার অনিয়ম, দুর্নীতি।
রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারি ছাড়াও করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাগামহীন দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হতে থাকে গণমাধ্যমে। শুরুতেই মাস্ক কেলেঙ্কারির খবরে সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ার ও রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা ও জালিয়াতির খবর প্রকাশ হলে তোপের মুখে পড়েন ডা. আবুল কালাম আজাদ। ওই সময়ে রিজেন্টের সাহেদের সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ের ছবি ভাইরাল হয়। এরপর গত বছরের ২১শে জুলাই তিনি পদত্যাগ করেন। তার আগে ১৫ই জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
১৯৮৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন আবুল কালাম আজাদ। ২০০১ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৯০ সালে তৎকালীন আইপিজিএমআর (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ২০১৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডা. আজাদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ডা. আজাদ অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রশাসন) দায়িত্বে ছিলেন। সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের ২৭শে মার্চ তাকে দুই বছরের চুক্তিতে একই পদে বহাল রাখা হয়। এ ছাড়াও আবুল কালাম আজাদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের পরিচালক এবং অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) দায়িত্বও পালন করেছেন। করোনাকালে স্বাস্থ্যের ডিজি’র দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |