আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৬:২২
অবিনাশ পালিওয়াল:-বাংলাদেশের স্বতন্ত্র দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলো হলো ‘আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের জনগণের শত্রু’। গত সপ্তাহে সংসদে দৃপ্তকণ্ঠে একথা উচ্চারণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন। বলেন, তারা ‘গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে এবং এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, যাদের কোনো গণতান্ত্রিক অস্তিত্ব থাকবে না’। শক্তিমত্তা থেকে দূরে সরে গিয়ে হাসিনার মন্তব্য প্রমাণ করে আসলে আওয়ামী লীগ কতোটা বিপর্যস্ত। তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে শুরু করে বেছে বেছে ইসলামপন্থিদের টার্গেট করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন দৈনিক পত্রিকা এবং যেসব দেশ জবাবদিহিতা চাইছে তাদের পিছু নিয়েছেন।
আর আট মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। এটা বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে, বাংলাদেশের সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা প্রথম আলো সরকারের হয়ে কথা বলুক, এমনটা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার এই কৌশল তাকেই বিপদে ফেলতে পারে। সাম্প্রতিক খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন এই পত্রিকার সংবাদদাতা শামসুজামান শামস।
কিন্তু এটা দৃশ্যমান হয়েছে যে, তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে অক্ষমতা দেখিয়েছে সরকার। এর পেছনে ছিল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং মিডিয়ার চাপ, যা প্রধানমন্ত্রীকে তার মন পরিবর্তন করতে বাধ্য করে। মোদ্দা কথা, এমন চাপ এটাই ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ নিজেরা জেগে উঠেছে।
বিরোধী দলের ক্ষেত্রে, এখন পর্যন্ত বিএনপি’র প্রতিবাদ বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু তা কি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সমন্বয়ের মধ্যদিয়ে সহিংস হয়ে উঠবে? যদিও কোনোপক্ষই এমন সহিংসতা হোক তা প্রত্যাশা করে না, তবু সামনের মাসগুলোতে যে সহিংসতা হবে না তা বলা যায় না। এটা হলো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার সক্ষমতা এবং প্রধান বিরোধী হিসেবে (তারেক) রহমানের রাজপথ দখল নেয়ার সক্ষমতা এবং শান্তি ধরে রাখার একটি পরীক্ষা। ঝুঁকিটা হলো এই আগুন জ্বালিয়ে দেয়াটা সহজ। কিন্তু নিভানো কঠিন। অবশ্যই বড় আকারে সহিংসতা হলে ভারতের এই নিকট প্রতিবেশী দেশটি অস্থিতিশীল হবে। সহিংসতা সৃষ্টি হলে তা কি দেশটিকে ২০০৭ সালের মতো অবস্থানে নিয়ে যাবে (যেখানে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করেছিল), তা বলা কঠিন।
কিন্তু যদি বাস্তবেই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় এবং বিএনপি বিজয়ী হয়, তখন আবার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংকটের আবির্ভাব হবে। তাদের যেহেতু পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, সেক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে (তারেক) রহমান কীভাবে যুক্ত হবেন? অদ্ভুত বিষয় হলো, ইন্দো-প্যাসিফিকে একত্রিত হলেও বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভিন্নতা বা বিভক্তি আছে। দু’পক্ষই চায় চীনের উপস্থিতি সীমিত করুক ঢাকা। কিন্তু হাসিনার সময়কাল এটাই প্রদর্শন করে যে, করার চেয়ে বলা সহজ। বাংলাদেশের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অর্থ হলো (তারেক) রহমান ক্ষমতায় গেলে এসব প্রত্যাশা পূরণের জন্য লড়াই করবেন। কিন্তু তিনি যদি সফল হন, তাকে অন্য লড়াইও করতে হবে। নিবিড়ভাবে দেখতে গিয়ে এখানে একটু থামতে হবে। পরিবার দ্বারা আবদ্ধ রাজনীতি, জবাবদিহিতার অভাব, সম্পদের সুষম বণ্টনে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনীতিকরণ করা নিরাপত্তা বিষয়ক এস্টাবলিশমেন্ট এবং হস্তক্ষেপ, দুর্ভিক্ষ, অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের ঝড়ো ইতিহাস আছে বাংলাদেশে। এসব গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠে না, যতক্ষণ শামসুজ্জামানের মতো একাধিক মানুষের মুক্তি একে বিশ্বাসযোগ্য করে না তোলে। নির্বাচনী বিতর্কের জেরে শেখ হাসিনা তার সুনামকে নষ্ট করে ফেলেছেন এবং এখন চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছেন তিনি। এটা বোঝা যায়। কিন্তু তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র তারেক রহমান (তার অসুস্থ মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নন) এই প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে এলেন- এটাই কম বোধগম্য। নির্যাতিত তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে নির্বাসনে আছেন। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসসহ বেশ কিছু অভিযোগের মুখোমুখি তিনি। এখনো দৃশ্যত, শেখ হাসিনার জন্য তাকে হুমকি হিসেবে দেখা হয়।
সম্প্রতি বিএনপি যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে তাতে দুটি মিথকে কবর দেয়া হয়েছে। তার একটি হলো দলটি তার ভিত্তি হারিয়ে ফেলেছে। অন্যটি হলো তারেক রহমান অকার্যকর। বিএনপি কর্মীদের ভিত্তি এবং নেতৃত্ব এখনো অক্ষত আছে এবং বিএনপি’র কট্টর নেতাকর্মীদের কাছে তারেক রহমানের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এটা নিশ্চিত করে যে, তার কেন্দ্রমুখী প্রবণতা সত্তে¡ও, বিএনপি’র বিভিন্ন উপদল তারেক রহমানের ডাকে তার পেছনে নেমে এসেছেন। কিন্তু এখানেই ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ, বিরোধী দলে থাকা (তারেক) রহমান, ভিন্ন হতে পারেন ক্ষমতায় যাওয়া (তারেক) রহমান থেকে। এখানে দুটি দ্বিধা।
প্রথমটি জরুরি, অভ্যন্তরীণভাবে এবং সমস্ত বাংলাদেশের মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিএনপি এবং অন্য বিরোধী দলগুলো পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। অতীতের নির্বাচনী অনিয়মে হতাশাগ্রস্ত বিরোধীরা। তারা বলছে, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যে একটি নির্ভেজাল নির্বাচন দেবেন সে বিষয়ে তাদের কোনো আস্থা নেই। কিন্তু হাসিনা যদি অন্তর্র্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে পুরো সিস্টেম স্থবির হয়ে পড়বে এবং বল যাবে ভারতের পছন্দে থাকা হাসিনার কোর্টে। এটা শুধু আবেগের কারণে নয়, নয়াদিল্লি তার ওপর ‘লিভারেজ’ বা সুবিধা উপভোগ করে। অন্যদিকে বিরোধী দলের (তারেক) রহমানের ওপর খুব সামান্যই লিভারেজ আছে ভারতের। ফলে তার উত্থানের বিষয়ে তাদের আস্থা সীমিত। এতে ক্ষমতায় গেলে (তারেক) রহমানের জন্য একটি সমস্যা হবে। কারণ, ইতিহাস বলে, ঢাকায় একটি সরকারের স্থায়িত্ব বিপরীত ভাবে ভারতবিরোধিতার সঙ্গে আনুপাতিক। এসব বিষয়ে সব ক্ষেত্রে না হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিএনপি’র রেকর্ড জটিল। অসম্ভব না হলেও নয়াদিল্লিকে (তারেক) রহমানের জন্য আয়ত্তে আনা হবে এক কঠিন কাজ। সেটা হলো ভারতকে তার বোঝাতে হবে যে, ঢাকায় শাসন ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ না করে ভারতের স্বার্থের প্রতি তিনি সিরিয়াস।
প্রথম আলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ক্ষোভ একটি গুরুতর সমস্যা। এটা এই জন্য নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র কপটভাবে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের কার্ড ব্যবহার করছে কম শক্তিসম্পন্নের ওপর অথবা ঢাকায় ভারতের মিত্র হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। সম্ভবত বেইজিং বাদে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হবে সবার স্বার্থে। মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা ভালোভাবে সামাল দিয়েছে চীন। তারা বাংলাদেশেও অস্থিতিশীলতাকে দেখতে পারে কার্যকর একটি পদ্ধতি হিসেবে, যার মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখা যায় এবং ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। এই অবস্থা প্রতিরোধের সর্বোত্তম এবং সম্ভবত একমাত্র উপায় হলো হাসিনা ও তার বিরোধীদের মধ্যে গুরুতর, জরুরি সংলাপে সমর্থন দেয়া।সূত্র:মানবজমিন
(লেখক এসওএএস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের একজন শিক্ষক। তিনি লিখেছেন ‘মাই এনিমিজ এনিমি: ইন্ডিয়া ইন আফগানিস্তান ফ্রম দ্য সোভিয়েত ইনভেশন টু দ্য ইউএস উইথড্রল’ বই। তার এ লেখাটি অনলাইন দ্য হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |