আজ শনিবার | ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |১১ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:২০
মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম :- ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাজেহাল সখিপুর উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা । উপজেলার অধিকাংশ এলাকাতেই সারাদিনেও দেখা মিলছে না কাংখিত বিদ্যুতের । কোন কোন অঞ্চলে সাত-আট ঘণ্টা অন্তর বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার খেলা চলছে। বিদ্যুৎ এর এই লুকোচুরির জন্য উপজেলার জনগণ সীমাহীন দুর্ভোগে ভুগছেন।
বর্তমানে রমজান চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ এর এই অসহনীয় দুর্ভোগে অতিষ্ঠ উপজেলা বাসি। সারাদিন বিদ্যুৎ না থাকার পর সন্ধ্যায় একটু বিদ্যুৎ এর আশার পানে চেয়ে থাকলেও দেখা মিলছে না বিদ্যুৎ এর।বিদ্যুৎ এর লুকোচুরি কারনে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এতে করে তাদের ফলাফলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে আশংকা করছে। ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করানো। কিন্তু তাও সম্ভব হচ্ছে না বিদ্যুৎ এর অব্যবস্থাপনার জন্য। তাই যেসব প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করানো হয় সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎএর বিকল্প ব্যবস্থা করা সময়ের প্রয়োজন।মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাস করানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিড়ম্বনার কারনে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে অংশ গ্রহণ করতে পারছেনা। পৌরশহরের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কিছুটা স্বস্তি থাকলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নাজেহাল।গ্রামে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে। হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়া আবার হঠাৎ বিদ্যুৎ আসার ফলে বাসা-বাড়ির ফ্রিজ, এসি, আইপিএস, মেইন লাইনের ট্রান্সমিটার, আবার কোথাও ট্রান্সফরমার অকেজো হয়ে পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। শুধুমাত্র দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতেই নয় স্বাভাবিক দিনে যথাযথ বিদ্যুৎ টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বিপিডিবি । একটু ঝড়-বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, গোটা রাত বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকছে পৌরশহরসহ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চরের মানুষ। বিদ্যুতের এই সীমাহীন দুর্ভোগে গোটা উপজেলাবাসী ফুঁসে উঠেছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ এর দাবীতে পৌরশহরে মানববন্ধন সহ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও পিডিবি অফিস ঘেরাও কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন।
বৈশাখ মাস শুরু হয়েছে ১সপ্তাহের বেশি হয়েছে। গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎএর ঘন ঘন লোডশেডিং নিয়ে ইতিমধ্যে উপজেলাবাসী উদ্বিগ্ন। ঘন ঘন লোডশেডিং ও ওভারলোডিং এ অতিষ্ঠ উপজেলাবাসীর বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা দিয়েছে নানা দুর্ভোগ। বাসা বাড়ীতে মোবাইল চার্জ, লাইট চার্জ, পানির ট্যাংকে পানি উঠাতে না পারায় কেউ কেউ জেনারেটর চালিয়ে এসকল সমস্যার কিছুটা দূর করলেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না থাকায় সাধারণ জনগণ পড়ছেন বিপাকে। বিশেষ করে ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস, সবজি বিদ্যুতের অভাবে পঁচে নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বৃষ্টির পানি মাটিতে পড়ার পূর্বেই বিদ্যুৎএর এই লুকোচুরি নিয়ে গ্রাহকরা অতিষ্ঠ। ঝড়-বৃষ্টি, তুফানের সময় বিদ্যুৎ নেই আবার গ্রীষ্ম ঋতুতে স্বাভাবিক দিনেও বিদ্যুৎ দেখা মিলছে না কোন কোন দিন। বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে সখিপুর উপজেলায়। কিন্তু ঝড়-তুফানে মেইন লাইনে দীর্ঘক্ষণ গাছপালা পড়ে থাকার কারণে বিদ্যুৎ লাইন সচল করতে বিলম্ব হচ্ছে। তাই একদিকের লাইন বন্ধ রেখে অন্য দিকের লাইন চালু রাখতে হয়েছে। এদিকে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে আলাপে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে বললেওসখিপুর বাসি কেন থাকবে অন্ধকারে? গ্রাহকদের অভিযোগ, দু’-এক দিন নয়, দিনের পর দিন ধরে একই অবস্থা চলছে সখিপুর উপজেলা জুড়ে। বিদ্যুৎ দফতরের অফিসারদের অভিযোগ জানাতে গেলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ লাইন’, ‘জনবলের অভাব’, ‘লাইন টিকছে না’, বলে তারা গ্রাহকদের বোঝ দেন। তা নিয়েই ক্ষোভে ফুঁসছেন বিদ্যুৎবঞ্চিত বাসিন্দারা।সখিপুর উপজেলায় ১টি পৌরসভা ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে ৮১টি ওয়ার্ড। বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেন, সখিপুর উপজেলার বিদ্যুৎ পরিষেবা তলানিতে নেমেছে। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দলসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা পর্যন্ত বিদ্যুৎএর ওই দশায় ক্ষুদ্ধ। এ বিষয়ে তারা পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডঃ জোয়াহেরুল ইসলাম ভিপি জোয়াহের এর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রিপন তালুকদার (পাথারপুর)বলেন, “মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎ তো চলে যাচ্ছেই। যেটুকু সময় থাকছে, তখন প্রয়োজনীয় কাজ তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে হয়। এমন অবস্থায় খুব সমস্যায় পড়েছি।”পৌরশহরের ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক) বলেন “আমাদের প্রতিদিনকার উপার্জনের একটি বৃহৎ অংশ বিদ্যুৎএর উপরে নির্ভর করে থাকে। অথচ বিদ্যুৎ এর ওই অবস্থা পরিবর্তনে কোনও উদ্যোগ নেই উপজেলার বিপিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের।”
কাকঁড়াজান ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি জামাল হোসেন মুন্না বলেন, “আমাদের দিনে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে থাকতে হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুতের ওই বেহাল অবস্থার কথা আমরা এলাকাবাসী একাধিকবার জানিয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।”
মাসখানেক আগে পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড সেলামি চালা একটি ট্রান্সফরমার খারাপ হয়ে পড়ে থাকার পরেও ঠিক করা হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। ফলে গোটা গ্রাম বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।বোরো ধানের সেচ দিতে না পাড়ায় এলাকা বাসি ফুসঁলে ওঠে।তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলেন।১সপ্তাহ পুরো গ্রাম অন্ধকার থাকার পর বিদ্যুৎ অফিসের দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে ট্রান্সফরমার ঠিক করানো হয়।
পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী(বিক্রয় এবং বিতরন বিভাগ)বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সখিপুর উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎএর যে সমস্যা হচ্ছে তা নিয়ে আমরা গ্রাহকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।প্রচন্ড রোদের কারনে বিদ্যুৎ এর সমস্যা হচ্ছিল। ঝড় বৃষ্টি না থাকলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আমরা গ্রাহকদের সেবা দিতে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি।
সখিপুর দুইদিন যাবৎ কোন লোডশেডিং সমস্যা নাই। সখিপুরে বিদ্যুৎ ঘাটতিও নাই। তবে এখন বিদ্যুৎ এর বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ প্রাকৃতিক দূর্যোগ। ঝড় বৃষ্টি না থাকলে এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। লাইনম্যান বা স্টাফদের ঘাটতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের লাইনম্যান বা স্টাফের ঘাটতি আছে। তাই এই ঝড় বৃষ্টির দিনগুলোতে একসাথে বিভিন্ন দিকে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় লাইনম্যানের ঘাটতি অনুভূত হয়। আমি গ্রাহদের বলছি, যদি কারো কোন সমস্যা হয় তারা যেন সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করেন। কেউ কোন দালালের আশ্রয় নিবেন না ।
Dhaka, Bangladesh শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:23 AM |
Sunrise | 6:43 AM |
Zuhr | 12:06 PM |
Asr | 3:09 PM |
Magrib | 5:29 PM |
Isha | 6:49 PM |