আজ বুধবার | ২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ |৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১১:১৩
বিডি দিনকাল ডেস্ক:- খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রকৌশলী থেকে রাজনীতিবিদ। ছিলেন প্রভাবশালী মন্ত্রী। পুরো ফরিদপুর জুড়ে ছিল খন্দকারের শাসন। তার কথাই ছিল শেষ কথা। এরপর দাঁড়ি, সেমিকোলন ছিল না কিছুই। কিন্তু হঠাৎই সব পাল্টে যায়। একরাতে ঘুম ভেঙে দেখেন পুরো রাজত্ব হাতছাড়া। তার সঙ্গী-সাথীরা বেশির ভাগই কারাগারে। দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখে।
সেখান থেকে কথা বলেছেন মানবজমিনের সঙ্গে। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের রিপোর্টার শরিফ রুবেল। নানা ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেছেন বহুল আলোচিত এই সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা।
ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে ভাবনার কোনো কারণ নেই। আমি কি নমিনেশন পাবো? আমার মতো একজন অক্ষম, অখ্যাত, যার কোনো বংশ পরিচয় নাই, কোনো অবস্থান নাই সে কীভাবে নৌকার মনোনয়ন পাবে? আমি চিন্তা করি আমার মতো অযোগ্য লোক নমিনেশন পাবে না। এটাই ধরে নিয়েছি। আমার যদি চাওয়া লাগে, তাহলে সেই নমিনেশন আমার দরকারটা কি? আমাকে চেয়ে নিতে হবে কেন? যদি দল মনে না করে যে আমাকে দিতে হবে। তাহলে চেয়ে নিতে হবে কেন? চেয়ে নিতে হলে এমন নমিনেশন দিয়ে কি করবো? ৩০ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে তারপরে আবার হাতে-পায়ে ধরে নমিনেশন নিতে হবে? আমি কি এতটা খাটো অবস্থায় আছি? আমি যদি বুঝতে পারি যেকোনো মতে আমাকে নিয়ে দলের সংশয় আছে। তাহলে আমার নিজেরই উচিত হবে সরে যাওয়া। দূরে চলে যাওয়া। আমার কি ফরিদপুরে খুব বদনাম? সবাই কি আমার বদনাম করে? আপনি ফরিদপুরে এমন একজন লোকের নাম বলেন যে, আমার ধারে কাছে আছে। এমন একজনের নাম বলেন যে, আমার সঙ্গে টিকে থাকতে পারবে। সব সময় সম্মানের সঙ্গে রাজনীতি করছি। ফরিদপুরের যেকোনো একটা লোকের কাছে আমার নাম ধরে জিজ্ঞাসা করলে দেখবেন আমাকে নিয়ে কতোটা আবেগঘন কথা বলে। সবাই আমাকে ভালো জানেন, ভালোবাসেন। তারপরেও সাংবাদিকরা মনে করে আমি শালা কুত্তার বাচ্চা।
সংসদে ৯০ কার্যদিবস পার হওয়ার কাছাকাছি, সংসদ সদস্য পদ বাতিল হলে কী করবেন? জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমার সংসদ সদস্য পদ খারিজ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি বলছি- আমি এখনো অসুস্থ। ডাক্তার আমাকে দেশে যাওয়ার জন্য নিষেধ করেছে। আমি বিশ্রাম নিচ্ছি। আমার সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদকের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ঠিক আছে, আপনি বিশ্রাম নেন। আপনার কোনো অসুবিধা হবে না। আমি বলেছি- তারা এখন অসুবিধা করেই বা কি করবেন? নির্বাচনের আর তিন/চার মাস বাকি আছে। এখন কি আর পদ খালি করে ১৫ দিনের জন্য অন্য একজনকে নমিনেশন দিবে? আরেকটা নির্বাচন করবে?
হঠাৎ নিঃশব্দে দেশ ছাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি কেন দেশ ছেড়েছি। এটা সাংবাদিকরা ভালো জানে। সাংবাদিকরা অনুসন্ধান করে বের করুক কেন আমি দেশ ছাড়লাম। এটা তো তাদের দায়িত্ব। আর আমি বললে, বলবো অন্য কোনো কারণ নেই। আমার বয়স এখন ৮৪ বছর। এই বয়সে এসে এখন এই নির্বাচনের মুখে যে ধরনের তৎপরতা, যে ধরনের কথাবার্তা, যে ধরনের নোংরামি হচ্ছে, ওই পরিবেশের মধ্যে আমাদের মতো একটা বয়স্ক লোকের থাকা কি ঠিক হবে? এই বয়সে কি আমি একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে মুখ লাগাবো? কথা বলবো? তারা আমার বাপ-মা তুলে গালাগালি করবে সেটা কি করা ঠিক হবে? নিজের মান, নিজের সম্মান রেখে চলতে হবে। আর এখন যারা রাজনীতির মধ্যে থাকে তাদের বারো আনাই মুখ পাতলা। তারা তো বুঝতে পারে না যে, একজনকে সম্মান দিলে সম্মান বাড়ে- সম্মান কমে না। ফরিদপুরে আমাকে নিয়ে যে ভাষায় কথাবার্তা বলা হয়। তাই সামনে থাকলে আরও খারাপ ভাষায় কথা বলবে। কাজেই এসব লোকজন থেকে দূরে থাকলাম- এটাই ভালো। আমি দূরে থাকলে তো আর কারও ক্ষতি হয় নাই।
দেশ ছাড়ার পরে ফরিদপুরে নিজের অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই কেন- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফরিদপুরে যারা আমার কাছের লোক ছিল তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই- এটা সঠিক না। আমার সবার সঙ্গেই যোগাযোগ আছে। তবে কিছু মানুষ এসব মিথ্যাচার করে। শামসুল হক ভোলা মাস্টারের সঙ্গে আমার কখনোই ভালো সম্পর্ক ছিল না। সে প্রকাশ্যে আমার নাম ধরে গালাগালি করে। সেই একমাত্র লোক যে, এমন খারাপ আচরণ করে। তাহলে তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক হয় কীভাবে?
সুইজারল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটা একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা। আমি কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করিনি। আর কখনো করবোও না। অন্য দেশে আমি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবো কেন? আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা, আমার বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন, আমার বিরুদ্ধে কোনো বদনাম, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ, অনুযোগ থাকলে না আমি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবো। আর আমি তো দুর্ধর্ষ কোনো অপরাধী না যে, পরের দেশে পালিয়ে থাকবো। এ জন্য আমার রাজনৈতিক আশ্রয় দরকার হবে।
প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একটা উড়ো খবর। লোকে বলে কিন্তু দূরত্বটা কোথায় তাতো আমি টের পাই না। এমন একটা ঘটনা দেখান যে, এই ঘটনায় তার সঙ্গে আমার দূরত্ব হয়েছে। এটা মুখে মুখে মানুষই বলে, বাস্তবে তা নয়। আসলে আমার সঙ্গে শেখ হাসিনার কোনো মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়নি।
সামনে নির্বাচন, কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন- এ প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই দেশে ফিরবো। তবে কবে ফিরবো এখনো কোনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। দ্রুতই ফিরবো। সেটা দু’-এক মাসের মধ্যেও হতে পারে।
দীর্ঘদিন পরে ফরিদপুরে শোক দিবসে তার নামে ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ৩০ বছর ফরিদপুরের মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। একসঙ্গে উঠাবসা করেছি। ৩টা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম। অনেক লোকের সুখে-দুঃখে ছিলাম। এখন তারা ভালোবেসে যদি কেউ আমার নামে একটা গেইট করে- এতে কোনো অন্যায় হয়েছে কিনা? আমার কাছে এটা অন্যায় মনে হয়নি। আমার অনেক শুভাকাক্সক্ষী আছে। আমার ধারণা ফরিদপুরের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ লোকজন আমাকে পছন্দ করে। এবং আমার বিকল্প কাউকে চিন্তাও করে না।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার মনোনয়ন কনফার্ম হয়ে গেছে। এমন কথা শোনা যায়। তিনি বলে বেড়ান। তবে এমন তথ্য আমার কাছে নেই। সে কোন সূত্র ধরে এমন কথা বলছে- তা সেই-ই ভালো বলতে পারবে। আমি অনেকদিন দেশে নাই। এখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে বাদ দিয়ে কারও ওপর আস্থা রাখবেন কিনা- সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কাদা ছোড়াছুড়ি এবং এসব ভেজালের কারণেই একটু দূরে সরে আছি। যেন কোনো রকম ঝামেলা ও ভেজালের মধ্যে পড়তে না হয়। তারপরেও এই শামীম হক নানা রকম কথাবার্তা বলছে। ফরিদপুরের আর একটা লোকও আমার নামে আজেবাজে কথা বলে না। শামীম হক ছাড়া আমাকে নিয়ে কেউই বকাবাজি করে না। এসব করে শামিম হক তার রাজনীতির বারোটা নিজেই বাজাচ্ছে। এটা কেউই ভালো চোখে দেখছে না। উনি (শামীম হক) আমার জায়গায় কখনো যেতে পারবে না। খন্দকার মোশাররফ একজনই, তার জায়গায় কেউ যেতে পারবে না। আমি জীবনে কখনো বক্তৃতায় বলিনি যে, আমার নমিনেশন কনফার্ম হয়ে গেছে। এখন যদি শামীম হকের মতো একটা লোকের সঙ্গে আমাকে তুলনা করা হয়, এটা মানুষে খাবে? তার সঙ্গে আমাকে তুলনা করাটা ঠিক হবে না। শামীম হক ছাড়া এত ফালতু কথা ফরিদপুরের রাজনীতিতে আর কেউ কোনো সময় বলেনি। নাম ধরে আমার বাপ-মা তুলে গালাগালি করা। এটা কোনো ভদ্রতার মধ্যে পড়ে না। যেখানে ৯৫ ভাগ লোক আমাকে ভালোবাসে, পছন্দ করে- সেখানে আমার নাম ধরে গালাগালি করা শোভা পায় না।
চাপে পড়ে দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ওপর কোনো চাপ ছিল কিনা সেটা সাংবাদিকরাই খুঁজে বের করুক। আমার ওপর চাপটা কী? আমার ওপর কী চাপটা আছে? সামাজিকই বলুন বা রাজনৈতিকই বলুন আপনারা নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারছেন যে কোনো রকম চাপ আছে আমার উপর? আমার কোনো অন্যায় অপরাধ আছে যে, আমি চাপের মধ্যে থাকবো? আমি ৩০ বছর ফরিদপুরে রাজনীতি করেছি। আমার একটা অন্যায় ধরতে পারছে কেউ? তাহলে আমি কী জন্য চাপে থাকবো। বরং শামীম হকদের নামে নানা রকম খারাপ কথাবার্তা শুনি। আমার নামে সে ছাড়া অন্য কেউ কিছু বলে না।
তারপরেও তিনি আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তো আনতে পারছে না। তাহলে এই কথার মূল্য কী? যেমন ধরুন, নিক্সন চৌধুরী যতগুলো কথা বলে তার অর্ধেকই আবোল-তাবোল কথা বলে। নিক্সন চৌধুরীর কি সেই শক্তি আছে যে আমার ফরিদপুরে আসা ঠেকাবে? ফরিদপুরে আমাকে আসতে দিবে না- এই শক্তি ফরিদপুরের কারও নাই। ফরিদপুরে আমি ঢুকবো আর আমাকে ঢুকতে দিবে না? এই বাপের বেটা কে? নিক্সন চৌধুরীর বাড়ি মাদারীপুরে। বরং আমরা বলতে পারি যে, বিদেশি লোকের সঙ্গে আমরা উঠাবসা করবো না। আমাকে দেশে আসতে দিবে না। এই কথাটা বাংলাদেশে একমাত্র শেখ হাসিনা বলতে পারেন। আর কারও ক্ষমতা নেই আমাকে দেশে আসতে বাধা দেয়ার। আমি প্লেনে গিয়ে ঢাকা নামবো আবার পাল্টা প্লেনে আমাকে ফেরত পাঠাবে-এই ক্ষমতা শুধুমাত্র শেখ হাসিনার আছে। শেখ হাসিনা চাইলে আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে পারেন। অন্য কেউ পারে না। আমার সঙ্গে যদি শেখ হাসিনার কোনো গোলমাল থাকতো দেশের মানুষ টের পেতো। তার সঙ্গে আমার বিরোধ থাকলে তিনি তো আমার ওপর প্রতিশোধ নিতেন কিন্তু এমন কিছু তো ঘটেনি। তাহলে কীভাবে পারিবারিক দূরত্ব হলো?সূত্র: মানবজমিন
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:22 AM |
Sunrise | 6:42 AM |
Zuhr | 12:05 PM |
Asr | 3:07 PM |
Magrib | 5:28 PM |
Isha | 6:48 PM |