নাটোর: নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাংসদ শহিদুল ইসলামের বাড়িতে লালপুর উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামের পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে আট লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সাংসদের তিন ঘনিষ্ঠজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এরই মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি রাসেল ও কালামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গোপালপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুল ইসলাম নিজেকে সাংসদ শহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে রফিকুল ইসলামকে ফোন করে বাগাতিপাড়ায় সাংসদের বাড়িতে আসতে বলেন। তাঁর কথামতো তিনি বেলা দেড়টায় সাংসদের বাড়ির অতিথিশালায় পৌঁছান। সেখানে ১০ মিনিট কথা বলার পর সাংসদ ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। এরপর রফিকুল ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করলে রাসেল নামের এক যুবক বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেন। কালাম নামের অপর এক যুবক তাঁর পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করান। সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রাখার পর একটা সাদা কাগজে তাঁকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। রাসেলের কাছ থেকে তিনি আট লাখ টাকা ধার নিয়েছেন এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে তা পরিশোধ করবেন, এমন কিছু লেখা ছিল ওই কাগজে।
একপর্যায়ে রফিকুল ইসলাম সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে রোকনুল ইসলাম তাঁকে ফোন করে বলেন, ‘লেনদেনটা সেরে ফেলেন, কখন দেবেন?’
এ ঘটনার পর রাত ১০টার দিকে রফিকুল ইসলাম লালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করতে যান। দীর্ঘ সময় ধরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাটি শোনেন। তবে ঘটনাস্থল (সাংসদের বাড়ি) বাগাতিপাড়া থানা এলাকায় হওয়ায় তিনি অভিযোগ ফেরত দেন। পরে তিনি বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানান। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ভোর ৪টায় খাদ্য কর্মকর্তাকে বাড়ি থেকে বাগাতিপাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়।
মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খাদ্যগুদামে সরকারি গম কেনা নিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায় করার জন্যই আমাকে এভাবে নাজেহাল করা হয়েছে। আটক থাকা অবস্থায় আমার কাছ থেকে নগদ টাকা বা ব্যাংকের চেক আদায় করতে না পেরে তাঁরা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে। ঘটনাটি পুলিশ সুপার জানেন।’
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাংসদ শহীদুল ইসলাম বলেন, তাঁর চরিত্রে কালিমা লেপনের জন্য তাঁর বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য কর্মকর্তা আমার সাথে দেখা করে চলে গেছেন। পরে আমার বাড়িতে আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এটাও সেই ষড়যন্ত্রের একটা অংশ।’
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, এ ঘটনায় বাগাতিপাড়া থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করাও হয়েছে। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করা হবে।
এর আগেও সাংসদ শহিদুল ইসলামের কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে বাগাতিপাড়া থানার একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) লাঞ্ছিত করার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করেছিল। তখনো সাংসদ ওই ঘটনাটিকে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছিলেন।
চলতি বছরের মে মাসে নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলামের এক ভাগনে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে তাঁর কার্যালয়ে মারধর করে রক্তাক্ত করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা হলে পুলিশ সাংসদের ওই ভাগনেকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
Dhaka, Bangladesh শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:21 AM |
Sunrise | 6:42 AM |
Zuhr | 12:03 PM |
Asr | 3:05 PM |
Magrib | 5:25 PM |
Isha | 6:46 PM |