আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ২:০১
নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ভারতে কিডনি কেনা-বেচার সাথে জড়িত দালাল চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ রাজু হাওলাদার, শাহেদ উদ্দীন ও আতাহার হোসেন বাপ্পী।
গতকাল শনিবার ধানমন্ডির ২/এ রোডে অভিযান চালিয়ে রাজু হাওলাদার ও শাহেদকে গ্রেফতার করা হয়। আতাহার হোসেনকে বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ড. খ: মহিদ উদ্দিন বিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জানান, এই চক্রের খপ্পরে পড়ে কিডনি হারানো ভুক্তভোগী মোঃ রবিন খানের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসের কোনো এক দিন মিরপুর-১০ নং শাহ আলী মার্কেটের পিছনে রবিন তার এক বন্ধুর সাথে চা খেতে খেতে সংসারের অভাব অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিল। পাশে বসা মাছুম এ সব কথাবার্তা শুনে নিজ থেকেই রবিনকে বলে যে, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং চাকরি দিতে পারবে। রবিনের সাথে মাছুমের ১৫/২০ দিন মোবাইল ফোনে কথা হয়। মাছুম ভারত নিয়ে যাওয়া এবং সকল কার্যক্রম করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলে রবিন রাজি হয়। রবিনকে পাসপোর্ট তৈরি করতে সহায়তা করে মাছুম। সে ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে বলে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রবিনকে ধানমন্ডিতে ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে এই চক্রের আরেক সদস্য অভিযুক্ত মোঃ রাজু হাওলাদারের সাথে রবিনের পরিচয় হয়। অভিযুক্তরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ করে ভারতের ভিসা করানোর জন্য ভিকটিমের পাসপোর্ট রেখে দেয়।
তিনি জানান, এরপর ভিসার কার্যক্রম শেষ করে মাছুম ও মোঃ রাজু হাওলাদার রবিনের সাথে অপর দুই অভিযুক্ত শাহেদ উদ্দিন ও মোঃ আতাহার হোসেন বাপ্পীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা বলে, তারা ব্যবসায়িক পার্টনার। তাদের দেয়া বিমানের টিকেট নিয়ে রবিন ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের নয়া দিল্লিতে যায়। সেখানে এই চক্রের অপর দুই সদস্য অভিযুক্ত শাহীন ও সাগর ওরফে মোস্তফা বিমানবন্দর থেকে রবিনের পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। তারা রবিনকে ভারতের ফরিদাবাদ এলাকায় নিয়ে একটি বাসায় ২০/২৫ দিন আটকে রাখে। এর মধ্যে মাছুম বাংলাদেশ হতে সেখানে যায়। মাছুমকে পেয়ে ভিকটিম তার চাকরির কথা জিজ্ঞাসা করলে সে তালবাহানা করে। মাছুম রবিনকে তার অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে একটি কিডনি প্রদানের জন্য প্ররোচিত করে। পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশে ফিরে আসতে পারবে না বলেও ভয়ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা ভিকটিমকে নয়া দিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করায়। কিছুদিন পর ভারতের গুজরাটে নিয়ে মুক্তিনগর এলাকায় একটি বাসায় আটকে রাখে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, অভিযুক্তরা রবিনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে সুকৌশলে ২০২৪ সালের ৪ মার্চ গুজরাট কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে একটি কিডনি প্রদানে বাধ্য করে এবং কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। অপারেশন শেষে উক্ত হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পরে ছাড়পত্র প্রদান করে। এরপর চক্রটি ভারতের অজ্ঞাত স্থানে ১০/১১ দিন রবিনকে আটক রাখে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় রবিন জানতে পারে যে, অভিযুক্তরা দালাল চক্রের কাছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকায় কিডনি বিক্রি করেছে।
তিনি জানান, ভারতে থাকাকালীন অভিযুক্তরা ভিকটিমকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ভিকটিমকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে। বাংলাদেশে অবস্থানকৃত চক্রের অন্য সদস্যরা ভিকটিমের স্ত্রীর বিকাশ নাম্বারে বিভিন্ন সময় মোট তিন লক্ষ টাকা প্রদান করে, আরও তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করে। দেশে এসে ভিকটিম বুঝতে পারে যে, সে বড় দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে তার কিডনি হারিয়েছে।
তিনি আরো জানান, কিডনি হারিয়ে আজ সে একজন কর্মক্ষমতাহীন মানুষ। এই চক্রের মাধ্যমে আরেকজন প্রতারিত হওয়ার কথা রবিন তা জানতে পেরে সে ধানমন্ডি মডেল থানা পুলিশকে সবকিছু জানায়। পুলিশ তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, চক্রটি এ ধরনের বেশ কিছু কাজ করেছে এবং কিছু কাজ তাদের হাতে রয়েছে। আমাদের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। সঙ্গবদ্ধ চক্রটিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমাদের প্রান্তিক মানুষকে ফুসলিয়ে কোনভাবে যেন অঙ্গহানি করতে না পারে সেই বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।সূত্র: ডিএমপি
Dhaka, Bangladesh সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:58 AM |
Asr | 2:58 PM |
Magrib | 5:18 PM |
Isha | 6:39 PM |