আজ সোমবার | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৪:২৩
সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত তিন বছর ধরে মারামারি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এমনকি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিরোধী সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা পর্যন্ত হয়েছে। তবে গত দুইবার মামলা হলেও আটক হতে হয়নি কাউকে। এ বছরের নির্বাচনে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট বারের বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় আইনজীবী কাজলকে তার তোপখানা রোডের চেম্বার থেকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। এদিকে হট্টগোল ও মারধরের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আইনজীবীকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার। রিমান্ডপ্রাপ্ত পাঁচজন হলেন- সুপ্রিম কোর্টের সহকারী এটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ, আইনজীবী ওসমান চৌধুরী, হাসানুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম ও এনামুল হক। এদের মধ্যে ওসমান চৌধুরী ছাড়া সবাই সরকার সমর্থক স্বতন্ত্রপ্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথীর সমর্থক। এ ছাড়া মামলার প্রধান আসামি আইনজীবী নাহিদ সুলতানা (যুথী) ধানমণ্ডির বাসায় পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আখতারুজ্জামান গতকাল বিকালে গণমাধ্যমকে বলেন, নাহিদ সুলতানার বাসায় অভিযান চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ তাকে খুঁজছে।
অভিযান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত একজন ডিবি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার বিকালে শাহবাগ থানায় মামলা হওয়ার পর রাতে ও শনিবার নাহিদ সুলতানাকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসায় একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গত ৬ ও ৭ই মার্চ ছিল সুপ্রিম কোর্ট বারের ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচন। বৃহস্পতিবার ৫টা ১৫ মিনিটে অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে দুইদিনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও শুক্রবার ভোর রাতে বহিরাগত কর্তৃক আইনজীবীদের বেধড়ক পেটানোর ঘটনা ঘটে। এরই মাঝে নির্বাচন কমিশনার সম্পাদক পদে ভোট গণনা ছাড়াই নাহিদ সুলতানা যুথীকে জয়ী ঘোষণা করে ইসি ভোট গণনা কেন্দ্র ত্যাগ করেন। অবশ্য গতকাল গণনা ছাড়াই সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়টি প্রত্যাহার করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের। এক পত্রে তিনি বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার পূর্বেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মস্তান শ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়।
গতকাল আড়াইটা পর্যন্ত ব্যালট বক্স বার অডিটরিয়ামে পুলিশ পাহারায় ছিল। ফের বিকাল ২টা ৪০ মিনিটের দিকে ভোট গণনার কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় ভোট গণনার কার্যক্রমে অংশ নেয়নি বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেল কোনো প্রার্থী। তবে ৫টা ৪০ মিনিটে নীল প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ভোট গণনা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি ভোট গণনা কার্যক্রমের হলরুম পর্যবেক্ষণ করেন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের অন্যতম নেতা ড. মোহাম্মদ জগলুল কবির মানবজমিনকে বলেন, দুইদিন আইনজীবীগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোট প্রদান করেন। ইসি সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমও সম্পন করেন। রাত ১০টার পরে শুরু হয় ভোট সর্টিং কার্যক্রম। ভোট গণনার পরিবেশ না থাকায় তখন নির্বাচন কমিশন জুমার নামাজের পর ভোট গণনা শুরু করতে চান। এসময় একজন সম্পাদক প্রার্থী তা না মেনে তখনই ভোট গণনা করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ভোট গণনা কেন্দ্রে বহিরাগত প্রবেশ করে ৭/৮ জন আইনজীবীকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। সত্যিই এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। সুপ্রিম কোর্টের জন্য কলঙ্কজনকও। সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হককে এমন ঘটনা কেন ঘটলো জানতে চাইলে শুক্রবার বলেন, এটার আসলে কোনো বর্ণনাই দিতে পারবো না। নির্বাচন করেছি ভালো কথা, উনি (যুথী) উনার বাহিনী এনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। এ খবর আমাদের কাছে আসার পরে আমরা বলেছি গণনার পরিবেশ নাই, পরে গণনা হবে। এটা উনি সহ্য করতে পারছেন না, ভোর ৬টার দিকে উনি নিজেই অনেকের সঙ্গে মারামারি করেছেন, অনেক নারী আইনজীবীর গলা ধাক্কা দিয়েছেন, উনি দেখিয়ে দিচ্ছেন একে মারো, উনাকে মারো, তাকে ধরো। তখন কমিশন বললো এই পরিবেশে গণনা করা যাবে না। ৩টায় গণনা করতে চাই, তখন তিনি যুবলীগের পোলাপান ডাকছে ভেতরে ঢুকিয়ে মারামারি করছে, আর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানকে জিম্মি করে বলছে, তাকে ঘোষণা দেয়ার জন্য গণনা লাগবে না।
যে কারণে ভোট গণনা কেন্দ্রে মারামারি: প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবী মানবজমিনকে বলেন, গত দুইদিন আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্ত ও শান্তিপূর্ণ ভোট প্রদান করেছেন। বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে সুষ্ঠুভাবে ভোট কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরে শুরু হয় ভোট গণনার কার্যক্রম হিসেবে ভোট সর্টিং (গোছানো)। ১০০টি করে ব্যালট পেপার বান্ডিল করা হয়। এসব কার্যক্রম করতে গিয়ে ভোর সাড়ে ৪টা-৫টা বেজে যায়। তখন একটি বান্ডিলের ভোট গণনা শুরু হয়। এমন সময় শাহ মঞ্জুরুল হক ভোট গণনা বন্ধ রাখতে ইসিকে অনুরোধ জানান। কিন্তু সরকার সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী দ্রুত ভোট গণনা চালিয়ে যেতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি, তর্ক-বিতর্ক হয়। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। এরই মাঝে ভোট গণনা কেন্দ্রে যুথীর পক্ষে বহিরাগতরা প্রবেশ করে শাহ মঞ্জুরুল হক সমর্থক আইনজীবীদের উপরে হামলা করে। ৭-৮ জনকে বেধড়ক পিটুনি দেয়। একপর্যায়ে গণনা ছাড়াই নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করে বলেন, শুধুমাত্র নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন, তাই সম্পাদক পদে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো। ভোটের ফলাফলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল ৮টার পর পুলিশের পাহারায় আমি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাসায় চলে এসেছি। অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ভোটের পর আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলাম। এখনো আমরা ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। আমরা এখন ব্যালট বাক্সও খুঁজে পাচ্ছি না, নির্বাচন কমিশনকেও খুঁজে পাচ্ছি না।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |