আজ রবিবার | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৭:৩৯
কামরুল হাসান বাবলু : গত ১৬ জুলাই এবং ১৭ জুলাই দুই দিন উত্তরায় রাজপথে নেমে কোটা আন্দোলনের পক্ষে রাজপথ দখল করে আন্দোলন করছিলো ছাত্ররা । বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া বড় ধরণের কোনো ঘটনা ঘটনা ঘটেনাই ।কিন্তু আন্দোলন থেমে নাই । উত্তরার জসিমউদ্দিন রোডের মাথা থেকে শুরু করে আব্দুল্লাহ পুর পর্যন্ত গোটা সড়ক ছাত্র-জনতার দখলে চলে যায় । এই দুই দিন আওয়ামীলীগের কিছু নেতা কর্মীদের সাথে কিছুক্ষন ম্যারাথন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় । এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগ এর নেতাকর্মীরা পিছু হটে।বন্ধ হয়ে যায় সকল মার্কেট ।
১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার এবং ১৯ জুলাই শুক্রবার এর ঘটনা ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকবে : ১৮ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে ছাত্ররা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে রাস্তায় নামতে শুরু করে । জসিমউদ্দিন রোডের মাথায় এবং রাজলক্ষীতে একটি গ্ৰুপ, আজমপুর বাস স্ট্যান্ড এবং বিএনএস একটি গ্ৰুপ , হাউজ বিলডিং একটি এবং আব্দুল্লাহপুরে একটি গ্রুপ অবস্থান নেয় । অন্যদিকে , আরেকটি অংশ আজমপুর রেল লাইন থেকে আসা সড়কটি বন্ধ করে অবস্থান করে নবাব হাবীবুল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের সামনে । এই স্পট গুলোতে তারা অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে ।এক পর্যায়ে ছাত্রদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ছাত্রদের সাথে সাধারণ জনতার উপস্থিতিও দেখা যায় । দেখা যায় অনেক অভিবাবককেও ।
এই অবস্থায় আজমপুর মোড়ে ৪ নাম্বার সেক্টরে উত্তরা পূর্বথানায় অবস্থান করা বিভিন্ন বাহিনীর বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান ছিল সকাল থেকে । আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একপর্যায়ে থানা কম্পাউন্ড থেকে বের হয়ে মূল সড়কে অবস্থান নেয় । তখন বেলা ১১ টা । শুরু হয়ে যায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া । চতুর্মুখি আক্রমণ ঠেকাতে ব্যাপক হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে । একদিকে মুহু মুহু গুলি , টিয়ারসেল ,সাউন্ড গ্র্যান্ড অন্যদিকে ইট,পাথর ছুড়ে জবাব দিচ্ছে ছাত্র জনতা । ততক্ষনে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় । প্রায় দুপুর ১ টার দিকে ছাত্র জনতার আক্রমণে আইশৃঙ্খলা বাহিনী টিকতে না পেরে থানায় আশ্র নেয় । এ সুযোগে আন্দোলনকারীরা থানার মূল ফটকে চলে এসে অনবরত ঢিল ছুড়তে থাকে । এতে থানার দরজা,জানালারকাছ গুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যায় । ঠিক ওই সময় আন্দোলনকারীরা থানার সামনে পার্ক করা দুটো মালবাহী ট্রাক ,এবং ডিএমপির একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় । থানার আরেকটি ছোট্র বাহনে গেটের দক্ষিণে পার্ক করা তাতেও আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলন কারীরা । ততক্ষনে থানায় অবস্থান করা কোনো বাহিনীর সদস্যদের কাছে প্রতিরোধ করার মতো তেমন গুলি,সাউন্ডগ্রেনড ,টিয়ারসেল ছিলোনা। এরই মধ্যে আতঙ্ক দেখা যায় বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে । এর মধ্যে উর্ধতন কর্মকর্তারা বিজিবির সাহায্য কামনা করে । কিন্তু বিজিবিও আসতে দেরি হচ্ছে । উৎকণ্ঠা আরো বাড়তে থাকে ।
একপর্যায়ে বাহিনীর কয়েক সদস্য থানার ভিতর থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে । এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটে । এই সুযোগে বাহিনীর সকল সদস্য একযোগে ডাক-চিৎকার দিয়ে থানা থেকে বের হয়ে মূল সড়কে অবস্থান নেয়। বাহিনীর কিছু সদস্য রাস্তারপশ্চিম পারে অবস্থিতো একটি মার্কেটের সামনে থেকে চিলের মতো ছোপ দিয়ে কয়েকজন আন্দোলন কারীকে ধরে নিয়ে আসে । এই অবস্থায় দক্ষিণ দিক থেকে ব্যারিকেড ভেঙে বিজিবি এবং র্যাব এর কয়েকটি দলকে আসতে দেখা যায় । সেই সব যান থেকেও গুলি টিয়ারসেল ,সাউন্ড গ্র্যান্ড ছোড়া হয় । তখন থানার খবর আসে র্যাব এর একটি বাহনে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা ।
এই অবস্থা চলছে রাত পর্যন্ত । মূল সড়কের ল্যাম্প পোস্ট এর বাতি গুলো বন্ধ করে দেয়া হয় । তখন এক ভুতুড়ে পরিবেশ দেখা যায় পুর এলাকায়।
অন্যদিকে শত শত আন্দোলনকারী আহত হওয়ার খবর আসে দুপুর দুইটার পর । বেশ কয়েকজন এর নিয়ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় । এই খবরে মূল সড়ক ছেড়ে ৬ নং সেক্টরে অবস্থিত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহতদের এবং নিহতদের খোঁজ নিতে যাওয়া হয় । সেখানে গিয়ে তাৎক্ষণিক ৪ জনের মৃত দেহ দেখা যায় । এবং ইমার্জেন্সি বিভাগে গুরুতর আহত অনেকের চিকিৎসা চলছিল । এরই মাঝে আরো অনেক আহত ব্যক্তিদের আনা হয় চিকিৎসার জন্য । এই সময় হাসপাতাল জুড়ে এক ঋদয় বিদারক এর সৃষ্টি হয় । ততক্ষনে পুরো হাসপাতালটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ছাত্ররা । তার পর থেকে সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য সংগ্রহে কোনো সহযোগিতা করে নাই ছাত্ররা । হাসপাতালের ভিতরেও সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয় নাই । রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়েছে আহতদের প্রবেশের চিত্র । এরই ফাঁকে একজন নার্সের সাথে কৌশলে কথা বললে তিনি ৬/৭ জনের নিহত হওয়ার খবর দেন ।
অন্যদিকে কুয়েতমৈত্রী হাসপাতা ছাড়া অন্নান্ন হাসপাতালেও অনেক আহত নিহতদের নেয়া হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায় আন্দোলনকারি ছাত্রদের কাছ থেকে ।এর পরের দিন শুক্রবার এবং শনিবার কয়েকটি হাসপাতাল আহত নিহতদের সংবাদ প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করে পুলিশের সহযোগিতা চাইতে বলেন ।
এরই মধ্যে হাওয়া থেকে পাওয়া খবরে নানা ভাবে জানা যায় অনেক নিহত হয়েছেন , আহত কয়েক হাজার।কিন্তু একেক জন একেক তথ্য দেন । হাওয়া থেকে পাওয়া কোনো খবরকে বিশ্বাস করে না দৈনিক যায়যায়দিন । যতক্ষণ পর্যন্ত না সঠিক তথ্য পাওয়া যায় ।
১৯ জুলাই শুক্রবার কি হলো : ১৯ জুলাই শুক্রবার জুম্মার আগে থেকে উত্তরার প্রধান সড়ক সহ নানা জাগায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে আন্দোলন কারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামীলীগের সমর্থকদের সাথে । এই সংঘর্ষ গড়ায় কারফিউর আগে পর্যন্ত । তবে মহাসড়ক সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও লীগের সমর্থকরা । পরিস্থিতি সামাল দিতে গুলির ঘটনাও ঘটে কয়েকবার। এর মধ্যেই বিকাল চারটার দিকে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দলবল নিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে আসেন। তখন দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের দেখে আন্দোলনকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীরকে মারধর করেন। তাকে বাঁচাতে আসলে পিটুনির শিকার হন পিএস রানা মোল্লা। মারধরে তার মৃত্যু হয়। এই খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী এবং উত্তরার বিভিন্ন এলাকার জনগণের মাঝে । এই খবরে সাধারণ মানুষ বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো রাস্তায় নেমে পরে । তখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে উৎসুক জনতা সহ সাধারণ জনগণের সাথে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে ।
জাহাঙ্গীরের আহত এবং তাঁর পিএস রানা মোল্লার নিহতের খবরে উত্তরার অনেক সংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে কয়েক সাংবাদিক কাজ শুরু করলে আন্দোলনরত জনতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা একদল দুস্কৃতিকারীদের হাতে শারীরিক আঘাত প্রাপ্ত হন । সেই সাথে অনেকের কাছে থাকে ক্যামেরা , ফোন এবং অর্থ ছিনিয়ে নেয় এসব দুস্কৃতিকারীরা । এই ঘটনা থেকে বাদ যাননি দৈনিক যায়যায়দিন এর বিমানবন্দর ও দক্ষিণখান থানার এই প্রতিনিধি কামরুল হাসান বাবলুও । তিনি সাংবাদিক পরিচয়ে তথ্য সংগ্রহে দক্ষিণখান থানার আজমপুর রেলগেটে উপস্থিত হলে আচানক একদল দুস্কৃতিকারীদের রোষানলে পড়েন । এই সব দুস্কৃতিকারীরা সাংবাদিক পাইছি বলে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে নানা ভাবে আঘাত করতে থাকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে। তিনি এক পযায়ে লুটিয়ে পড়লে কয়েকজন সুরিদয় ব্যক্তি মানব ঢাল তৈরী করে একটি ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান । এই সময় দুস্কৃতিকারীরা এই প্রতিবেদকের হাতে থাকে একটি মূল্যবান ল্যান্স সহ একটি ক্যামেরা ও কাছে থাকে প্রায় ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন । বর্তমানে এই প্রতিনিধি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ।
Dhaka, Bangladesh রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:16 AM |
Sunrise | 6:37 AM |
Zuhr | 11:57 AM |
Asr | 2:57 PM |
Magrib | 5:17 PM |
Isha | 6:38 PM |