আজ বুধবার | ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ |২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি | দুপুর ১:৩৫
মনির হোসেন জীবন- ৩৪ বছর আগে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানা লুট, এক পুলিশ কনস্টেবল হাবিবুর রহমানকে গুলি করে হত্যা ও ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত ৩০ বছর যাবত পলাতক আসামি ‘চরমপন্থি’ সাইফুল ইসলাম ওরফে মানিক (৫৬)কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতারকৃত সাইফুল পাবনা জেলার চাটমোহর থানার খোতবাড়ি গ্রামের খোয়াজ উদ্দিনের পুত্র।
শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ সকালে র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক পলাতক আসামি ‘চরমপন্থি’ সাইফুলকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ১৯৮৭ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) হাটের দিন সকাল ১১ টার দিকে একদল চরমপন্থী ছদ্মবেশে লুঙ্গি, গামছা পরিহিত অবস্থায় হাতে পোটলা নিয়ে হাটের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পোটলার মধ্যে তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র লুকায়িত ছিল। তাদের মধ্যে কিছু লোক অস্ত্র প্রদর্শন করে টেলিফোন অফিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেন্ট্রাল কমান্ড বিকল করে দেয় এবং কয়েকজন থানায় জিডি করার উদ্দেশ্যে থানায় প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে থানা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এসময়ে থানায় প্রহরারত কনস্টেবল হাবিবুর রহমান বাধা দিলে চরমপন্থীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে থানার অস্ত্রাগার লুট করে ২ টি এসএমজি, ৪ টি এসএলআর, ১৮ টি ৩.৩ রাইফেল ও গোলাবারুদ লুট করে থানার লকআপে বন্দি চরমপন্থী আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারপর আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য তারা একযোগে টেলিফোন অফিস ও থানা কম্পাউন্ডে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায়। তারপর তারা লুন্ঠিত মালামাল নিয়ে তাঁচকৈর হয়ে পূর্বদিকে গারিসাপাড়া হয়ে ধামাইর মাঠের দিকে চলে যায়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানায় বিষ্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-০৯, তারিখঃ ২৪/০২/১৯৮৭ । এ মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০ জন আসামি গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ৪৯ জনকে আসামি করে গুরুদাসপুর থানার চার্জশীট নম্বর-৫৯, বিষ্ফোরক দ্রব্য আইন ১৯০৮ বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৭ সালে এ মামলার রায় ঘোষনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,র্৩৪ বছর আগে থানা লুট, পুলিশ কনস্টেবল হত্যা যাব-৩ এর একটি দল গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে একটি মামলার একজন যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নারায়ণগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। তারপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং গোয়েন্দা নজরদারীর মাধমে শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকা থেকে ছাত্তার নামে ছদ্মবেশে আত্মগোপন করা অবস্থায় সাইফুল ইসলাম ওরফে মানিক (৫৬) গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে চরমপন্থী নেতা তারেকের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি লাল পতাকা ওরফে সর্বহারা দলে যোগ দেয় সাইফুল ইসলাম ওরফে মানিক। চরমপন্থী নেতা তারেক প্রতি সপ্তাহে চাটমোহর এলাকায় উঠতি বয়সের যুবকদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে উঠান বৈঠক করত। ওই বৈঠকে সে আকর্ষনীয় কথাবার্তা বলত। সে বলত, তার দলে যোগ দিলে কোন অভাব অনটন থাকবে না। তারা সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে। কেউ তাদের কাজে বাধা দিলে তাদেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিবে। যদি সরকার বা সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তবে তারা পুলিশ হত্যা করে থানা ফাঁড়ি লুট করবে। তাদের এরূপ আকর্ষনীয় কথায় মুগ্ধ হয়ে সে সক্রিয়ভাবে চরমপন্থীদের হত্যা, লুটপাট, ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণ করতে থাকে। চরমপন্থী নেতা তারেক ওই ঘটনার দুই মাস পূর্ব থেকে গুরুদাসপুর থানা লুট করার পরিকল্পনা করে। এজন্য সে ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ি, কুষ্টিয়া, পাবনা, টাঙ্গাইল এলাকা থেকে চরমপন্থী দলের সদস্যদের আহবান জানিয়ে একত্রিত করে। ঘটনার দিন তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৬০ জন নাটোর, ধামাইর মাঠে এসে জড়ো হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছদ্মবেশে লুঙ্গি, গামছা পরিহিত অবস্থায় পোটলার মধ্যে অস্ত্র লুকিয়ে গুরুদাসপুর থানা ও টেলিফোন অফিসের আশপাশ এলাকা এবং হাট এলাকায় অবস্থান নেয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে কয়েকজন সার্বক্ষনিক টেলিফোন অফিসের কর্মী এবং গুরুদাসপুর থানার ফোর্সের গতিবিধির উপর নজরদারি করছিল। তাদের সবুজ সংকেত পাওয়া মাত্রই সুলতানের নেতৃত্বে ৫ জন টেলিফোন অফিসে প্রবেশ করে সেন্ট্রাল কমান্ড বিকল করে দেয়। অন্যদিকে তারেকের নেতৃত্বে সে সহ প্রথমে ৪ জন জিডি করার জন্য থানায় প্রবেশ করে এবং মজিদের নেতৃত্বে ১০ জন থানা ব্যারাকে প্রবেশ করে সকল ফোর্সকে কক্ষের মধ্যে বন্দি করে রাখে। এসময় ডিউটিরত কনস্টেবল হাবিবুর রহমান প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইলে তারেক গুলি করে কনস্টেবল হাবিবুরকে হত্যা করে। গুলির শব্দের সাথে সাথে থানার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন তারেক অস্ত্রাগারের তালা ভেঙ্গে অস্ত্রাগার থেকে সকল অস্ত্র, গোলাবারুদ লুটপাট করে এবং থানার লকআপে বন্দি চরমপন্থী দলের আটককৃত একজন সদস্য ইয়াকুবকে তালা ভেঙ্গে মুক্ত করে। এরপর তারা বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে থানা কম্পাউন্ড এবং টেলিফোন অফিস ত্যাগ করে লুন্ঠনকৃত অস্ত্র নিয়ে হাটের মধ্যে দিয়ে দৌঁড়ে চলে যায়।
র্যাব জানান, ১২ নরহত্যা মামলার পর তারেকসহ চরমপন্থী দলের সদস্যরা চাটমোহর থেকে আত্মগোপন করে সিরাজগঞ্জে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে তারা তাদের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করত। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে গেলে সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে সে তারেকের সাথে যোগাযোগ করে চরমপন্থী দলের সাথে পুনরায় হত্যা, লুটপাট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন করে ত্রাস সৃষ্টি, অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে জমি দখল, পারিবারিক বিরোধ মিমাংসা ইত্যাদি কাজে লিপ্ত ছিল। এসময় সে তারেকের সাথে নৌকায় বিলের মধ্যে অবস্থান করত। দলের কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় সশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় নৌকার মধ্যেই জীবন যাপন করত।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরও জানান, এরপর রাজধানীতে সে কিছুদিন বাসের হেলপারি করে। ট্রাকে মালামাল লোড আনলোডের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। তারপর নারায়ণগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাসায় সে আশ্রয় নিয়ে একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকুরী দেয় এবং সকলের কাছে তাকে ছাত্তার নামে পরিচয় করিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে সে এনআইডি পরিবর্তন করে রূপগঞ্জ এলাকার ভোটার হিসেবে নিজেকে ছাত্তার নামে প্রতিষ্ঠিত করে নিজের স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে।
আজ শনিবার দুপুরে র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) ফারজানা হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত চরমপন্থী দলের নেতা সাইফুল ইসলাম ওরফে মানিক (আসামী)কে পাবনার আদালতে হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান তিনি।
Dhaka, Bangladesh বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | |
Salat | Time |
Fajr | 5:17 AM |
Sunrise | 6:38 AM |
Zuhr | 11:59 AM |
Asr | 2:59 PM |
Magrib | 5:19 PM |
Isha | 6:40 PM |